• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

শখের মালবেরি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন মোস্তফা


গাজীপুর প্রতিনিধি জুলাই ১০, ২০২৩, ১২:৩৯ পিএম
শখের মালবেরি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন মোস্তফা

গাজীপুর: গাজীপুরে ইতিমধ্যে অনেক তরুণ উদীয়মান উদ্যোক্তারা বিভিন্ন প্রকার কৃষি ভিত্তিক বাগান গড়ে তুলে সফলতা অর্জন করছেন এবং সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তবে এবার এই সফলতার খাতায় আরেক নতুন নাম লেখালেন মালবেরি চাষের উদ্যাগক্তা গাজীপুরের কালীগঞ্জের জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের চল্লিশোর্ধ মো:মোস্তফা মোল্লা।

তিনি মূলত পেশাদার কৃষক এবং কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট করেই চলে তার সংসার জীবন। হঠাৎ একদিন তিনি ভাবলেন কৃষি ভিত্তিক নতুন কোন ফল নিয়ে পরীক্ষা মূলক কাজ করবেন। এর পর তার মাথায় চলে আসে মালবেরি ( তুঁত) ফলের কথা।

পরে শখের বসে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান থেকে সংগ্রহ করা তিনটি জাতরের মোট ২৫টি চারা দিয়ে শুরু করেন মালবেরি বাগান। 

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার এই প্রতিটি গাছের প্রতি পরিচর্যা করেনও অনেক যত্ন করে। পরিশ্রম এবং সাধনা এক হয়ে কাজ করলে যে কোন বিষয়েই সফলতা ধরা দিবে। তার প্রমাণও অর্জন করছেন তিনি। আজ তার মালবেরি বাগান দৃশ্যমান হয়েছে। পুরো বাগানের প্রতিটি গাছে -গাছ থোকায়থোকায় ঝুলছে মালবেরি ফল। কোথাও আবার পাঁকা টসটসে মালবেরি ঝুলছে। 

মোস্তফা মোল্লার বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, তার বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মালবেরি। এর কিছু সবুজ, কিছু লাল, পেকে কালো হয়ে গেছে কিছু। পাতার চেয়ে ফলই যেন বেশি।

জানা যায়, মালবেরি বাংলাদেশে তুঁত নামেও স্থানীয় পর্যায়ে জনসাধারণের কাছে পরিচিতি রয়েছে। তবে নাম হাই কোক এটি একটি সুন্দর ফল এবং উৎপাদন মূখী ফল। এ ফলের গাছ গাছগুলোর পাতা ডিম্বাকার, খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সূচালো। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা ছোট ফল। এই ফল যখন কাঁচা অবস্থায় গাছে থাকে ফলটি বর্ণ ধারণ করে সবুজ। পরে যখন এটি পাঁকতে শুরু করে ধীরে ধীরে লাল হয়। মোস্তফার এই বাগানে এর ব্যতিক্রম নয় হুবুহু এর রকম পরিবেশ দৃশ্যমান হয়েছে। 

উচ্চ মূল্যের ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এ ফলের চাষ প্রথম দিকে শখের বসে করলেও মোস্তফা এখন পরিকল্পনা করছেন কি ভাবে এটাকে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা যায়। 

উদ্যোক্তা মোস্তফা মোল্লা জানান, মালবেরি ফলটি অতন্ত্য রসালো ও টক-মিষ্টি স্বাদের হয়। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। তৈরি করা যায় চারাও। বাগান করে চাষ করার পাশাপাশি এটি খুব সহজেই ছাদে চাষ করা সম্ভব মালবেরি। তিনি আরও বলেন, প্রথমে শখের বসে করলেও এখন আমি সফলতা অর্জন করে বুঝতে পারছি এটি নিসন্দেহে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করার সম্ভাবনা দেখছি। তিনি বলেন, এই ফল চাষ করে নতুন একটি কৃষি পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই ফল চাষের তেমন কোন ঝামেলা কৃষকদের পোহাতে হবেনা। কেননা মালবেরির রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশক তেমন লাগে না। উৎপাদন খরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারাবছরই এ ফল পাওয়া যায়। এছাড়া এই ফলের বাজারে মোটামুটি ভাল চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে দেশের জেলা শহরের সুপার শপগুলোতে এই ফল গুলো ভাল চলে। বর্তমান বাজার ধরে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয়। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মালবেরি অর্থাৎ তুঁত ফল স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। মালবেরি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পাকা ফলের টক-মিষ্টি রস পিত্তনাশক, দাহনাশক, কফনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে কাজ করে। তুঁত গাছের ছাল ও শিকড়ের রস কৃমিনাশক। ঠান্ডা লেগে জ্বর কিংবা কাশি হলে তুঁত গাছের ফল অত্যন্ত উপকারী।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম জানিয়েছেন, কৃষক মোস্তফা শখের বসে প্রথম বারেই মালবেরি চাষ করে ভাল সফলতা অর্জন করেছেন। এটা নিসন্দেহে কৃষি অর্থনীতি ও কৃষকদের জন্য ভাল খবর। 

তিনি বলেন, তিন জাতের ২৫টি মালবেরির চারা রোপণ করেন তিনি। বর্তমানে গাছ থেকে ফলগুলো সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। ২৫টি গাছের প্রতিটিতে ৮ থেকে ১০ কেজি ফল পাওয়া যাবে বলে মোস্তফা জানিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, মোস্তফা আমাদেরকে জানিয়েছেন এখানে বাণিজ্যিক ভাবে মালবেরি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এ অঞ্চলে কি পরিমাণ জমিতে মালবেরি চাষ করা সম্ভব এটা নিয়ে গবেষণা করছে। 

সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই

Wordbridge School
Link copied!