• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রহস্যে ঘেরা খোয়াসাগর দিঘি এখন বিনোদন কেন্দ্র 


জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ১০:২৭ এএম
রহস্যে ঘেরা খোয়াসাগর দিঘি এখন বিনোদন কেন্দ্র 

লক্ষ্মীপুর: বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য ১৭৭৫ সালে লক্ষ্মীপুরে একটি দিঘী খনন করা হয়। যার বিস্তৃতি ২২ একর। দিঘিটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত কুয়াশাচ্ছন্ন দেখায়। কুয়াশাকে স্থানীয়ভাবে খোয়া বলা হয়। এছাড়া দিঘির পানি সাগরের মতো-এ দুইয়ে মিলেই নামকরণ হয় খোয়াসাগর দিঘি। লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের উপকণ্ঠ থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দালাল বাজার এলাকায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই এর অবস্থান। 

এদিকে মানুষের খে দিঘিটিকে ঘিরে রহস্যময় গল্প রয়েছে। এটি খননের পর পানি পান করতে নেমে নববধূ উধাও হয়ে যান। এরপর সবার মুখে-মুখে রটে যায় এ কাহিনি। সময়ের পরিক্রমায় ইতিহাস হয়ে লক্ষ্মীপুরের পরিচিতি বয়ে বেড়াচ্ছে দিঘিটি। 

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে জেলার অন্যতম প্রধান নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র খোয়াসাগর দিঘি। এটি এখন খোয়াসাগর দিঘী পার্ক হিসেবে পরিচয় বহন করতে শুরু করেছে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় দিঘী এলাকা অঘোষিত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে রুপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে বিনোদনপিপাসুদের ভিড়। বিশেষ করে শুক্র-শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে উপড়ে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। জেলার বিভিন্নস্থান থেকে বাসিন্দারা একটু সময় পেলেই প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নির্মল বাতাসের জন্য সেখানে ছুটে আসছেন। 

দালাল বাজার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মারুফ হোসেন সুজন সোনালীনিউজকে বলেন, খোয়াসাগর দিঘিটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও পরিত্যাক্ত ছিলো। বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার পরে জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসক ও এমপি মহোদয়ের নেতৃত্বে খোয়াসাগর দিঘি এখন লক্ষ্মীপুরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপ নিয়েছে। দুর দুরান্ত থেকে অনেকে গুরতে আসেন। বিনোদন প্রিয় যে মানুষগুলো এখানে গুরুতে আসেন তাদের নিরাপত্তা আরেকটু জোরদার করার জন্য জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এখানে কিশোর গ্যাংয়ের যে উৎপাত তা নিমূল করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে কোন পর্যটন কেন্দ্র নেই। এজন্য সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় দিঘি এলাকাকে নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর উত্তর, পশ্চিম পাশে গাইডওয়াল এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। দিঘিমুখী করে খোলা আকাশের নিচে চেয়ার দিয়ে দর্শনার্থীদের বসা ও সোলার ল্যাম্পপোষ্ট দিয়ে রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থাও করা হয়। দিঘিতে ঘোরার জন্য কয়েকটি নান্দনিক ছোট নৌকাও রয়েছে। পাড়ে বিভিন্ন রং-বেরংয়ের ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। ওয়াকওয়েতে রেলিং দেওয়ায় শিশুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছেন। বাকি কাজগুলোও চলমান। এ অবস্থায় প্রতিদিনই বিনোদনপিপাসু দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। 

কাগজপত্র ঘেঁটে ও প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দালাল বাজারের জমিদার ব্রজ বল্লভ রায় স্থানীয় লোকজনের বিশুদ্ধ পানি চাহিদা মেটাতে সংরক্ষণের জন্য ১৭৭৫ সালে দিঘিটি খনন করেন। সে সময় নববধূ নিয়ে বরযাত্রী দিঘিটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। পালকি করে তখন বধূকে নেওয়া হতো। দূরের পথ হওয়ায় ওই বধূ দিঘিটির পানি দিয়ে তৃষ্ণা মেটানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে। একপর্যায়ে তিনি (বধূ) পালকি থেকে নেমে পানি পান করতে দিঘিপাড়ে যায়। এসময় অঞ্জলি ভরে পানি পান করার সময় পানির নিচের দিক থেকে কে যেন তাঁকে টেনে নিয়ে যায়! এরপর আর ওই বধূকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁকে (বধূ) ছাড়াই  অন্যরা বাড়ি ফিরেছিলেন। তবে দিঘির ইতিহাস জানা গেলেও বর-নববধূর নাম-পরিচয় অজানাই রয়ে গেল। কেউ কখনো তা জানাতে পারেনি। যুগে-যুগে প্রচন্ড খরাতেও নববধূ হারিয়ে যাওয়া দিঘির সেই অংশটুকু কখনো শুকায়নি। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিশাল দিঘির পশ্চিম পাশের রাস্তার পাশে সনাতন ধর্মালম্বীদের দুটি মঠ রয়েছে। সেই মঠগুলো পরিচর্যা করে দর্শনার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা সম্ভব। যা ইতিহাসের পরিচায়ক হিসেবে সাক্ষ্য স্থাপন করবে। 

এখানে গুরুতে আসা কয়েকজন বিনোদন প্রেমী জানায়, এখন দিঘিরপাড়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। অন্যরকম অনুভুতি, বেশ ভালো লাগছে। আমরা প্রায় গুরতে আসি। রাতেও সময় কাটানোর জন্য দারুণ স্থান। দিঘির চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করলে আরোও সৌন্দর্য বাড়তো কয়েকগুণ। 

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মামুন বিন জাকারিয়া সোনালীনিউজকে বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়ন হলে দিঘির সৌন্দর্যে দেশ-বিদেশের মানুষও মুগ্ধ হবে। গত এক বছরে এর দুইপাড়ে ৫-৬ টি চাইনিজ রেঁস্তোরা গড়ে উঠেছে। শিশুদের মনোমুগ্ধকর বিনোদনের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পাঙ্গন। 

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ সোনালীনিউজকে জানান, খোয়াসাগর দিঘি পার্কটি এখন জেলাবাসীর বিনোদনের অন্যতম স্থান। দিঘির পাশে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বাঁকটি সোজাকরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়কটি দিঘি পার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। 

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!