• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বন্যার শঙ্কা দুই জেলায়


নিউজ ডেস্ক জুন ১৪, ২০২২, ১২:৫২ পিএম
বন্যার শঙ্কা দুই জেলায়

ঢাকা : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানির প্রভাবে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চল অঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ওপর দিয়ে প্রভাহিত হয়েছে। এরইমধ্যেই আরো ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে।

সোমবার (১৩ জুন) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়।

এদিকে, শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ঢলের পানি কমতে শুরু করলেও জনদুর্ভোগ বাড়ছে বলে জানা গেছে। নতুন করে সদরের গাজীরখামার ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে পানি ঢুকেছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. শামসুদ্দোহা বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। গতকাল সকালে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার এবং ছাতক পয়েন্টে ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ও ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমার ওপরে উঠে গেছে সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও সোমেশ্বরীর পানিও।

সোমবার (১৪ জুন) সকালের পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, আগামী একদিনে সুরমা-কুশিয়ারাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং ভারি বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুস্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এ ছাড়া তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নেত্রকোনা জেলার সীমান্ত নদী সোমেশ্বরী কলমাকান্দা পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

গত একদিনে বৃষ্টিপাতের তথ্য দিয়ে প্রকৌশলী বলেন, জেলার লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, ছাতকে ১২০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ সদরে ৭৯ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেও জেলায় মাঝারি ও হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং উজানেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই অবস্থা চললে পানি আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা সাব-মার্জিবল সড়ক ডুবে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে বরাবরের মতো এই সড়কটি প্রথমে প্লাবিত হয়।

এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা শহরের নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত সাহেববাড়ি ঘাট ও জগন্নাথবাড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই এলাকার প্রধান সড়ক ডুবে গেছে।

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, গতকাল থেকে আগামী তিন দিন সুনামগঞ্জে ও সুনামগঞ্জের উজানে টানা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এতে আবারো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সারা দেশেই প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আর এর প্রভাবে দেশের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ধরলা ও পদ্মানদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা বাড়তে পারে। তবে তিস্তানদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে।

এদিকে, শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ঢলের পানি কমতে শুরু করলেও জনদুর্ভোগ বাড়ছে বলে জানা গেছে। নতুন করে সদরের গাজীরখামার ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। তবে গত শনিবার সকাল থেকে উপজেলার ১০টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মালিঝিকান্দা ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ৬ গ্রাম এবং নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের ৪ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া, আসামপাড়া, হাসলিগাঁও, নয়াপাড়া, বাতিয়াগাঁওসহ ছয়টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ কালিবাড়ীর বানিয়াপাড়া-তিনআনি সড়ক।

কিন্তু বগাডুবি বিলের পারের কাঁচা এ সড়কটির অন্তত পাঁচটি স্থানে ভেঙে গেছে। বানিয়াপাড়ায় একটি কাঠের সেতুর একপ্রান্ত ভেঙে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এতে এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে। পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাঁটছে তাদের। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই হেঁটে, কেউ কেউ সাঁতরিয়ে কিংবা নৌকা ব্যবহার করে চলাচল করছেন।

বানিয়াপাড়া গ্রামের কবির মিয়া বলেন, দুদিন ধরেই আমাগো গ্রামে পানি ঢুকছে। খুব কষ্টে আছি। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় হাট-বাজারে যেতে পারছি না। খাবার সংগ্রহে কষ্ট হচ্ছে।

আসামপাড়ার স্কুলছাত্র নাইম মিয়া বলেন, আমরা স্কুলে যেতে পারছি না। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও রাস্তায় পানি ওঠায় স্কুলে যেতে দেরী হচ্ছে। সময়মতো পরীক্ষার হলে উপস্থিত হতে পারছি না।

এছাড়া, রোববার সকাল থেকে সদরের গাজীরখামার ইউনিয়নের অন্তত ৪টি গ্রামে ঢলের পানি ঢোকার খবর পাওয়া গেছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে এলজিইডির মাধ্যমে ভাঙনকবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে কাজ শুরু করা হবে।’

এ ঘটনায় ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানির তোড়ে এরই মধ্যে উপজেলার গ্রামীণ ও পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ঢলের পানির তোড়ে ১৮০ ফুট এলজিইডির পাকা সড়ক, দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, মহারশি নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের দেড় কিলোমিটার এবং সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানে এক কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢলে অর্ধশত কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এসব ভাঙা সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্টের দ্রুত মেরামত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ ১০ টন জিআর চাল বিতরণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!