ঢাকা : দেখতে দেখতে রমজান মাস শেষ হয়ে গেল। পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পর খুশির জোয়ারে ভাসছে সারা দেশ।
শনিবার (২২ এপ্রিল) সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। 'ঈদ মোবারক'।
ঘরে ঘরে চলছে ফিরনি-পায়েসের আয়োজন। মেহেদিতে হাত রাঙিয়েছে কিশোরী-তরুণীরা। সকালে নতুন জামা-জুতো-টুপি পরে সদলে ঈদগাহ কিংবা মসজিদের দিকে ছুটছে শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবক, বৃদ্ধরা। ঘরে ঘরে এখন আনন্দের বন্যা।
আরও পড়ুন : কখন কোথায় ঈদের জামাত
শুক্রবার বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা শনিবার সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে আপনজনের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে অনেকে গ্রামে ছুটে গেছেন।
মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার মধ্যেই বিগত কয়েক বছর মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হয়েছে। এবার করোনার প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে পূর্বের মতোই আনন্দ-উচ্ছ্বাস ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন : বায়তুল মোকাররমে ঈদের ৫ জামাতের সময়সূচি
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় বিগত কয়েক বছর খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। ঈদ জামাত হয়েছে মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কিন্তু এবার ঈদগাহ ও খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে এবার রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় ঈদগাহে এবার ঈদের নামাজ পড়বেন। এই ঈদগাহে এবার প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি জামাতে অংশ নিবেন।
আরও পড়ুন : ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয়
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের দিন সকাল ১০টায় তার বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, প্রবীণনিবাস, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, সেফহোমস, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র, দুস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে।
আরও পড়ুন : ধনী-গরিব সবার ঘরে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক
ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে এবার দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন : ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ও আমল
ইসলামিক ফাউেন্ডশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এতে ইমাম থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান এবং মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন ক্বারি মো. ইসহাক মুয়াজ্জিন।
দ্বিতীয় জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়, ইমাম থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী এবং মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. আব্দুল মান্নান।
তৃতীয় জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়, এতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী ইমাম হিসেবে থাকবেন এবং মুকাব্বির হিসেবে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান থাকবেন।
আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগের নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন
চতুর্থ জামায়াত হবে সকাল ১০টায়। বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. এহসানুল হক ইমাম হিসেবে থাকবেন এবং মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের চীফ খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। ইমাম থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম এবং মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।
এছাড়া ৫টি জামায়াতে নির্ধারিত কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
আরও পড়ুন : বিএনপির নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা মো. মুজাহিদ আল সাফিদ জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ হাজার ৭৭টি মসজিদ ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫টি করে ২৭০টি স্থানে করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র আতিকুল ইসলাম নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, এবারের ঈদে ডিএসসিসি’র আয়োজনে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মসজিদগুলোতে ঈদ জামাত আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাইকে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই







































