• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে টিকটক, গ্রেফতার ৭


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩, ০৩:০৫ পিএম
মানুষের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে টিকটক, গ্রেফতার ৭

ঢাকা: প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা, তারপর টার্গেটের বিভিন্ন অঙ্গ ও কব্জি বিচ্ছিন্ন করা; ঘটনাটি ভিডিও রেকর্ড করা, শেষে সেটি আবার টিকটকে প্রকাশ। একটি চক্র বহুদিন ধরে এমন অপকর্ম করে আসছিল।

তাদের আটক করেছে করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামে এক যুবকের হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে সে ভিডিও টিকটক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে ৭ যুবকের একটি চক্র।

 

ঘটনাটির অভিযোগ ও এ অপকাণ্ড আমলে নিয়ে তাদের পেছনে লাগে র‍্যাব-২ ও র‍্যাব-৬। 
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত চক্রটি ধরতে অভিযান চালায় এ বাহিনী। পরে মোহাম্মদপুর ও বাগেরহাট এলাকা থেকে চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- আহমেদ খান (২২), মো. হাসান ওরফে গুটি হাসান (২৪), মো. হানিফ হোসেন জয় (২৪), রমজান (২৩), মো. রাজু (১৯)। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি ও হামলার কাজে ব্যবহৃত দেশিয় ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়। এদের দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাত (২৩), ও তুষার হাওলাদার (২৩) আটক হন।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য কর্তৃক ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এ সকল সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় সন্ত্রাসী রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামক এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে। এই ঘটনায় ২৭ আগস্ট ভুক্তভোগী নিজে বাদি হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদ থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা (নং-১৫২) করেন।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, আসামিরা রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। ওই সন্ত্রাসী গ্যাংটি রাফাত, তুষার ও আনোয়ারের নেতৃত্বে বিগত ৪-৫ বছর যাবত পরিচালিত হয়ে আসছিল। আসামিরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তারা ওই এলাকাসমূহে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ বর্ণিত এলাকাসমূহে মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল। এই গ্যাংয়ে সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সাথেও জড়িত। এছাড়াও আসামিরা বর্ণিত কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দেয়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসামিরা তুষার ভুক্তভোগী আরমানের বাম হাতে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে  কব্জি বিচ্ছিন্ন করে এবং রাফাত ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে ভুক্তভোগী আরমানের ডান হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে বলে জানা যায়। ইতোপূর্বেও তারা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভুক্তভোগীকে একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করতো। পরে এ সকল নৃশংসতার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতো। 
  
আসামিদের বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাতের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় বিগত ৪-৫ বছর যাবত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করতো। সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতো ও এই গ্রুপের প্রধান হিটম্যান হিসেবে কাজ করতো। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে সে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাধ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলেও জানা যায়। সেই ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার  এড়াতে সে প্রথমে ফরিদপুরের একটি মাজারে গিয়ে আত্মগোপন করে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করার পর পুনরায় গ্রেফতারের আশংকায় ওই স্থান থেকে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে বাগেরহাটে গমন করে। পরবর্তীতে বাগেরহাট থেকে অন্যত্র আত্মগোপনে যাওয়ার সময় র‌্যাবের হতে গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। 

গ্রেফতার তুষার হাওলাদার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের একজন অন্যতম সদস্য। সে রাফাতের নির্দেশনা অনুযায়ী ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা করতো বলে জানা যায়। পরবর্তীতে গ্রুপের অন্যান্য সদস্যসহ তারা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতো বলে জানা যায়। এই ঘটনার পর সে রাফাতের সাথে আত্মগোপন করে এবং পরবর্তীতে বাগেরহাট থেকে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। 

গ্রেফতার আহমেদ খান ওই সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের উপয্ক্তু টার্গেট নির্বাচন করতো বলে জানা যায়। কব্জি বিচ্ছিন্নে ঘটনার সময় গ্রেফতারকৃত রাফাত ও তুষার এর সাথে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীকে হামলা করে বলে জানা যায়। ঘটনার পর পর গ্রেফতার রাফাত ও তুষার আত্মগোপনে গেলে সেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। পরবর্তীতে শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় তার নেতৃত্বে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৪ সহযোগীসহ সে গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতার হাসান ওরফে গুটি হাসান,  হানিফ হোসেন জয়, রমজান ও রাজু এই সন্ত্রাসী গ্রুপের সহযোগী সদস্য। তারা গ্রেফতার রাফাতের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। টার্গেট নির্বাচনের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভুক্তভোগীকে নৃশংসভাবে হামলা করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে বলে জানা যায়। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর আদাবরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!