• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্মুক্ত ফারাক্কার গেট : প্লাবিত বাংলাদেশের ৩০ গ্রাম


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ২৬, ২০১৬, ০৬:০৬ পিএম
উন্মুক্ত ফারাক্কার গেট : প্লাবিত বাংলাদেশের ৩০ গ্রাম

দৌলতপুর উপজেলা চিলমারি ও রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। একই সঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভারত ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

ভারত সরকার বিহার রাজ্যের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে ফারাক্কার ১১৭টি গেটের মধ্যে ৯৯টি গেট খুলে দিয়েছে। এতে উজান থেকে নেমে আসা পানি পদ্মা ও পাগলা নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি তিন ঘন্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে।

এভাবে পানি বাড়ার গতি অব্যাহত থাকলে শনিবারের মধ্যে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীতে পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে শুক্রবার দুপুর ১২ টায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ০৬ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা থেকে মাত্র পয়েন্ট ১৯ সেন্টিমিটার দূরে।

গত ১৮ আগস্ট এ পানির মাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। প্রতি তিন ঘন্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হক জানান, বিহারে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ভারত তাদের ফারাক্কা বাধের দরজা খুলে দিয়েছে। তাতে পদ্মায় পানি বেড়ে যাচ্ছে। যে গতিতে পানি বাড়ছে তাতে শনিবারের মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। আমাদের টিমের সদস্যরা সর্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।

এদিকে পদ্মা ও গড়াই নদীতে অব্যাহতভাবে পানি বাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তারা সজাগ রয়েছে। নদী ও নদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও বাঁধে সব সময় নজর রাখা হচ্ছে।

এদিকে হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় জেলার দৌলতপুর উপজেলা চিলমারি ও রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিটি ঘরেই পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের মধ্যে মজুদ রাখা পাট, ধান মরিচসহ সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এসব এলাকায় তীব্র খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

বাজুমারা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, নলকুপ ডুবে যাওয়ায় পান করার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নৌকায় করে গ্রামবাসীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় চিলমারির ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। তিনি দাবি করেন সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় এতো ক্ষতি আর কখনও হয়নি।

রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন জানান, রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১২ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বেড়ে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে নদীতীরবর্তী এলাকা। যে হারে পানি বাড়ছে সেই হারে বাড়তে থাকলে খুব দ্রুতই পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।

রাজশাহীর পাউবো পানিবিজ্ঞান বিভাগের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। ফারাক্কার স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার পর গত তিনদিনে পানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ সেন্টিমিটারে। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার। তবে এই পানিপ্রবাহ এখনো বিপৎসীমার নিচেই রয়েছে।

অন্যদিকে পাউবোর কুষ্টিয়া কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভেড়ামারা উপজেলার ঢাকাপাড়া ও সোলেমান নগরের বেশির ভাগ অংশই নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে বাঘা পর্যন্ত পদ্মার উভয় তীরে এবং নদীর ভেতরের চরাঞ্চলের বসতবাড়ির মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর লালন শাহ পার্ক থেকে তালাইমারী শহীদ মিনার পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের খুব কাছে পানি থৈ থৈ করছে। এরই মধ্যে শহররক্ষা বাঁধের ভেতর গড়ে ওঠা বসতিতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চর খিদিরপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ গবাদি পশুর খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

অন্যদিকে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের মধ্যচরে নতুনভাবে বসতি স্থাপন করা ২৫০টি বাড়িতে হাঁটুপানি উঠে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মধ্যচরের ওই পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে অত্যন্ত দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা গবাদি পশু নিয়ে পড়েছে বেশি বিপদে। দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট।

এ ছাড়া হরিপুর ইউনিয়নের নবগঙ্গা এলাকায় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!