• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জের বিশাল বাজেট পেশ বৃহস্পতিবার


বিশেষ প্রতিনিধি মে ৩১, ২০১৭, ০৯:৪৪ এএম
চ্যালেঞ্জের বিশাল বাজেট পেশ বৃহস্পতিবার

ঢাকা: দেশের প্রথম অর্থবছরের (১৯৭২-৭৩) বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। সেই বাজেট আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গত ৪৬ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে তিন লাখ ৯৯ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।

সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেট ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বাজেট বাড়ল এক লাখ ৯৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি।

এভাবে প্রতিবছরই বাজেটের আকার বাড়ছে। অর্থনীতির আয়তন বাড়ছে। মানুষের চাহিদা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাজেট হয়ে উঠছে উচ্চাভিলাষী ও সম্প্রসারণশীল। বাড়ছে মানুষের প্রত্যাশাও।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও আসন্ন বাজেটকে সরকারের উচ্চাভিলাষী ও বিশাল বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এটিই সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট হওয়ায় আসন্ন বাজেটকে ‘চাপাচাপির’ বাজেট বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে জনগণকে তুষ্ট রাখতে এ বাজেটেই সব ধরনের অর্থনৈতিক চাপ দেয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের।

অবশ্য দেশের বর্তমান অর্থনীতির আয়তন ও প্রয়োজনীয়তার নিরীখে ‘উচ্চাভিলাষী’ ও ‘বিশাল’ শব্দগুলো মানতে নারাজ অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির আয়তন ও প্রয়োজনের তুলনায় চার লাখ কোটি বা তার চেয়ে একটু বড় সাইজের বাজেট আসলে বড় নয়। চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন। দক্ষতার সঙ্গে ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ।

এমনতর নানা চ্যালেঞ্জ ও স্বপ্ন নিয়েই বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি বাংলাদেশের ৪৬তম বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ১৮তম।

একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ১১তম বাজেটও বটে। একাধারে নয় বার বাজেট দিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন। গত কয়েকবারের মতো এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।

সম্প্রসারণশীল অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশাল বাজেটের আকার ধরা হয়েছে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’।

নতুন কিছু সিদ্ধান্ত আরোপ হওয়ায় শুরু থেকেই ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে পেশ হতে যাওয়া বাজেট। একদিকে বাজেট যেমন বিশাল, তেমনটি ঘাটতিও বেশি। অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ঘাটতি মেটাতে গিয়ে বর্তমান রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ হচ্ছে। এর ফলে জনগণের ওপর করের চাপ বাড়বে। ঘাটতি পূরণে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে সরকারকে।

বিশাল এ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড়। এ লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৭১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২৯ শতাংশ বেশি।

আগামী অর্থবছরে সরকার চার লাখ কোটি টাকারও বেশি যে বাজেট দিতে চায়, তার সিংহভাগ জোগান দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হবে ভ্যাট।

বাজেটের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ভ্যাট। ব্যবসায়ীদের অনমনীয় অবস্থানের কারণে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমানোর কথা বলে হলেও শেষ পর্যন্ত তা কমছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট হলে নিঃসন্দেহে কিছুটা মূল্যস্ফীতি হবে। ক্ষতির মুখে পড়বে নিম্ন আয়ের মানুষ।

তারা ভ্যাট ১০-১২ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজস্বের ধাক্কা চিন্তা করে সে পথে হাঁটছেন না অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানো ও ব্যাংকে আমানতে আবগারি শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় আমানতকারীরা উদ্বেগে রয়েছেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!