• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

চাঁদপুরে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প


চাঁদপুর প্রতিনিধি জানুয়ারি ২২, ২০১৯, ০২:১৬ পিএম
চাঁদপুরে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

চাঁদপুর : এক সময় চাঁদপুর জুড়ে ছিল শাহরাস্তির মাটির হাঁড়িপাতিলের কদর। কিন্তু এখন আর তা নেই। বিলুপ্তের পথে এ শিল্প। কালের বিবর্তনে ধাতব, প্লাস্টিক, মেলামাইন ও চিনামাটির সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ শিল্পে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। বেঁচে থাকার তাগিদে চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার অনেক শিল্পী। কম চাহিদা, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি আর জীবনমান উন্নয়নের জন্য ক্রমেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন তারা।

একদিকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, অন্যদিকে আধুনিক যুগের যন্ত্রবিপ্লবের হুমকির মুখে পতন- এ দু’য়ের ফলে সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে চলেছে মৃৎশিল্পের স্থায়িত্ব ও বিকাশের পথ।

বিলুপ্তপ্রায় সেই মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি পরিবারের বাস শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘুঘুরচপ ও গ্রাম খীলা গ্রাম। এক সময় ঘুঘুরচপ পাল বাড়ী ও গ্রাম খীলার পাল বাড়ীর মাটির তৈরি ব্যবহার্য তৈজসপত্রের বড় জোগান আসত এই গ্রাম থেকে। আর এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তরা সচ্ছল জীবনযাপন করতেন।

অতিকষ্টে বংশপরম্পরার এ ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছে ১০ থেকে ১৫’টি পরিবার। অথচ একসময় এ দু’গ্রামে অন্তত ৫০টি পরিবারের জীবন-জীবিকার উৎস ছিল এ শিল্প।

গত ২০ জানুয়ারী গ্রামখীলায় প্রবেশের পথে কথা হয় উত্তম পালের সঙ্গে। অতীতের বর্ণনা দিতে গিয়ে সত্তর ছুঁইছুঁই উত্তম পালের চোখজোড়া চঞ্চল হয়ে ওঠে। মৃৎশিল্পের সঙ্গে যার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি কি-না শেষ বয়সে এসে মুদি দোকান দিয়েছেন। উত্তম পাল বলেন, ‘আগে ঘরে ঘরে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। এখন ১০-১৫টি পরিবার বানায়। লাকড়ি মেলে না। হাঁড়িপাতিল তৈরি করার মাটি পাওয়া যায় না। লাকড়ি ও মাটির দাম বেশি। তাই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। দুই ছেলে আমার, দোকানে চাকুরি করে।'

নতুন প্রজন্মের কেউই এ পেশায় আসছেন না। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৃৎশিল্পের চরম দৈন্যদশার জন্য নতুন করে তারা কেউই এ পেশায় আসতে আগ্রহী নন।

দিলীপ পাল (৫৫) বলেন, মৃৎশিল্পের মূল উপাদান এঁটেল মাটি। এ মাটি দিয়ে তৈরি উপকরণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাঁড়ি, কলসি, ঘড়া, ঘাগড়া, শানকি, প্রদীপ, পাঁজাল বা ধুপতি, গ্লাস, বদনা, ঝাঁজর, চাড়ি, মটকি বা মটকা, পিঠার ছাঁচ, সরা, ঢাকনা, বাটি, ফুলের টব, পুতুল, প্রতিমা, মূর্তি প্রভৃতি।

গ্রামের গণেশ পাল বলেন, ‘আগে পাইকাররা এসে বায়না করে যেত, ১০-১৫ দিন পরপর বিয়ানীবাজার, সিলেট, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে তাদের মাল বুঝে নিত। এখন এ গ্রামে আমরা ৫-৬ পরিবার এবং পাশের গ্রাম খীলায় কয়েকটি পরিবার এই কাজ করি। হাজীগঞ্জ বাজার, চাঁদপুর শহর বাজার ও কুমিল্লা জেলার চান্দিনা বাজারে এগুলা বিক্রি করি।’ তিনি জানান, বিশেষ করে ১লা বৈশাখসহ বিভিন্ন মেলা ও ঈদ উপলক্ষে এগুলো বিকি-কিনি জমে উঠে।

ঘুঘুরচপ গ্রামের গীতা রানী পাল জানান, শীতকালে শীতের পীঠা তৈরীর জন্য কিছু ছিতাই পীঠার বাসন, বিভিন্ন উরসের জন্য মাটির বাসনের কদর এখনো রয়েছে। তবে এঁটেল মাটির অভাব। লাকড়ীর অভাব তাই এসব পেশা এখন ছেড়ে দিচ্ছে অনেকে।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ হাবীব উল্লাহ মারুফ বলেন, কুমারপাড়ায় খোঁজখবর নিয়ে মৃৎশিল্প ধরে রাখতে পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!