• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিকিমে আকস্মিক বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৪২, নিখোঁজ প্রায় ১৪২


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ৭, ২০২৩, ০৪:১৬ পিএম
সিকিমে আকস্মিক বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৪২, নিখোঁজ প্রায় ১৪২

ঢাকা :  সিকিমের হিমবাহ হ্রদ লোনাকের পাড় ভেঙে নেমে আসা বিপুল পরিমাণ পানিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এখনও নিখোঁজ ১৪২ জনের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। 

বুধবার সিকিমের উত্তরাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ও তুষার ধসের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ফুটেরও বেশি উপরে অবস্থিত লোনাক হ্রদে জমা অতিরিক্ত পানি তিস্তা নদীতে বড় ধরনের বন্যার কারণ হয়।  

এটি এই অঞ্চলে ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে ঘটা সবচেয়ে মারাত্মক বিপর্যয়। দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয় অঞ্চলে ঘটিত চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলোর সর্বশেষ নজির এটি। বিজ্ঞানীরা এসব ঘটনার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায় দিচ্ছেন। 

সিকিমের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্গা পূজার ছুটি ও পর্যটন ঋতুর আগে হওয়া এই বিপর্যয়ে ২২ হাজার মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

সিকিমের মুখ্য সচিব বিজয় ভূষণ পাঠক জানিয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা সিকিম থেকে ২০টি মৃতদেহ ও প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার নিম্ন প্রবাহ থেকে আরও ২২টি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে, এই ২২ জনের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যও রয়েছেন।

তিস্তা নদী বেয়ে নেমে আসা প্রবল জলস্রোতে তীরবর্তী বারদাং শহরের একটি সেনা ছাউনি ভেসে যায়। এতে নিখোঁজ হন ২৩ ভারতীয় সেনা। তাদের মধ্যে একজনকে পরে জীবিত খুঁজে পাওয়া যায়, বাকি ২২ জনের মধ্যে ছয় জনের লাশ পাওয়া গেলেও ১৬ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

টেলিফোনে বিজয় পাঠক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ১৬ সেনা সদস্যসহ ১৪২ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। শুক্রবার আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর উদ্ধারকর্মীরা তল্লাশি আরও জোরদার করেছেন।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সিকিমের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলগুলো থেকে পর্যটকদের সরিয়ে আনতে সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করার চেষ্টা হয়, কিন্তু চারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা করা যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। শনিবার তারা আবার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।

সিকিমের পর্যটন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা বন্দনা ছেত্রি জানিয়েছেন, ৫০ জনেরও বেশি বিদেশিসহ আটকা পড়া প্রায় ৩০০০ পর্যটক নিরাপদ আছেন। 

উত্তর সিকিমের এলাকাগুলো পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সেখানে উদ্ধারকর্মীদের দল ও ত্রাণ দল পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রাজ্য কর্মকর্তা সেতেন ভুটিয়া। 

তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ২৪০০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ৭৬০০ জন ত্রাণশিবিরগুলোতে আছেন। সিকিমের উত্তরাঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পানির ধাক্কায় সিকিমের ১৫টি সেতু স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাওয়ায় ও অন্যগুলো পানিতে ডুবে থাকায় উদ্ধার কাজ জটিল হয়ে পড়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে আসা ছবি ও ভিডিওতে রাস্তাঘাটে ঘন কাদা ও পাথর ছেয়ে থাকতে দেখা গেছে, তার মধ্যে যানবাহন আটকা পড়ে আছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ বহু সামরিক সরঞ্জাম তিস্তার স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে।

পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা তীরবর্তী বাসিন্দারা মর্টার শেল কুড়িয়ে পাওয়ার পর সেটির বিস্ফোরণে এক শিশু নিহত ও আরও ছয়জন আহত হয়েছেন, বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক প্রদীপ কুমার।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, অক্টোবরের প্রথম পাঁচদিনে সিকিমে ১০১ মিলিমিটার (চার ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও আস্তে আস্তে বৃষ্টি কমে আসবে বলে জানিয়েছে তারা।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!