• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে জুট করপোরেশনের জমি


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম
নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে জুট করপোরেশনের জমি

ঠাকুরগাঁও : কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও সব ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য বেশ নামকরা। একসময় এখানে রেকর্ড পরিমান পাট উৎপাদন হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়া সহ নানা সমস্যায় সোনালী এ ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারায় চাষীরা। বিগত কয়েক বছরে এ জেলার চাষীরা আবারো আগ্রহ ফিরে পেয়েছে পাট চাষ ও উৎপাদনে। তবে সরকারী পাট ক্রয় কেন্দ্রের কিছু সমস্যার কারনে আবারো হতাশার মধ্যে পরতে যাচ্ছে জেলার পাটচাষীরা। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জে জুট ট্রেডিং করপোরেশনের (জেটিসি) অধীনে 'পাট ক্রয় কেন্দ্রের' ৫৪ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় এবং তা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এমন তথ্য জানার পরই স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা।

বর্তমানে ওই জমির আনুমানিক বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা হলেও তা হন্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে মাত্র ৩১ লাখ ৭৬ হাজার টাকায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। 

বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের স্থানীয় পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত জুট ট্রেডিং করপোরেশন ১৯৭৪ সালের ২৯ জুন ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জে ৫৪ শতক জমি ক্রয় করে এবং পরবর্তীতে ওই জমি 'পাট ক্রয় কেন্দ্র' হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।

সারাদেশে জেটিসি’র অধীনে পরিচালিত সব পাট ক্রয়কেন্দ্র ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের কাছে হন্তান্তর করা হয়। ২০০০ সালের দিকে এসব ক্রয় কেন্দ্রগুলো বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। বিগত সময়ে দেশের পাটশিল্পে মন্দা দেখা দিলে ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে। অব্যবহৃত এসব স্থাপনা ও জমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে কেন্দ্রগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শিবগঞ্জে টেন্ডার শেষে মন্ত্রণালয় ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর ৩১ দশমিক ৭৬ লাখ টাকা মূল্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজিউল ইসলামের কাছে ওই ৫৪ শতক সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ বিষয়ে ইচ্ছাপত্রও ইস্যু করে।

এতে দেখা যায়, বিক্রির শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে চুক্তির পুরো অর্থ ইচ্ছাপত্র ইস্যুর তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আলাদা ভাবে মোট ৩ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু রাজিউল মোট অংকের ২৫ ভাগ অর্থাৎ ৮ লাখ টাকা ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর দেওয়ার পর অবশিষ্ট টাকা আর পরিশোধ করেননি। এতে টেন্ডারের শর্ত স্পষ্টভাবে ভঙ্গ হয়।

এদিকে তিনি একটি কিস্তি পরিশোধের প্রায় ৪ মাস পর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল পাট কেন্দ্রের ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়।

দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ২৬ জুলাই ইচ্ছাপত্রে উল্লেখিত অর্থের অবশিষ্ট ৭৫ ভাগ টাকা পরিশোধের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন রাজিউর।

বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ঠাকুরগাঁওয়ের পাট ক্রয়কেন্দ্রটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। 'পরে ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গেজেটে প্রকাশিত হয় এবং আরও পরে অর্পিত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত হয় বলেও জানান তিনি।

এরপর আপিল করা হলে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালতে তা খারিজ করা হলে ওই সম্পত্তির মালিকানা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুনর্বহাল থাকে।

রাজিউল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য আবেদনের তথ্য স্বীকার করে বলেন, অর্পিত সম্পত্তির মামলার কারণে আগে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করা হয়নি। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী টাকা পরিশোধের যে সময়সীমা ছিল, তার পরেই ওই জমিকে অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। তবে কেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করেননি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রাজিউল ইসলাম।

এদিকে পাট চাষে পুনরায় গতি ফিরে আসা এবং দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলায় বেশ কয়েকটি পাটকল বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়ে লাভজনক অবস্থানে আসায় এ অঞ্চলের চাষি ও পাট ব্যবসায়ীরা পাট ক্রয়কেন্দ্রের জমিটি নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় ও হস্তান্তরের বিরোধিতা করছেন। 

স্থানীয় পাট ব্যবসায়ী বাবলুর রহমান বলেন, 'কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি এই মূল্যবান সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তর না করে, পুনরায় কেন্দ্রটি চালু করে পাট ক্রয়ের উদ্যোগ নিলে একদিকে যেমন পাট চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন, অন্যদিকে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও আসবে গতিশীলতা।'

ঠাকুরগাঁও পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার মালাকার বলেন, বিগত সময়ে এ এলাকার কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারালেও বর্তমানে চাহিদা ও ভালো বাজার মূল্যের কারণে আবারও পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। গত কয়েক বছর ধরে জেলায় গড়ে ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পাট চাষ হচ্ছে। পাট ক্রয়কেন্দ্রটি পুনরায় চালু হলে স্থানীয় কৃষকরা একদিকে যেমন ভালো বাজার মূল্য পাবে অন্যদিকে সময়মতো পাট বিক্রির নিশ্চয়তাও পাবে তারা, যা এ অঞ্চলের পাট চাষের সোনালী অতীততে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সোনালীনিউজ/এসএম/এসআই

Wordbridge School
Link copied!