• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি কর্মচারীদের আয় খুবই সীমিত, নতুন বেতন কাঠামো প্রয়োজন


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৮, ২০২২, ০৩:০৮ পিএম
সরকারি কর্মচারীদের আয় খুবই সীমিত, নতুন বেতন কাঠামো প্রয়োজন

ঢাকা: ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এরই মধ্যে ৭ দফা দাবি আদায়ের বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হয়েছে। আগামী ২৭ মে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশের কথা রয়েছে। সেখান থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, অষ্টম জাতীয় পে-কমিশনের অনেক অসংগতি এবং বৈষম্য রয়েছে। এ সকল বৈষম্য ও অসংগতি দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া অসংগতি ও বৈষম্যগুলো খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও প্রায় ৫ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কমিটি কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।

আরও পড়ুন : পদ সৃষ্টি, বেতনস্কেল,পদমর্যাদা উন্নীতকরণের কাগজপত্র চেয়ে তালিকা প্রকাশ

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে বছর শেষে মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির কথা। ইতোমধ্যেই স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের পরিবর্তে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের উপায় খুঁজতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম কোনোভাবে টেনে ধরা যাচ্ছে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারি কর্মচারীরা যেন নতুন পে-স্কেল পেতে চান। দ্রব্যমূল্যের থেকে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কম বলে দাবি করছে তারা।

জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীদের ১১-২০ গ্রেডের আন্দোলনের ফলে সরকারি চাকুরেদের বেতন কাঠামোয় বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সরকার চাইছে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন একটি বেতন কাঠামো দিতে। নতুন বেতন কাঠামোয় কোনোরকম বৈষম্য যাতে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। 

আরও পড়ুন : প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে অবাক ইউএনও

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকারের বেতন বাড়ানোর এ উদ্যোগ অসাধারণ। সরকারি কর্মচারীদের আয় খুবই সীমিত ও স্থির। এজন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনের আগে সরকার নতুন বেতন কাঠামো দিতে পারবে।

এবিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর পর পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী পে-স্কেল ঘোষণার সময় হয়ে গেছে। চাকরিজীবীদের আর্থিক সুবিধা বাড়ানো সংক্রান্ত দাবি দাওয়া সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনায় রয়েছে। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসবে। নবম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা, ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্যভাতা, টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড, বৈষম্য নিরসনসহ সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পূরণে সরকার কাজ করছে। সরকার অবগত এবং এটি বিবেচনাধীন আছে। তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে আছে এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল যা এখন কার্যকর রয়েছে। তবে সেসময় স্থায়ী পে কমিশন গঠনের প্রস্তাব থাকলেও সেটি এখনো কার্যকর করা হয়নি। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীগণ জাতীয় পে- স্কেল মোতাবেক বার্ষিক প্রায় ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বেতন বৃদ্ধির ধাপগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে মূল্যস্ফীতির সাথে বেতন বৃদ্ধির সমন্বয় হচ্ছে না। গত ৬ বছরে ৩০% বেতন বৃদ্ধি হলেও মূল্যস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭-৪০%। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে ৯ম পে স্কেল ঘোষণাসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। 

সরকারি কর্মচারীগণ বারবার ৪০% মহার্ঘভাতা চেয়ে আন্দোলন করছে। অতীত ইতিহাস বলছে সর্বোচ্চ ২০% মহার্ঘভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যকে অন্তর্ভর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মূল বেতনের ২০% (বিশ শতাংশ) হারে মাসিক সর্বনিম্ন ১,৫০০/- (এক হাজার পাঁচশত টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬,০০০/- (ছয় হাজার) টাকা মহার্ঘভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

গত ১৯ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পে কমিশন গঠন করে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের আগে অন্তর্বর্তীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিতে হবে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখাতে হবে। সচিবালয়ের ন্যায় সব দফতর, অধিদফতরের পদ-পদবি পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে। লিখিত বক্তব্য আরো বলা হয়, ৮১ টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনর্বহল, বিদ্যমান গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের স্থলে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ ও পেনশন গ্র্যাচুইটি এক টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগবিধি-২০১৯-এর ভিত্তিতে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করে উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগ করা ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া কর্মরত কর্মচারীসহ সব পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা পাঁচ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।

আরও পড়ুন : এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন বেতন কাঠামোতে যাতে কোনো অসমতা না থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেতন বৈষম্য নিরসনে সরকার ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। কমিটি গত দুই বছরে তেমন দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি। ফলে বৈষম্য দূর করা যায়নি। এ অবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। তাই, মূল্যস্ফীতির চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো দিতে আগ্রহী সরকার। এদিকে, বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদ শেষ হতে এখনো প্রায় দুই বছর বাকি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষদিকে হওয়ার কথা আছে। এ বিষয়টি সামনে রেখে অর্থ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কাজ করছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো দিয়ে সরকার কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে চায়। বেতন বাড়ালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনে উদ্দীপনা সৃষ্টি হতে পারে বলেও অনেকেই মত দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!