• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

শ্রীপুরে দার্জিলিং কমলা চাষে চাঁর বন্ধুর বাজিমাত 


গাজীপুর প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৭, ২০২৩, ০১:৩৭ পিএম
শ্রীপুরে দার্জিলিং কমলা চাষে চাঁর বন্ধুর বাজিমাত 

ঢাকা: আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। দশে মিলে করি কাজ, হারি-জিতি নাহী লাজ। চিরন্তন সত্য এই প্রবাদ বা উক্তি যে নামেই আমরা চিনি না কেন, এবার আবারও তার জলন্ত প্রমাণ মিললো গাজীপুরের শ্রীপুরের সাতখামাইর এলাকায়। 

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সময়টা বেলা ১১টার একটু পর পরই সোনালীনিউজ এর সংবাদ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য সাতখামারই এলাকায় যাওয়া। সংবাদ সংগ্রহের জন্য যতটুকু তথ্য-উপাতথ্য পেয়েছি। এটা নিয়েই দুপুর ১ টার দিকে জেলা শহরের দিকে ফিরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময়ে সাতখামাই এলাকার স্থানীয় রফিকুল ইসলাম নামের একটা লোক আমার কাছে এসে বলেন, ভাই আমার মনে হয়। আপনি সাংবাদিক। তাই আপনাকে একটা তথ্য দেই। আমাদের সাতখামারই পশ্চিমপাড়া এলাকায় কয়েকজন যুবকেরা মিলে একটা দার্জিলিং কমলার বাগান গড়ে তুলেছেন। প্রথম বার চাষ করেই ব্যাপক লাভবান হয়েছে। এলাকায় এখন তাদের সুনামে ভরে গেছে। আপনি চাইলে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা বাগানে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। এতে আপনার ভালোও যেমন লাগবে। তেমনি আবারও আপনাদের লেখা-লেখির সারা দেশেই এটা তরুণদের মাঝে তুলে ধরতে পারবেন। 

লোকটির কথা শোনে মনে হলো, তিনি একজন শিক্ষিত। তার সমাজের যুবকদের প্রতি কিছুটা আগ্রহ রয়েছে। যাতে যুবকদের কৃষি খামার গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা শোনলে তিনি গর্ববোধ মনে করেন। আমিও তার এ ধরনের আচার-আচরণ বুঝতে পেরে চিন্তা করলাম। এখানে যেহেতু এসেছি। তাহলে কমলার বাগানটা দেখেই যাই। যদি নিউজ করার মতো হয়। তাহলে ভালো একটা ফিচার প্রতিবেদন হবে। এ চিন্তা করেই আমি পরে রৌনা দিলাম সাতখামারই পশ্চিম পাড়ার উদ্দেশ্যে। 

একটি অটোরিকশা নিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম পশ্চিম পাড়া এলাকায়। অটোরিকশা থেকে নেমেই মাত্র ২ মিনিট পথ হাঁটতে- হাঁটতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি। বিশাল আয়তনের একটি বাগান। এর পর বাগানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমন সময় একটা লোক দেখি বাগানের পাশ দিয়েই যাচ্ছে। পরে আমি তাকে জিজ্ঞেসা করলাম। ভাই এই বাগানের মালিকরা কে, তিনি আমাকে বললেন, এই বাগানের মালিক কয়েকজন যুবক পোলাপান। পরে তাকে আমি বললাম, ভাই তাদের মধ্যে কেউ কি আছে এই বাগানে। পরে তিনি বললেন, হ্যা বাগানের মধ্যে কমলা তুলছে সবুজ নামে একজন। আমি তাকে ডাইকা আনতাছি। 

এরপর সবুজ নামে একজনস যুবক আসলেন আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। পরে তাকে আমার পরিচয় দিলাম। তখন তিনি জানালেন, ২০২১ সালে মো. অলিউল্লাহ বাইজিদ, মো. ফারুক আহমেদ, মো. আব্দুল মতিন ও মো. আইনুল হক এই চারজন মিলে বাগানটি শুরু করেন। 

তিনি বলেন, এই কমলা বাগানের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তিনি জানান, আপনি যদি তাদের কারো সঙ্গে কথা বলতে চান। তাহলে দুই একদিন পরে সময় নিয়ে আবার আসতে হবে। পরে আমি বললাম আচ্ছা ঠিক ভাই, তবে ভাই আমি বাগানটা এখন একটু ঘোরে দেখতে চাই, আর আপনি আমাকে কিছু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করবেন। সবুজ তাতে রাজি হয়। 

পরে আমি বাগান ঘোরতে শুরু করলাম। বাগানে দক্ষিণ দিকে যেতেই দেখি, গাছ জুড়ে রয়েছে রসে টইটুম্বুর পাকা কমলার থোক। রং ও আকার দেখে গাছ থেকে পছন্দ মতো কমলা তুলে নিচ্ছেন এক ক্রেতা। এ সময়ে সবুজ বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চলছে বাগান থেকে কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে কাটিমন আম। তিনি আরও বলেন, আরও অনেক ক্রেতা বাগানে আসছে। সরাসরি বাগান থেকে নেওয়ায় বাজারের তুলনায় দামও কিছুটা কমে পাচ্ছেন ক্রেতারা। বাজারে যেখানে কেজি প্রতি লাগে ২৫০/৩০০ টাকা সেখানে প্রতি কেজি কমলা ক্রেতারা কিনতে পারছেন ২০০ টাকা দরে। এজন্য দুর্দান্ত থেকে আসা ক্রেতারা মহাখুশি। 

সবুজ মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে, বলতেই এর মধ্যে চাঁর উদ্যোগক্তার মধ্যে একজন অলিউল্লাহ বাইজিদ বলেন, প্রথমে তারা শখের বসে মাত্র কয়েকটি গাছ দিয়ে বাগানটি পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করেন। পরে তারা চিন্তা করলেন। আমাদের পাশের দেশ ভারতে এটা ব্যাপক ভাবে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় দার্জিলিং কমলার। তাহলে আমাদের এখানে হবেনা কেন। তাই পরবর্তীতে আমরা চাঁর বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেই। বাণিজ্যিক ভাবে এটা গড়ে তুলার জন্য। একটা পর্যায়ে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সফল হই। তিনি বলেন,তাদের বাগানে ১০০টি দার্জিলিং ও ৫০টি চায়না ম্যান্ডারিন কমলা গাছের চারা আছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ গাছে আশানুরূপ ফলন এসেছে। একেকটি দার্জিলিং জাতের কমলার ওজন ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম। ২০২২ সালে এই বাগান থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার বল সুন্দরী বরই বিক্রি হয়েছে। ক্রেতারা বাগান থেকেই বড়ই কিনে নিয়েছেন। 

অলিউল্লাহ বাইজিদ বলেন, তাদের এই বাগান সফল হওয়ায় এবং বাণিজ্যিক ধারায় চলে আসায়। এর নাম দিয়েছেন। তাওয়াক্কালনা ফ্রুট এন্ড এগ্রো লিমিটেড। এখানে কমলা ছাড়াও বাগানে আরও পাওয়া যাবে বিভিন্ন জাতের আম, বল সুন্দরী বরই, সফেদা, জাম্বুরা ও ড্রাগন ফল। 

অলিউল্লাহ বাইজিদ এর সঙ্গে কথা বলার সময়। বাগানে চলে আসেন আরেক কৃষি উদ্যোগক্তা বন্ধু আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে টাটকা ও বিশুদ্ধ এবং ফরমালিন মুক্ত কমলা বাজারজাত করার উদ্দেশ্য তারা এই বাগান গড়ে তুলার উদ্যোগ নেন। এর পাশাপাশি তারা যদি মুনাফার মুখ দেখেন। তাহলে বাণিজ্যিক ভাবে কমলা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চাঁর বন্ধু একত্রিত হয়ে এই উদ্যোগ নেন। তিনি আরও বলেন, তারা চারজন উদ্যোক্তা মিলে ৮ বিঘা জায়গায় ১০ বছরের চুক্তিতে ভাড়া নেন। এরপর সেখানে দেড় বিঘা এলাকায় দুই জাতের কমলা চারা রোপণ করেন। মোট জমির বাকি অংশে বড়ই, আম, সফেদা , জাম্বুরা ও ড্রাগন ফ্রুট চাষ করেন।মাত্র তিন বছরের মাথায় কমলা বাগান থেকে ফলন আসা শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারবো। 

আব্দুল মতিন বলেন, তারা একটা স্বপ্ন ধারণ করেছিলেন। তারা এই বাগানের মাধ্যমে পুরো গাজীপুর জুড়ে তরুণ উদীয়মান উদ্যোগক্তাদের জাগ্রত করবেন। আজ এটা আমরা করতে পেরেছি মহান আল্লাহর রহমতে। এই উদ্যোগক্তার মতে, শুধু গাজীপুরের শ্রীপুরেই নয়। আমার মনে হয়। বাংলাদেশের যে কোন এলাকায় মাটি পরীক্ষা করে শিক্ষিত তরুণরা অল্প পুঁজি নিয়ে এবং স্বল্প পরিসরের জায়গায় কৃষি খামার গড়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারবেন। এ জন্য শুধু দরকার স্বদিচ্ছা। 

গাজীপুর জেলার পুষ্টিবিদদের মতে, কমলা মানুষের শরীরের জন্য অতন্ত্য পুষ্টিমান সহায়ক। কমলার চর্বিহীণ আঁশ, সোডিয়াম মুক্ত এবং কোলেস্টেরল মুক্ত উপাদানগুলো হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। কমলায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মতো ফ্ল্যাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা জানান, সাতখামারই এলাকায় কয়েকজন তরুণ মিলে কমলার বাগান গড়ে তুলে সফলতা অর্জন করেছে। এটা কৃষি খাতের জন্য সুখবর। এ জন্য ওই তরুণদের প্রতি উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে সাধুবাদ জানাই। 

তিনি বলেন, তরুণরা যদি কৃষি খামারের প্রতি আগ্রহী হয়। তাহলে শুধু শ্রীপুর উপজেলা নয়। সারা দেশেই কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, শ্রীপুরের মাটি অতন্ত্য উর্বর এখানে কমলা,মাল্টাসহ আরও অনেক বিদেশি ফল চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি আরও বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোগক্তাদের প্রতি সময় উপজেলা কৃষি অফিস প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত। যদি কেউ আমাদের কাছে কোন সহায়তা চান। তাহলে আমরা, আমাদের সরকারি ভাবে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব করবো। 

সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই
 

Wordbridge School
Link copied!