• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিধিনিষেধ প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৯, ২০২১, ০৪:৪২ পিএম
বিধিনিষেধ প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ

ঢাকা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তারা মনে করছেন, ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে সাধারণ মানুষের যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার (১৮ মে) কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন উদ্বেগ জানানো হয়। এর আগে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে ৩৪তম অনলাইন সভায় বেশকিছু সুপারিশ গৃহীত হয়।

সভায় কমিটির দুইজন সদস্য জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচিত হওয়ায় তাদের অভিনন্দন ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এই দুই সদস্য হলেন, অধ্যাপক আজাদ খান ও অধ্যাপক মাহমুদ হাসানকে অভিনন্দন জানান

এসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতালির করোনা রোগীর পোস্ট মর্টেম সংক্রান্ত একটি তথ্যসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি মনে করে, মহামারী চলাকালে এই ধরনের গুজব জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। জাতীয় কমিটি এবিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কোনো প্রচারে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। সরকার লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোয় কমিটি বিধিনিষেধের প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ ঈদের আগে সাধারণ মানুষের যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ঈদের পরে একইভাবে তারা ফিরে আসলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে বলে মনে করে কমিটি। কিন্তু ঈদের পরে কলকারখানা পর্যায়ক্রমে খোলা হলে জনসাধারণকে একযোগে ঢাকায় ফিরতে  হতো না। সভায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কঠোর বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন কমিটি সদস্যরা। পাশাপাশি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিভিন্ন অংশীজনদের সহযোগিতা ও কার্যকর অংশগ্রহণ বিশেষ প্রয়োজন।

সভায় ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। ১৪ দিন পর পিসিআর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দেওয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া বর্ডার এলাকা দিয়ে অনানুষ্ঠানিক যাতায়াত কঠোরভাবে বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়। ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে চলাচল বন্ধ অব্যাহত রাখতে হবে।

সভায় হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কমিটি এসব পদক্ষেপের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে। কমিটি মনে করে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করে পরনির্ভরতা কমানো প্রয়োজন। সব জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনের সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়। এছাড়াও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও মারাত্মক রোগীর চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর ছাড়াও বাই প্যাপ, সি প্যাপ ও হাই-ফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলা সব জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সংযোগ করা প্রয়োজন।

স্বল্পমূল্যে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বুয়েটের একটি গবেষক দলের প্রয়াসকে অভিনন্দিত করা হয়। এই কার্যক্রমে সরকার পৃষ্ঠপোষকতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি দেশের জন্য আশাব্যঞ্জক খবর এবং এর সফল বাস্তবায়ন পরনির্ভরশীলতা কমাতে ভূমিকা রাখবে।

সভায় শ্রীলঙ্কা টিম বাংলাদেশে আসা ও খেলা অনুষ্ঠান বিষয়ে আলোচনা হয়। অনুশীলন ও খেলা চলাকালীন সময়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

বৈশ্বিক সংকট এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার এবিষয়ে আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ও বিকল্প অনুসন্ধান করছে। প্রথম ডোজের ৮-১২ সপ্তাহের ভিতরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া যায়, কোনো কোনো দেশ ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিচ্ছে। এই ব্যাপারে সবাইকে ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগকেও টিকার পরিস্থিতি ও সরকারের বিকল্প পরিকল্পনা জনগণকে অবহিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভ্যাকসিনের জন্য পরনির্ভরতা কমাতে উৎপাদনের জন্য দ্রুত সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে কমিটি মতামত দেয়।

সংক্রমণ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোভিড-১৯ পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!