• ঢাকা
  • শনিবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

বিশ্ব পর্যটন দিবসে ঘুরে আসুন চার সৈকত


রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩, ১২:০৬ পিএম
বিশ্ব পর্যটন দিবসে ঘুরে আসুন চার সৈকত

পটুয়াখালী : দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। বালুচরে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি। ঢেউয়ের গর্জন। বাতাসের তালে ঝাউপাতার শো শো শব্দে এক অন্যরকম অনুভূতি।

সমুদ্রতটে চিকচিকে বালুতে পা ফেলানো আর হঠাৎ সমুদ্রের জলরাশি ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাওয়া। সাজ বেলায় পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্যটা বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পরার মতো দৃশ্য যেকোন জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায়। ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে এ স্থানটি অতুলনীয়।

বলছিলাম পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার সম্ভবনাময় পর্যটককেন্দ্র চোখজুড়ানো আর দৃষ্টিনন্দন ওই সমুদ্র সৈকতের নাম- জাহাজমারা, তুফানিয়া, সোনারচর ও চরহেয়ারের কথা।

জাহাজমারা থেকে তুফানিয়ারচর ও চরহেয়ার : নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ঘেরা এ স্থানের নাম ‘জাহাজমারা’ সৈকত। এটি সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্থানটি দিনদিন পর্যটকদের ভীর জমতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকদের সমাগমে ভরে ওঠে এ সৈকতটি।

বিশ্ব পর্যটন দিবসে ঘুরে আসুন চার সৈকত : প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের যেকোন জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ রয়েছে। ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জেলে নৌকার বহর। রয়েছে সমুদ্র উপভোগের সুযোগ। এখানে এসে গঙ্গাস্নানে রয়েছে ভিন্ন আমেজ। এখানে গেলে দেখা মিলবে হাজারো জেলের। সাগর থেকে তুলে আনা টাটকা মাছের স্বাদও নেয়া যাবে এখান থেকে। সাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। সৌন্দর্য্য পিপাসুদের অনেকেই জাহাজমারা দেখে মুগ্ধ। খোকন ভূইয়া নামে স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, প্রায় প্রতি বছরই এখানে বৌদ্ধ পূর্ণিমায় হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটে এখানে নানা আয়োজনে পালিত বৌদ্ধধর্মালম্বীদের সে বিশেষ দিন। এছাড়া ছুটির দিনে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের এখানে ভ্রমন করতে দেখা যায়।’ দূর থেকে সমুদ্র সৈকতের বীচে তাকালেই লাল কাঁকড়ার চোখে পড়বে। দেখলে মনে হবে যেন লাল চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এ দৃশ্য আনন্দদায়ক।

জাহাজমারার কাছেই আরও দুটি দ্বীপ রয়েছে। একটির নাম ‘তুফানিয়া’, অন্যটির নাম ‘চরহেয়ার’। যেখানে আছে নিবিড় সবুজের সমারোহ। সৈকতে অগণিত লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। আছে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। বন বিভাগের ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। জেলে নৌকার বহর। কোনোটিতেই নেই হোটেল-মোটেল। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সোনারচর, জাহাজমারা, তুফানিয়া ও চরহেয়ারে পন্টুন স্থাপন করা জরুরি। একইসঙ্গে হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজসহ আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করলে পর্যটকদের এসব দ্বীপে আসার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে।

জাহাজমারা থেকে তুফানিয়ারচরে যেতে ২০ মিনিট সময়ের ব্যবধান। শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের দেখা মিলবে এখানে। এখানে রয়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার সমুদ্রতট ঘীরে রয়েছে বিশাল ঝাউবাগান। তাই অপার সম্ভাবনাময় এই স্থানটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। এখানে বেড়াতে আসা এক দর্শনার্থীর সাথে আলাপকালে বলেন, ‘আজ পরিবারের সবাই বেড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগলো। তবে এখানে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো হতো।’

এখানে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী মারিয়া বলেন, ‘জাহাজমারা আমার কাছে খুবই পছন্দের একটি জায়গা। তবে এখানে হোটেল-মোটেল না থাকায় রাত্রি যাপনের কোন সুযোগ নেই, ছুটির দিনে এখানে প্রায়ই এসে থাকি রাত্রিকালীন সময় এখানে কাটাতে পারলে রাতের সমুদ্র সৈকত ও ভিন্নভাবে উপভোগ করা যেত।’

সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন স্পটের নিদর্শন- অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে জেগে থাকা ‘সোনারচরে’ সোনা নেই ঠিকই, কিন্তু আছে সোনালি আভা। সূর্যের রশ্মি যখন সৈকতের ওপর পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয়, সত্যিই সোনার আবির্ভাব হয়েছে এখানে। মনে হবে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে স্বর্ণের। সোনারচর উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সুন্দরবনের পরেই আয়তনের দিক থেকে এটি বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্র সৈকত।

প্রশাসনের তথ্য বলছে, রাঙ্গাবালীর পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই সম্ভাবনা আরও বেড়েছে।

যেভাবে যেতে হবে : ঢাকা থেকে আসার একাধিক পথ রয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে একটি লঞ্চ রাঙ্গাবালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ওইসব লঞ্চে ডেকের ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১০০০-১৩০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ১৮০০-২০০০ টাকা। এছাড়া ভিআইপি কেবিনও রয়েছে লঞ্চে। ঢাকা সন্ধ্যা ৬ টায় লঞ্চে যাত্রা শুরু করলে পরদিন সকাল ৭টায় কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট পৌঁছে যাবেন। ওইখান থেকে মটর সাইকেল যোগে ২০ মিনিটের মধ্যে রাঙ্গাবালী খালগোড়া বাজার খেয়াঘাট যাবেন।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা : উপজেলা সদর রাঙ্গাবালীতে আবাসিক হোটেল রয়েছে এবং সাথে খাওয়া ব্যবস্থা। এখান থেকে সকালে জাহাজমারা গিয়ে দিন ব্যাপী হৈ হুল্লোড়ে কাটিয়ে সন্ধে বেলা ফিরে আসা যায় উপজেলা সদরে।

গত (১৪ই মার্চ) রাঙ্গাবালী উপজেলার পর্যটন স্পট সোনারচর ঘুরে চরহেয়ার পরিদর্শনকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, নদী ও সাগর বেষ্টিত রাঙ্গাবালীর পর্যটন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, অনেক সুন্দর দ্বীপ এখানে। শান্ত এবং সুনিবিড়। এখানে একটি সুনীল অর্থনীতির সম্ভবনা। বিশ্বে এটার গুরুত্ব আছে। আমাদের সরকার এটার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। এখানে পর্যটক আসার ক্ষেত্রে যে সেবা দেওয়া গুলো ধরকার সেগুলো প্রস্তুত করতে আমাদের এখানে আসা।

সম্প্রতি; গত (১৪ই মার্চ) রাঙ্গাবালী উপজেলার পর্যটন স্পট সোনারচর চরহেয়ার দ্বীপ দুটি পরিদর্শন করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!