• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বায়ান্নর এই দিনে

ভাষা আন্দোলনের দলিল


নিজস্ব প্রতিবেদকও ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯, ০১:৪৬ পিএম
ভাষা আন্দোলনের দলিল

ঢাকা : ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম রচিত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। এটি ভাষা আন্দোলন তথা জাতীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিলও বটে। আলোচ্য কবিতাটিতে অমর একুশের ভাষা শহীদদের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অগ্নিঝরা বিদ্রোহী কণ্ঠই শুধু উচ্চারিত হয়নি, একুশের চেতনা, স্বাধীনতার চেতনা সর্বোপরি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও জাতীয় মুক্তির চেতনাও প্রতিফলিত হয়েছে। একুশের প্রথম কবিতাটি ভাষা আন্দোলনের আবেগ সৃষ্টিকারী সংগ্রামী মানস চেতনার হাতিয়ার হিসেবে ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম কবিতাটি লেখেন মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী। তিনি ১৯২৭ সালের ৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরায় জন্মগ্রহণ করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে মারা যান। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি চট্টগ্রামের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন।

একুশে ফেব্রুয়ারি ঠিক দুদিন আগে তিনি আকস্মিকভাবে জলবসন্তে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ফলে ২১ ফেব্রুয়ারি এবং তৎপরবর্তী উত্তাল সময়ে আন্দোলনে তিনি শরিক হতে পারেননি। এমতাবস্থায় তিনি কবিতার মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। তার আদর্শ ও আজীবন লালিত স্বপ্নের সার্থক প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয়েছে একুশের এই অমর কবিতায়। কবিতাটি এক ঐতিহাসিক মহামুহূর্তের আকস্মিক রচনা কিন্তু কবির মানসপটের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল যুগে যুগে।

কবি নিজেই এই প্রসঙ্গে বলেন, এই কবিতা যদিও মনে হয় আকস্মিকভাবে আমি লিখেছি। কিন্তু এর প্রস্তুতি ছিল প্রায় পঁচিশ বছরের। আমার পঁচিশ বছরের সামাজিক চেতনা এবং রাজনৈতিক চেতনা এতে প্রতিফলিত হয়েছে।

’৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বিশাল জনসভায় প্রায় ৫০ হাজার লোকের উপস্থিতিতে কবিতাটি পাঠ করেন চৌধুরী হারুনর রশিদ। কবিতাটি প্রকাশের অপরাধে সরকার কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস বাজেয়াফত ঘোষণা করে এবং তালা ঝুলিয়ে দেয়। কবিতাটি মুদ্রণের জন্য প্রকাশক কামাল উদ্দিন আহমেদ বিএ, লেখক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী ও জনসভায় কবিতাটির প্রথম পাঠক চৌধুরী হারুনর রশিদ এবং মুদ্রক দবির আহমেদ চৌধুরীর নামে হুলিয়া জারি করা হয়। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।

মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর লেখা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ শীর্ষক দীর্ঘ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লাইন হলো- ‘যারা আমার মাতৃভাষাকে নির্বাসন দিতে চেয়েছে/তাদের জন্য আমি ফাঁসি দাবি করছি/যাদের আদেশে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের জন্য/ফাঁসি দাবি করছি/ফাঁসি দাবি করছি যারা এই মৃতদেহের ওপর দিয়ে ক্ষমতার আসনে আরোহণ করেছে/সেই বিশ্বাসঘাতকদের জন্যে/আমি তাদের বিচার দেখতে চাই/খোলা ময়দানের সেই নির্দিষ্ট জায়গাতে/ শাস্তিপ্রাপ্তদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায়/আমার দেশের মানুষ দেখাতে চায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!