• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

করোনায় মৃত্যুপুরী দিল্লি, জ্বলছে সারি সারি চিতা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক এপ্রিল ২৪, ২০২১, ০৪:০৭ পিএম
করোনায় মৃত্যুপুরী দিল্লি, জ্বলছে সারি সারি চিতা

ঢাকা : করোনা মহামারিকালে সম্প্রতি ড্রোন থেকে তোলা ভারতের রাজধানী দিল্লির ছবি দেখে কিছুদিন আগে এই মহামারির ছোবলে নাজেহাল নিউইয়র্কের স্মৃতি মনে পড়ছে অনেকের।

দিল্লির ছবিটিতে দেখা যায়, মাঝখানে সরু দেয়াল। তার এক পাশে নিঝুম জনবসতি। আর এক পাশে জ্বলছে সারি সারি চিতা।

গত বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে করোনায় মারা যাওয়াদের এমন সৎকারের দৃশ্য ধরা পড়েছিল নিউইয়র্কে। জায়গা কম পড়ায় থরে থরে কফিন সাজিয়ে ঠিক এ ভাবেই করোনায় মৃতদের গণকবর দেওয়া হয়েছিল সেখানে। যদিও নিউইয়র্কে সে সময় কভিডে মৃতের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার। দিল্লিতে ইতিমধ্যেই কভিডে মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানায়, শুক্রবার দৈনিক সংক্রমণে ফের রেকর্ড গড়েছে ভারত। এক দিনে নতুন করে দেশে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে দিল্লিতেই নতুন করে আক্রান্ত ২৬ হাজার ১৬৯ জন। বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দিল্লিতে এক দিনে সেখানে ৩০৬ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে জনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে জ্বলন্ত গণ চিতার ছবিটি প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তারা জানিয়েছে, শুধু শ্মশানই নয়, রাজধানীর কবরস্থানগুলির অবস্থাও এক। মরদেহ সমাহিত করার জায়গা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে করোনায় মৃতদের পরিবারকে।

আনন্দবাজার জানায়, এর আগে ভারদের গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে শ্মশানের বাইরে দেহ নিয়ে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তবে দিল্লিতে পরিস্থিতি এমন যে, শ্মশানের বাইরে লাইনেও জায়গা পাচ্ছেন না অনেকে। বাধ্য হয়ে বাড়িতেই প্রিয়জনের মৃতদেহ রেখে দিতে হচ্ছে। চিতা নির্গত ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে আসা চোখ মুছতে মুছতে সে কথাই বলছিলেন সীমাপুরীর বাসিন্দা নিতীশ কুমার।

তিনি জানান, কভিডে আক্রান্ত হয়ে দু’দিন আগে তার মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু কোনও শ্মশানে মায়ের দেহ দাহ করার জায়গা পাননি তিনি। বাধ্য হয়ে দু’দিন বাড়িতেই মায়ের দেহ রেখে দিয়েছিলেন নিতীশ। নিজে এ দিক ও দিক চষে বেড়াচ্ছিলেন- কোথায় দাহ করা যায়, জায়গা খুঁজছিলেন। শেষমেশ একটি পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে মা-কে চিতায় তোলার জায়গা মেলে। বৃহস্পতিবার সেখানেই মা-কে দাহ করেন তিনি।

নিতীশ বলেন, কোথায় না গিয়েছি। কিন্তু কিছু না কিছু কারণে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। চিতা জ্বালানোর জন্য কাঠ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও শুনতে হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শহীদ ভগৎ সিংহ সেবা দল’-এর প্রধান জিতেন্দ্র সিংহ শান্টি বলেন, দিল্লিতে এমন দৃশ্য দেখতে হবে কেউ ভাবেনি। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে, কারও বয়স ৫, কারও ১৫, কারও ২৫। তাদের দাহ করতে হচ্ছে। সদ্য বিবাহিত অনেকের দেহও শ্মশানে আসছে। চোখে দেখা যাচ্ছে না।

তিনি জানিয়েছেন, সীমাপুরীর পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৬০টি দেহ দাহ করা হয়েছে। জায়গা না পেয়ে পড়েছিল আরও ১৫টি দেহ। কিন্তু গত বছর পরিস্থিতি এতটা ভয়ংকর ছিল না। সংক্রমণ যখন সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকে, সেই সময়ও একদিনে সর্বাধিক ১৮টি দেহ দাহ করতে হাত লাগিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার একটি শ্মশানে ৭৮টি দেহ দাহ করা হয়েছে। জিতেন্দ্রর মা নিজে একজন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। ১০ দিন আগে কভিডে সংক্রমিত হন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও হাসপাতালে জায়গা হয়নি বলে জানিয়েছেন জিতেন্দ্র। তার অভিযোগ, সরকার কিছু করছে না। নিজের পরিবারকে নিজেকেই বাঁচাতে হবে। লড়াইটা যার যার একার।

ভারতে একদিনে করোনায় রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু : করোনা মহামারিতে ভারতে প্রতিদিনই ভাঙছে মৃত্যুর রেকর্ড। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬২৪ জন মারা গেছে। এ সময় নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ জন। গেল বছরও ভারতে একদিনে করোনায় এত মানুষের মৃত্যু হয়নি। এ অবস্থায় দেশটির করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ভারতে গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ হুহু করে বাড়ছে। দেশটিতে এখন চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখা ২৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৪০ জন। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। সব মিলিয়ে ভারতের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। তবে এ অবস্থাতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৮ জন।

ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ৪৮১ জনে। করোনায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৪ জনের। আর টিকার আওতায় এসেছে দেশটির ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩২ জন নাগরিক।

মার্কিন এক গবেষণা বলছে, মে মাসে ভারতে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে করোনা। ওই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনায় ভারতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। মার্কিন গবেষণার এই তথ্য ভারতের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদেররাতের ঘুম রীতিমতো কেড়ে নিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভারতে এপ্রিল থেকে অগাস্টের মধ্যে প্রায় তিন লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

ওই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের ১০ মে ভারতে একদিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছুঁতে পারে পাঁচ হাজার ৬০০। ১২ এপ্রিল থেকে ১ অগাস্টের মধ্যে ভারতে মৃত্যু হতে পারে তিন লাখ ২৯ হাজার মানুষের। জুলাইয়ের শেষে এই সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ছয় লাখ ৬৫ হাজার। তবে মে মাসের শেষে নাটকীয়ভাবে কমতে পারে করোনার দাপট, গাণিতিক মডেল তৈরি করে এমন তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এ বিষয়ে আইআইটি কানপুরের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়রের অধ্যাপক মণীন্দ্র আগরওয়াল বলেন, আমরা দেখেছি যে, ১১-১৫ মের মধ্যে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। ৩৩-৩৫ লাখ ছুঁতে পারে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। তবে এই সংখ্যা দ্রুতহারে কমবে। মে মাসের শেষে নাটকীয়ভাবে কমতে পারে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!