• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনিয়মের অন্ত নেই বাণিজ্য মেলায়


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৭, ১১:৩৯ এএম
অনিয়মের অন্ত নেই বাণিজ্য মেলায়

ঢাকা : আর কয়দিন পরই শেষ হয়ে যাবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। তবে শেষ সময়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় থেকে শুরু করে হকারের উৎপাত, মেলার অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। এ ছাড়া নামে-বেনামে ও অনুমোদনহীন স্টলসহ নানা অনিয়মে রফতানির সফলতাকে অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দেশি পণ্য বিদেশি বলে গ্রাহকের সঙ্গে হর হামেশাই প্রতারণা চলছে। এখানেই শেষ নয়, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতেও একাধিক হিসাবের খাতা ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। মেলায় যে যার মতো করে চলছে, এ যেন অনিয়মের মহড়া। গত রোববার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।   

সরেজমিনে দেখা যায়, বাণিজ্য মেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে একটি স্টল। কিন্তু একই নামে দুটি স্টল তৈরি করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন দোকানিরা। এদিকে ফরেন কোটায় বরাদ্দ নেয়া স্টলের ভেতরেও রয়েছে দেশি স্টল। এ ছাড়া দেশি পণ্য বিদেশি নামে বিক্রি করে পকেট কাটা হচ্ছে ক্রেতাদের। এখানেই শেষ নয় লেআউট প্ল্যানের বাইরে রয়েছে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকানসহ বেশ কিছু দোকান। এ ছাড়া ভাসমান হকার ও ভিক্ষুকের উৎপাত তো রয়েছেই। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ মেলা কর্তৃপক্ষ। এদিকে এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) উন্নয়নের তথ্য প্রদান নিয়ে মহাব্যস্ত। যেন তাদের ফুরসত নেই এদিকে নজর দেয়ার।

এদিকে মেলার ভেতরে রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ আসনের ‘রাজধানী ফুড’ নামের একটি খাবারের দোকান। ফরেন প্যাভিলিয়ন ও পাকিস্তান প্যাভিলিয়নের কাছ ঘেঁষে বসানো হয়েছে অনুমোদনহীন এই খাবারের দোকান। মেলার লেআউট প্ল্যানে এ নামের কোনো খাবারের দোকানের অস্তিত্ব নেই। কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চলছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানের এক কর্মচারী। এর জন্য তাদের প্রতিদিন মোটা অঙ্কের চাঁদা গুনতে হয়। এ ছাড়া মেলা সচিবালয়ের কাছ ঘেঁষে রয়েছে কুমিল্লা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি স্টল। এখানে একই নম্বরে দুটি স্টল তৈরি করে চলছে ব্যবসা। এখানেই স্টল নম্বর ছাড়া ইউনিসফট ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রি হচ্ছে। অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে কর্মচারীরা কিছু বলতে পারেননি। এর বাইরে মহিম লেদার নামের আরেকটি দোকান রয়েছে, তারও কোনো স্টল নম্বর নেই। জানতে চাইলে কর্মচারীরা পাশের স্টলের নম্বর বলে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উদাসীন মেলা কর্তৃপক্ষ। 

এদিকে সবচেয়ে বেশি দেশি স্টল রয়েছে ফরেন প্যাভিলিয়ন নামের প্যাভিলিয়নগুলোয়। এসব প্যাভিলিয়নে দেশি পণ্য বিদেশি বলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে গ্রাহকের কাছ থেকে। ফরেন প্যাভিলিয়নের কর্মচারী সোহেল জানান, এসব প্যাভিলিয়নে স্টল পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। অতিরিক্ত অর্থ দেয়া ছাড়াও বড় মাপের লবিং থাকতে হয়। বললেই তো আর বাণিজ্য মেলায় স্টল বরাদ্দ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া যে পরিমাণে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা পরিশোধ করতে হলে ভালো মুনাফা করতে হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে মেলা প্রাঙ্গণে খাবারের দোকানে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পাশাপাশি বিদেশি পণ্যের মোড়কে দেশি পণ্য বিক্রিরও অভিযোগ করছেন মেলায় আগত ধানমণ্ডির বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, ইরানি স্টল ও ফরেন প্যাভিলিয়নের বেশকিছু স্টলে দেশি পণ্য বিদেশি বলে ক্রেতার কাছ থেকে গলাকাটা দাম রাখা হচ্ছে। 

এদিকে প্রতিদিনই ভোক্তা অধিদফতরে পড়ছে বিস্তর অভিযোগ। মেলা শুরুর পর থেকে একের পর এক জরিমানা করার পরও থেমে নেই এসব অনিয়ম। এ ছাড়া পণ্য বিক্রিতে প্রতারণা, অনুমোদনহীন ভাসমান স্টল ছাড়াও বেশ কিছু অনিয়ম রোধ করার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আইনি জটিলতায় তা পারছে সংস্থাটি। কারণ এসব অনিয়ম প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে মেলা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কর্তৃপক্ষ নীরব ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেলা সচিবালয়ের দায়িত্বরত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আসলে মেলায় সঠিকভাবে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি থেকেই যায়। কিছু মানুষ হয়তো এর ব্যবহার করছেন। তবে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়লে এসব বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!