কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম-৪ সংসদীয় আসনে (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর) এবার বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই আসনে।
সর্বশেষ ৩টি সংসদ নিবার্চনকে প্রহসনের নির্বাচন আখ্যাদিয়ে বিএনপি ও জামায়াত অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি ছিলো আওয়ামী সরকারের সহযোদ্ধার ভূমিকায়।
এতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে তৃণমূল রাজনীতিতে অনেকটা কোনঠাসা ছিলো দল দুটি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনারর পতনের পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরেছে দল দুটি।
তবে এ মুহূর্তে প্রার্থীরা চূড়ান্তের চেয়ে ঘর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি। আংশিক আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে বছর পাড়ি দেয়া চিলমারী উপজেলা বিএনপি পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তথ্যমতে, ১৯৯১ এর ৫ম সংসদ নিবার্চন থেকে ২০০১ এর ৮ম সংসদ নিবার্চন পর্যন্ত এ আসনটিতে জাতীয় পার্টি’র একছত্র আধিপত্য ছিলো। বর্তমানে দলটির ইমেজ সংকটে জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে।
আওয়ামী লীগের শামনামলের অন্যতম দোসর তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টির নেতাকমর্ীরা তাই প্রকাশ্য কোন মিছিল মিটিং এমনকি নিবার্চনমূখী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না।
ত্রয়োদ্বশ সংসদ নিবার্চনে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দিতার জন্য তাই দলটি প্রার্থীরা সংকটে পরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
একই সংকটে রয়েছে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ। ৯ম সংসদ নিবার্চন থেকে দ্বাদশ সংসদ নিবার্চন পর্যন্ত ৪ বারের মধ্যে ৩ বার এ আসনে প্রতিনিধিত্ব করলেও দলটির সরকার পতনের পর দৃশ্যত সকল নেতা-কর্মী গাঁ-ঢাকা দিয়েছেন। অনেকেই রয়েছেন জেলহাজতে। এতে ভোটের রাজনীতিতে কার্যক্রম আওয়ামী লীগের নেই বললেই চলে।
ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি, এলডিপি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, জাকের পার্টি, জাসদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দলের তেমন প্রভাব নেই। এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মধ্যে, এমনটা জানিয়েছেন ভোটাররা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দেয়া তথ্যমতে, এ আসনে জামায়াতের প্রার্থীর হচ্ছেন, রৌমারী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান।
ত্রয়োদ্বশ সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণা না হলেও দলটি নিবার্চনী কৌশল হিসেবে আগাম প্রার্থী চূড়ান্তের ঘোষণা দিয়েছে।
এর মাধ্যমে নিবার্চনের আগে তাদের প্রার্থীদের সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত মুখ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়েছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলা জামায়াতের আমীর অবসর প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক নুর আলম মুকুল জানান, ‘ছাত্র জনতা যে ত্যাগ স্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে, আমরা সেই স্বপ্নের সহযাত্রী। সৎ, যোগ্য এবং সর্বজনবিদিত রৌমারী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান’কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীরা মনোনিত করেছে, ইনশাল্লাহ আমরা জয়যুক্ত হয়ে ছাত্র জনতার সেই আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাবো। আমরা নিবার্চনের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে, সাধারণ মানুষের কাছেও সেই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি।’
অপরদিকে বিএনপি’র প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন চিলমারী উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারি সরকার, রৌমারী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজিজুল হক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলাদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হোসেন লিপি, রাজিবপুর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান ও কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি’র সদ্য সাবেক সভাপতি তাসভিরুল ইসলামের ভাতিজা নদী চর ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. সাদ কাশেম।
প্রার্থীর মধ্যে ড. সাদ কাশেম ১ যুগের বেশি সময় ধরে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নানা মুখি উন্নয়ন ও সমাজ সেবা মূলক কাজ করে সাধারণ মানুষ, বিএনপি ও বিএনপি’র অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায় রয়েছেন।
তবে জামায়াতের মনোনিত প্রার্থী রৌমারী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান ও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশি রৌমারী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজিজুল হক সম্পর্কে আপন সহোদর হওয়ায় বিএনপি’র মনোনয়ন দৌড়ে তিনি অনেকটা পিঁছিয়ে পড়েবেন এমনটা জানিয়েছেন বিএনপি’র উপজেলা পর্যায়ের কর্মীরা।
চিলমারী উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, ‘এ মুহূর্তে তৃণমুল বিএনপিকে সু-সংগঠিত করাই আমাদের প্রধান কাজ। ত্রয়োদ্বশ সংসদ নিবার্চনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী যিনিই হবেন আমরা ভেদাভেদ ভুলে তার পক্ষেই কাজ করবো।’
এআর







































