• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

চট্টগ্রামে লক্ষাধিক অবৈধ ফার্মেসি, মিলছে সরকারি ও বিদেশী অনুমোদনহীন ঔষধ


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১, ০২:৫৩ পিএম
চট্টগ্রামে লক্ষাধিক অবৈধ ফার্মেসি, মিলছে সরকারি ও বিদেশী অনুমোদনহীন ঔষধ

চট্টগ্রাম : করোনাসহ নানা সময়ে চট্টগ্রামে বেড়েছে নিবন্ধনহীন অবৈধ ফার্মেসির সংখ্যা। গ্রামে বা নগরে করোনার থাবায় মানুষের যখন কাহিল অবস্থা, তখনই সুযোগ বুঝে অলিগলিতে গজিয়ে উঠেছে নতুন নতুন ফার্মেসি। চট্টগ্রামের ড্রাগ সুপার কার্যালয়ের হিসাবে গত দুই বছরে গজিয়ে ওঠা এমন অবৈধ ফার্মেসির সংখ্যা ২২১টি হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। অন্যদিকে সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে অনুমোদনহীন ফার্মেসির সংখ্যা লক্ষাধিক।

এদিকে গত দুই বছরে করোনা আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগী ঘরে বসে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের ভরসা ছিল নিবন্ধনহীন এসব অবৈধ ফার্মেসি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ওষুধ সহজেই মেলে এসব ফার্মেসি থেকে। করোনাকালে ওষুধের ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠার সুযোগে মোড়ে মোড়ে অলিগলিতে গড়ে উঠেছে নিত্য নতুন ফার্মেসি। দেখা গেছে, আগে যিনি অন্য কোনো পেশায় ছিলেন, করোনার সময়ে সেই লোকটিই ফার্মেসি খুলে রাতারাতি বনে গেলেন ফার্মাসিস্ট।

চট্টগ্রামের ড্রাগ সুপার কার্যালয়ের হিসাবে নিবন্ধনহীন এমন ফার্মেসির সংখ্যা ২২১টি বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। তবে সংখ্যা যাই হোক, অনুমোদনহীন ফার্মেসি বন্ধ কিংবা ফার্মেসি থেকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কেনা বন্ধে চট্টগ্রামের ড্রাগ সুপার কার্যালয় কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে— এমন উদাহরণ গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। অবশ্য দেখা না যাওয়ারই কথা, কারণ চট্টগ্রামের ড্রাগ সুপার কার্যালয়ের ড্রাগ সুপারের পদটি শূন্য গত তিন বছর ধরে। পদটি শূন্য থাকায় সহকারী পরিচালক পদবির দুজন মাসে হাতেগোনা কয়েকদিন গাড়ি করে ঘুরেফিরেই দায় সারছেন।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় অনুমোদিত ফার্মেসি আছে ৯ হাজার ৫০০টি। তবে এর প্রায় অর্ধেক ফার্মেসিই বর্তমানে বন্ধ। এর বিপরীতে ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রামে অনুমোদনহীন ফার্মেসির সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক কে এম মুহসিনিন মাহবুব তিন বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। বর্তমানে ড্রাগ সুপার কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শফিকুল ইসলাম ও সালমা সিদ্দিকা। চট্টগ্রাম নগরীর ১৬টি থানা ও ১৪টি উপজেলায় ফার্মেসিগুলো তদারকির দায়িত্ব পালন করেন এই দুজন।

জানা গেছে, ফার্মেসি খুলতে কিছু নিয়ম রয়েছে। পাইকারি-খুচরা দুই ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। সেটা ড্রাগ লাইসেন্স নামেই বেশি পরিচিত। খুচরা ওষুধ বিক্রির জন্য দুই ক্যাটাগরিতে এ লাইসেন্স দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর একটি মডেল ফার্মেসির, আরেকটি মেডিসিন শপের। মডেল ফার্মেসির জন্য প্রয়োজন হয় ৩০০ ফুটের একটি দোকান। পৌরসভার ভেতরে হলে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং বাইরে হলে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সঙ্গে দিতে হয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এর বাইরে আরও কিছু নিয়ম রয়েছে। ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি, মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মালিকের ব্যাংক সচ্ছলতার সনদ, ফার্মেসিতে নিয়োজিত গ্র্যাজুয়েট বা এ-গ্রেড ফার্মাসিস্টের রেজিস্ট্রেশন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, ফার্মাসিস্টের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ফার্মাসিস্টের অঙ্গীকারনামা, দোকান ভাড়ার চুক্তিনামা ইত্যাদি।

তিনটি ক্যাটাগরিতে ড্রাগ লাইসেন্সের রেজিস্ট্রেশন হয়। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা ‘এ’ ক্যাটাগরির, ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা ‘বি’ ক্যাটাগরির ও শর্ট কোর্স সম্পন্নকারীরা ‘সি’ ক্যাটাগরির লাইসেন্স পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট হিসেবে ড্রাগ লাইসেন্স অর্জন করতে হলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তত্ত্বাবধানে দুই মাসের ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের সব জেলায় কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির আওতায় দুই মাসের শর্ট কোর্সটি করানো হয়। এ সমিতির প্রধান কার্যালয় ঢাকার মিটফোর্ডে। এসএসসি পাস করে যে কেউ এ কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।

জানা গেছে, একটি খুচরা বা পাইকারি দোকানের ড্রাগ লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রতি দুই বছর অন্তর নবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না হলে বিলম্ব ফি দিয়ে নবায়নের সুযোগ আছে। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও লাইসেন্স নবায়ন করছেন না অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী।

এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, করোনাকালে গজিয়ে ওঠা ফার্মেসিগুলো যারা খুলেছেন— প্রশিক্ষণ তো নয়ই, এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতার স্তরটাও তাদের বেশিরভাগই পেরিয়ে আসেননি।

অন্যদিকে সরকারি অনুমোদনহীন বিদেশী ঔষধ প্রায় সব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। তার সাথে রয়েছে সরকারি বিনামূল্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত ঔষধ এসব অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন সব প্রকার দোকানে মিলছে অহরহ।

চট্টগ্রাম ড্রাগ সুপার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের তদারকি যথাযথভাবেই করছি। করোনাকালীন ও অন্য সময়ে যেসব নিবন্ধনহীন ফার্মেসি গড়ে উঠেছে তার তালিকা করা হচ্ছে। যাচাইবাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!