• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি শিল্প


কুমিল্লা প্রতিনিধি মার্চ ২৯, ২০২৪, ১১:৪৮ পিএম
হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি শিল্প

কুমিল্লা: আধুনিকতা ও নকলের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার খদ্দর বা খাদি কাপড়। ঈদ সামনে থাকলেও তাঁতী বাড়িতে নেই সেই জৌলস। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধের প্রায় দ্বার প্রান্তে এখন। অথচ একটা সময় ছিল জেলার চান্দিনা,দেবিদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলার গ্রামে গ্রামে শোনা যেত তাঁত কলের খট খট আওয়াজ। 

ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁতীরা ব্যস্ত থাকতো খাদি কাপড় বোনায়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানী হতো খদ্দর কাপড়। পুঁজি আর সুতার অভাব ও প্রযোজনীয় লোকবল না থাকায় দিন দিন কমছে কলের সংখ্যা। 

আর কিছুদিন পরেই ঈদ, ধর্মপ্রান মুসল্লীরা প্রস্তুতী নিচ্ছেন সুন্দর একটি ঈদ পালন করতে। জমে উঠছে কুমিল্লার বিভিন্ন শপিংমল ও বিপনী বিতানগুলোর বেচা-কেনা। আর ঈদে নতুন কাপড় কিনতে গেলে খাদি কুমিল্লার মানুষের প্রথম পছন্দ। খাদির কাপড় পড়তে আরাম ও সাশ্রয়ী । খাদি শিল্পিদের অসাধরন ডিজাইন করা পণ্য শুধু কুমিল্লাই নয় সরাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ পছন্দ করে। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের ক্রেতাদের কাছে খাদিকে জনপ্রিয় করতে নতুন নতুন ডিজাইন সংযুক্ত করা হচ্ছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতারা বলেন, কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি এখন খুব একটা পাওয়া যায় না। কারণ বাজারে যে সমস্ত কাপড় কুমিল্লার খাদি নামে বিক্রি হচ্ছে এর সিংহ ভাগই কুমিল্লার বাইরে থেকে আসা। এর কারণ হিসেবে যতটুকু জেনেছি লোকসানে পড়ে অধিকাংশ মালিক ও কারিগররা পেশা পরিবর্তন করেছেন। সঠিকভাবে সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করলে খাদির ঐতিহ্য আবার ফেরানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

ব্রিটিশ ভারতে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে ঐতিহাসিক কারনে কুমিল্লা অঞ্চলে খদ্দর বা খাদি শিল্প দ্রুত বিস্তার লাভ করে ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। জনশ্রুতি আছে ১৮ শতকের শুরুর দিকে কুমিল্লার জনগনের গরীব মানুষের কাপড়ের চাহিদা মেটাতে নিজেরাই চরকার মাধ্যমে তুলা থেকে সুতা বুনে সেই সুতায় খদ্দর কাপড় বুনা হতো। পরবর্তীতে খাদি কাপড় দেশ ও বিদেশে জনপ্রিয় হতে থাকে। গেল কয়েক বছর আগেও যেকোন উৎসবের আগে তাঁতি পাড়াগুলো থাকতো কাপড় বুনায় ব্যাস্ত।

বর্তমানে চান্দিনা ও দেবিদ্বার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল মাত্র দুই তিনটি তাঁতের কল। প্রতিযোগীতার বাজারে টিকতে না পেরে তাঁতীদের অনেকেই বাপ দাদাদের পেশা ছেড়ে দিয়েছে। তাঁতী বাড়ি গুলো আজ নিঃস্তব্ধ।

খদ্দর শিল্পটি যখন বন্ধ হওয়ার পথে, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিল্পটিকে বাচিয়ে রাখতে নেয়া হয়েছিলো  প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।বর্তমানে শ্রমীক ও কাচাঁমাল সংকটের কারনে খাদির কাজে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছেনা। এছাড়াও বাজার দখল করেছে নকল মেশিনে তৈরী খাদি যা একেবারেই নিম্নমানের । এতে হ্রাস পাচ্ছে খাদির জনপ্রিয়তা।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণ পদক সহ বিভিন্ন পদক প্রাপ্ত খাদি শিল্পি চিন্তাহরণ দেবনাথ জানায়, আমার পর এই কাজ ধরে রাখার মত কেউ নেই। বড় বড় কোম্পানীর চাহিদার কারনে এখন আর পাওয়া যায়না খাদির কাচাঁমাল । যার কারনে হাতেবুনা খাদিকে টিকিয়ারাখা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি সাহায্য পেলেই ঘুরে দাড়াতে পারবে এই শিল্প।

ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটিকে বাচিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সাধারন ক্রেতাদের, ব্যাবহার করতে হবে খাদি পণ্য। তা নাহলে শ্রীঘ্রই হারিয়ে যাবে শিল্পটি।


এআর

Wordbridge School
Link copied!