• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

৫০ বছর বয়সে মাস্টার্স পাশ করলেন আব্বাস আলী


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি আগস্ট ২, ২০২৩, ১১:০২ এএম
৫০ বছর বয়সে মাস্টার্স পাশ করলেন আব্বাস আলী

ঠাকুরগাঁও: ৫০ বছর বয়সে ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করেছেন আব্বাস আলী। পড়াশোনা বন্ধের প্রায় ২০ বছর পর পুনরায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে ৩ বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স, ১ বছরে মেয়াদী প্রিলিমিনারী কোর্স সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে ২.৩১ সিজিপিএ  পেয়ে মাস্টার্স পাশ করেছেন তিনি। এই বয়সে তার এমন সাফল্য এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

আব্বাস আলী ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ঠুমনিয়া গ্রামের দবিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি লোহাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ২৪ বছর ধরে। গত ২৭ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ ফলাফল প্রকাশ করে। এই বয়সে তার এমন সাফল্য এলাকায় সাড়া ফেলার পাশাপাশি অনেকেই তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

আব্বাস আলীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে তিনি লাহিড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৪ সালে দিনাজপুর আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯৭ সালে রুহিয়া ডিগ্রী কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করেন। এরপরে অভাবের কারণে মাস্টার্স পাশ করা হয়নি তার। জীবিকার তাগিদে লোহাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।

আব্বাস আলী জানান, শিক্ষকতা করার সময় আর্থিক সংকটের কারণে মাস্টার্স কোর্স শেষ করতে না পারার দু:খটা সব সময় মনে কষ্ট দিতো। ২০১৮ সালে স্ত্রীর নিকট ১২ হাজার টাকা নিয়ে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৩ বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপরে প্রিলিমিনারী মাস্টার্স কোর্স ১ বছর শেষ করার পর দিনাজপুর সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয় নিয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন।  সেখানে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ২.৩১ সিজিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এই বয়সে পড়ালেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আব্বাস আলী জানান, ১৯৯৭ সালের সিলেবাস ও বর্তমান সময়ে সিলেবাসে অনেক পার্থক্য। প্রতিদিনি ৫-৬ ঘন্টা পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। পরীক্ষার ফলাফল না আসা পর্যন্ত এক ধরণের দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। ফলাফল বের হওয়ার তিনি অনেক খুশি। তার সবশেষ ইচ্ছে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের স্বপ্ন তিনি পুরণ করতে পেরেছেন।

আব্বাস আলী স্ত্রী নাজমা শিরিন বলেন, ইচ্ছে থাকলেও অভাবের কারণে মাস্টার্স পাশ করতে পারেননি। আমার নিকট প্রায় এই বিষয়টা শেয়ার করতো। পরে আমি টাকা জোগাড় করে দিয়ে ভর্তি হতে সাহস দেয়। ফলাফল প্রকাশের পর এখন পরিবার, প্রতিবেশী সবার মুখে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন।

আব্বাস আলীর বড় ছেলে সাকিব এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবেন। সাকিব জানায়, বাড়ীতে পড়া ফাকি দিয়ে খেলা করতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে গত ৫ বছর ধরে। বাবা আমাদের আগে পড়তে বসে। আমার আর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাবার পরিশ্রম সফল। তার ফলাফলে আমরা সবাই আনন্দিত।

লোহাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, আব্বাস আলী পরিশ্রমী একজন শিক্ষক। এই বয়সে তার এমন অর্জন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে বলে তিনি মনে করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার বলেন, মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভব সম্ভব করা যায়। আব্বাস আলীর ইচ্ছাশক্তির কাছে বয়স হার মেনেছে।

সোনালীনিউজ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!