• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

দৃষ্টিজুড়ে যেন হলুদের সমারোহ 


জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর জানুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০২:৩১ পিএম
দৃষ্টিজুড়ে যেন হলুদের সমারোহ 

লক্ষ্মীপুর: সবুজ আর হলুদের মিতালীতে সেজেছে গ্রামের সরিষা ক্ষেতগুলো। যেখানে রয়েছে দৃষ্টিজুড়ে হলুদের অপার সৌন্দর্যের সমারোহ। এইসব সরিষা ক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকালবেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য অবলোকনে ভারাক্রান্ত মনটিও যেন আনন্দে ভরে উঠবে। হিমেল বাতাস সরিষা ক্ষেত ছুঁয়ে মন মাতানো গন্ধ পৌঁছে দিচ্ছে লোকালয়ে। সেই গন্ধ যেমন সবাইকে আকৃষ্ট করছে, তেমনই বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। এ সরিষা ক্ষেতকে নানা প্রজাতির মাছি-মৌমাছি ও প্রজাপতির আনাগোনার শ্রেষ্ঠ স্থানও বলা চলে। 

মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। যেকোন অবস্থাতাইে থাকুক সুন্দরের কদর তারা করবেই। যদি সেই সৌন্দর্যটি আবার সু-ঘ্রাণযুক্ত হয় তাহলেতো আরো বেশি আকৃষ্ট হয়। সরিষা ক্ষেতে অপার সৌন্দর্য আর ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পিপাসুদের টেনে নিয়ে যায়। সেলফীবাজদেরও আনাগোনায় মুখরিত থাকে হলুদ-সবুজের মিতালী সরিষা ক্ষেতে। 

লক্ষ্মীপুর সদরের লাহারকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় সরিষা ক্ষেতে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় এবার ১ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ৩৫০, রায়পুরে ৭৯০, রামগঞ্জে ১০০, রামগতি ৯০ ও কমলনগর ১৮০ হেক্টর জমি। এ মৌসুমে জেলাতে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এ বছরে সরিষার আবাদ বাড়াতে কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ৪ হাজার ৮০০ কৃষককে ১কেজি করে সরিষা বীজ, ড্যাপ সার ১০কেজি ও এমওপি সার ১০কেজি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাও ১০০ কৃষককে এক কেজি করে সরিষার বীজ দিয়েছেন। সরিষার দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সরিষার দানা পানির সাথে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। সরিষা গাছগুলো সবুজ ও ফুলগুলো হলুদ রঙের। 

সরিষা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছুটোছুটি করে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তখন বই হাতে ও স্কুল ড্রেসে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মনে হয় তারা হলুদের রাজ্যে মিশে গেছে। আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সরিষা ফুল ছেঁড়া নিয়ে ভাই-বোনের খুনসুটিও বেশ মানানসই। ওই রাস্তাগুলো ব্যবহার করতে ভুলে না গ্রামের মেয়ে-বউসহ নানা বয়সী মানুষ। ওই পথ দিয়েই মাথাই বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন গ্রামের কোন এক মুরব্বি। শুকনো মৌসুমে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমই ফসলের মাঝ দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা। 

মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি ‘নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের’ সেই কবিতার মতো মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মৌমাছির দল। পুরোদমে তারা মধু সংগ্রহে সময় পার করছে। মনের অগোচরে তারা সরিষা ক্ষেতে এসে লুকোচুরি খেলছে। এর মাঝে যখন তারা হাঁফিয়ে যায় তখন নিরিবিলি হয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। হাত-পা-সূড়গুলো ফুলের সঙ্গে গেঁথে এক-অপরের পরিপূরক হয়ে উঠে। মধু সংগ্রহ করে আবার তারা উড়ে চলে যায় আপন নীড়ে। একই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতে নানা প্রজাতির মাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা অবিরত থাকে। বাদ যায় না পাখিরাও। 

লাহারকান্দি গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র রাসেল আহম্মেদ সোনালীনিউজকে বলেন, এই মৌসুমে আমাদের গ্রামে সরিষার চাষ করা হয়। শুকনো হওয়ায় সরিষা ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে যাওয়া আঁকা বাঁকা পথটি স্কুলে যেতে আমরা ব্যবহার করি। সরিষা ফুলগুলো দেখতে সুন্দর। এর ঘ্রাণও খুব ভালো লাগে। 

সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলতে আসা লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র ওমর হোসেন সোনালীনিউজকে বলেন, সরিষা ক্ষেত দেখতে খুব সুন্দর। ফুলের ঘ্রাণ বেশ মনোমুগ্ধকর। এজন্য এখানে বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলতে এসেছি। 

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন সোনালীনিউজকে জানান, 'এ জেলায় এবার অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে মাঠের চাষিদের পরামর্শ ও সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সময় মত একটু পরিচর্যা করলে চলতি মৌসুমে সরিষা উৎপাদন ভালো হবে।'

সোনালীনিউজ/এম
 

Wordbridge School
Link copied!