• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাগজ-কলমে বন্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খোলা


নিজস্ব প্রতিনিধি নভেম্বর ১৬, ২০২০, ০৩:৫৪ পিএম
কাগজ-কলমে বন্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খোলা

ফাইল ছবি

ঢাকা : দেশে করোনার সংক্রমণ রোধে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কাগজ-কলমে দেশের ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ বন্ধ থাকলেও বাস্তবে সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সবই আংশিক বা পুরোপুরি খুলে দেয়া হয়েছে। 

এসব প্রতিষ্ঠানের ক্লাস, পরীক্ষাসহ অন্যান্য সব কার্যক্রমই চলমান রয়েছে। খুলে দেয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনটা সরকারি অনুমতি নিয়ে আবার কোনটা বিনা অনুমতিতেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি অনেক স্কুলেই অনলাইন ক্লাসের বাইরে সশরীরে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯টি শাখায় নভেম্বরের শুরু থেকে শিক্ষার্থীরা সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছে। নভেম্বরের ১৩ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় ভর্তি মেলা আয়োজন করা হয়েছে।

১২ জুলাই থেকে হিফজ মাদ্রাসা এবং ২৪ আগস্ট থেকে কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিছু আলিয়া মাদ্রাসায়ও ক্লাস হচ্ছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কলাস্টিকা স্কুল সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে ‘এ লেভেল’ এবং ‘ও লেভেল’ পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। অক্টোবর মাসে ‘ও লেভেল’ এবং নভেম্বর মাসে ‘এ লেভেল’ পরীক্ষা ব্রিটিশ কাউন্সিল নির্ধারিত দিনে ও ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এছাড়া পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মেডিকেল কলেজগুলোও। এমবিবিএস কোর্সের বিভিন্ন পর্বের ফাইনাল পরীক্ষা জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মূলধারার স্কুল-কলেজের জন্য সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস শুরু হয়। কিছু কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। এরপর উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে একে একে বাতিল করা হয় পিইসি, জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা। 

এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষাও বাতিল করে এসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিখনফল মূল্যায়ন করার ঘোষণা দেয়া হয়। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পরের ক্লাসে চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চরম সেশনজটে পড়েছেন। এর মধ্যেও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস চালু রাখে। এরপর তারা পরীক্ষা নেয়ারও ঘোষণা দেয়। এতে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালে ৩০ এপ্রিল বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আর ওই দিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনেই ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। তবে কিছু পরীক্ষার্থীর ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকায় কিছুটা বাধার মুখে পড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এরপর ২ নভেম্বর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়ারও অনুমতি দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শুধু অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের সর্বশেষ সেমিস্টারের ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষার কারণে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়কেই করতে হবে। এ ব্যাপারে কমিশন কোনো দায়ভার নেবে না।’

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে বেসরকারিগুলো চালু রাখায় অনেক বেশি গ্যাপ এবং বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জামিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছি। আমরা এখনো ফার্স্ট ইয়ারেই আছি। কিন্তু যারা প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছে তারা ঠিকই প্রথম বছর শেষ করে ফেলল। তারা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অনেক আগেই কোর্স শেষ করে বের হবে। এটা যেমন গ্যাপ তৈরি করছে, তেমনি একধরনের বৈষম্যও তৈরি করবে।’

বন্ধ থাকার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৯ লাখ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আড়ায় লাখ শিক্ষার্থী সেশনজটে পড়েছে। এর বাইরে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও যথাযথ সময়েই হচ্ছে। এতে তারা একদিকে ‘অটো পাসের’ বদনাম মুক্ত হচ্ছে আবার কোনো ধরনের সেশনজটও হচ্ছে না।

বিষয়টি নিয়ে স্কলাস্টিকা স্কুলের একজন শিক্ষিকা বলেন, ‘এক দিনের জন্যও পড়ালেখা বন্ধ ছিল না। যেদিন স্কুল বন্ধ হয়েছে সেদিন থেকেই অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। এরপর যথাসময়ে সব পরীক্ষা হয়েছে।’

এদিকে, সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘এ লেভেল’ এবং ‘ও লেভেল’ পরীক্ষা নেয়ারও অনুমতি দেয়। এরপর অক্টোবর মাসে ‘ও লেভেল’ এবং নভেম্বর মাসে ‘এ লেভেল’ পরীক্ষা ব্রিটিশ কাউন্সিল নির্ধারিত দিনে এবং  ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মেডিকেল কলেজগুলোও। এমবিবিএস কোর্সের বিভিন্ন পর্বের ফাইনাল পরীক্ষা জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। ৯ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করে সংস্থাটি।

এর বাইরে দেশীয় বেসরকারি অনেক স্কুলেই অনলাইন ক্লাসের বাইরে সশরীরে ক্লাস নেয়াও শুরু হয়েছে। দেশীয় বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯টি শাখা রয়েছে। সবগুলো শাখাতেই নভেম্বরের শুরু থেকে শিক্ষার্থীরা সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সব শাখায় ধারাবাহিকভাবে ভর্তি মেলারও আয়োজন করেছে। নভেম্বরের ১৩ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় ভর্তি মেলা চলবে।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্কুল খুলে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। এর বাইরে ১২ জুলাই থেকে হিফজ মাদ্রাসা এবং ২৪ আগস্ট থেকে কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। এ ছাড়া কিছু কিছু আলিয়া মাদ্রাসায়ও ক্লাস হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার একজন শিক্ষক বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকেই স্বল্প পরিসরে মাদ্রাসা খোলা হচ্ছে। বছর শেষে পরীক্ষা হলে যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা ফল খারাপ না করে, সে জন্য আমরা ক্লাস শুরু করেছিলাম। আর এখন খুলে রাখা হয়েছে এসাইনমেন্ট নেয়া-দেয়া করার জন্য।’

এ ছাড়া সরকারি, বেসরকারি অন্য সব অফিসই ধারাবাহিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবকিছুর আগে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করছি। একটি শিক্ষাবর্ষ চলে গেলে সেটি পরবর্তী সময়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। কিন্তু একটি প্রাণ ঝরে গেলে সেটি কোনোভাবেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার উপযুক্ত সময় মনে করব, তখনই খুলে দেয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!