• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে হামলা

আটকে পড়া নাবিকদের নিরাপদে বের করার চেষ্টা চলছে


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৩, ২০২২, ০৩:১৩ পিএম
আটকে পড়া নাবিকদের নিরাপদে বের করার চেষ্টা চলছে

ঢাকা : ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকাপড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলার পর নাবিকদের জন্য আরও নিরাপদ রাস্তা বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, আরও নিরাপদ রাস্তা বের করতে পারি কি না। কূটনৈতিকপর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছি। হয়তো দ্রুত তাদের সেখান থেকে নিয়ে আসতে পারবো।

খালিদ মাহমুদ বলেন, আমরা খুবই নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। কারণ আমাদের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ওখানে আটকা অবস্থায় আছে। এটা বাণিজ্যিক জাহাজ, যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকার কথা। বন্দরের মধ্যে মাইন সেট করার কারণে চ্যানেলটা বন্ধ হয়ে গেছে। পোর্ট কর্তৃপক্ষ সেখানে যে পাইলটিং করে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে জাহাজটি আটকে গেছে।

এই অবস্থায় আমরা সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রাখছিলাম। আমাদের জাহাজে এক মাসের বেশি সময়ের খাবার মজুত ছিল। কিন্তু গতকাল রাতে যখন আমরা সংবাদটা পাই, সেখানে মিসাইল হামলা হয়েছে। জাহাজের ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরপরই খবর পেলাম থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান সেখানে মিসাইলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকি ক্রুরা ফায়ার ফাইটিংয়ের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।

তিনি বলেন, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যে আমাদের পোল্যান্ডের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। সচিবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ওনার কথা হয়েছে। জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। তারাও চাচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত হোক। নাবিকরা যদি জাহাজ থেকে নেমে যান, তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

নৌ-প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, জাহাজ এখন চলাচল করা সম্ভব নয়। তবে জেনারেটরসহ বাকি যেসব সুবিধা, সেগুলো আমাদের ক্রুরা পাচ্ছে। তবে সেখানে একটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, এটা স্বাভাবিক। সেখানে যুদ্ধ চলছে, তারা যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়েছেন। তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না, এর মধ্যে সেখানে মিসাইল হামলা হয়েছে।

মারা যাওয়া হাদিসুর রহমানের মরদেহটি জাহাজেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করে যে, আমরা কী অবস্থায় যাবো। রাশিয়া, ইউক্রেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং আইএমওর (ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। রেডক্রসের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। জাহাজটি যদি আমরা পুরোপুরি ছেড়ে দেই, তবে অন্য একটি সম্ভাবনা থেকে যায়।

নৌপ্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা সবকিছু বিবেচনায় জাহাজের ক্রুদের জীবনের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। জাহাজের মধ্যে থেকে তারা বেশি নিরাপদ থাকতে পারে। তবে যুদ্ধটা কোন পর্যায়ে যাবে, তা তো জানি না। আমি বলেছি, তাদের নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। খুব আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত, ক্রেজি হয়ে গেছে, ভুল সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিএসসি ও ডিপার্টমেন্ট অব শিপিংয়ের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য বলেছি।

নাবিকদের নিরাপত্তা দিতে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসকে অনুরোধ জানাতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা তো নিরাপদই ছিল। যখন ২৩ ফেব্রুয়ারি জাহাজটা আটকে যায়, তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তারা সেখানে নিরাপদই ছিল, জাহাজের মধ্যে ক্রুরা ছিল। গতকালকে যে ঘটনা ঘটে গেছে, এখন যেটা মনে হচ্ছে টার্গেট করে হামলাটা হয়েছে। ছবি দেখে এ রকমই মনে হচ্ছে। আমরাও সেটা সেখান থেকে জেনেছি, যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের কাছেও এটা জেনেছি যে এরকম একটা অবস্থা (টার্গেট করে হামলা) হয়েছে।

হাদিসুরের মরদেহ কবে নাগাদ বাংলাদেশে আসতে পারে, জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, এটা তো বলা মুশকিল। আমরা হাদিসুরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমিই কথা বলেছি। দ্বিতীয় সন্তান, তার বাবা-মা আছে। বাবা শিক্ষক ছিলেন। আমরা তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করেছি, এখন টোটাল যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আমরা হাদিসুরকে কবে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারবো বা যারা বেঁচে আছেন তাদের কী করতে পারবো সেটা যুদ্ধক্ষেত্রের ওপর ডিপেন্ড করে। আসলে তারা তো যুদ্ধের মধ্যে আটকে গেছে। এটার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। যতটুকু আমরা দেখছি, দুই পক্ষের কথাবার্তার মধ্যে ভালো কিছু দেখছি না। যদি ভালো হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে আমরা হাদিসুরকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে পারবো এবং বাকিদেরও নিরাপদে নিয়ে আসতে পারবো।

হাদিসুরের মরদেহ অক্ষত আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে পরিপূর্ণভাবে তথ্য আছে যে, যেহেতু সে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছিল অনেকে ধারণা করছিল যে সে বার্ন হয়ে গেছে। হ্যাঁ, শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। কিন্তু হাদিসুরের দেহাবশেষ আমাদের সংরক্ষণে আছে। আমরা তাকে সংরক্ষণ করতে পেরেছি। এটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

জাহাজে রাশিয়ার এ হামলাকে নিন্দা জানাবেন কি না, এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, না। এখনো আমরা ঠিক কনফার্ম না, হামলাটা যুদ্ধের মধ্যে হয়েছে। কোন মিসাইল, কারা করেছে, আমরা এখনো কনফার্ম হতে পারিনি। যুদ্ধের মিসাইলে আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু কোন মিসাইলে আক্রান্ত হয়েছে সেটা বলতে পারি না। আমরা যখন জানবো কারা করেছে এটা, তখন আমরা সেটার ব্যাপারে কথা বলবো।

এদিকে, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকাপড়া এম ভি বাংলার সমৃদ্ধিতে ২৮ জন নাবিক অক্ষত আছেন। তাদের জাহাজ থেকে নিরাপদে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে তিনি জাগো নিউজকে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগে জীবন, পরে সম্পদ। জাহাজ যেহেতু আনা যাচ্ছে না, সেহেতু জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করছেন। আপাতত জাহাজ রেখে আমরা নাবিকদের নিরাপদে স্থানান্তরের চেষ্টা করছি। তবে সবশেষ পাওয়া তথ্য মোতাবেক নাবিকরা জাহাজেই রয়েছেন। তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী রয়েছে।

অন্যদিকে হামলায় নিহত জাহাজের ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফের দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তার দেহাবশেষ সংরক্ষণ করা হয়েছে জাহাজের ফ্রিজেই।

বুধবার (২ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এম ভি বাংলার সমৃদ্ধিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জাহাজে আগুন ধরে যায়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নাবিকদের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।

সোনালীনিউজ/এনএন

Wordbridge School
Link copied!