• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

মধুখালীর ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায় 


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম
মধুখালীর ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায় 

ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরে আগুনের অভিযোগে গুজব ছড়িয়ে দুই সহোদর কিশোর শ্রমিক হত্যা প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, যাদের কোনো জাত নেই, যাদের কোনো ধর্ম নেই, তারাই দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা খুনি।এই ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে মধুখালী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, অপরাধীরা মনে করেছে, এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পার পেয়ে যাবে। এর কোনো সুযোগ নেই। তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। আইনের ধারানুযায়ী হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামিদের বিচার করা হবে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের সমাজে কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে কোন জাত; এটা বড় বিষয় নয়, আমরা সবাই মানুষ। কোনো মানুষই এ ঘটনাটিকে মেনে নিতে পারছে না। সবাই শোকাহত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করছেন হত্যাকাণ্ডের তথ্য উদঘাটন করার জন্য। কেউ কেউ ঘটনাটিকে অন্য দিকে প্রভাবিত করার জন্য হয়তো চেষ্টা চালাচ্ছে। সেদিকে আপনারা সতর্ক অবস্থানে থাকুন। কোনোভাবেই এ শান্তিপ্রিয় এলাকাকে অশান্ত করতে দেওয়া হবে না। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার সঠিক বিচার শিগগির হবে। যেটা নিহত দুই ভাইয়ের মা-বাবা দেখে যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে যার যার এলাকায় নেতৃত্বস্থানীয় লোকজন নিয়ে সভা করেন। লোকজনকে বুঝিয়ে বলুন যে, দুই শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার শিগগির হবে। ঘটনাটি নিয়ে আবেগী হয়ে আপনারা কোনো বিষয়ে উসকানি দেবেন না। এলাকায় পাহারার মতো অবস্থানে থাকুন। প্রয়োজনে আপনারা প্রশাসনকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।  

তিনি বলেন, কোনো দল বা কোনো সংগঠন, যারাই এই পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে আসবেন, তাদের আমি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেব। তবে এ ঘটনাকে ইস্যু করে কোনো ধরনের অশান্তি সৃষ্টিকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনীকের সভাপতিত্বে সম্প্রীতি কমিটির সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নিহত দুই শ্রমিকের বাবা শাহাজাহান শেখ, মধুখালী সার্কেলের এএসপি মিজানুর রহমান, ফরিদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন উপ-পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু, পৌর মেয়র মোর্শেদ রহমান লিমন, উজানদিয়া মডেল মসজিদের ইমাম হাফেজ আলম হোসেন, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুবাস রায় প্রমুখ।  

সভায় বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর বদরুল হুদা আকরাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সব ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধুখালীর ডুমাইনের পঞ্চপল্লিতে কালি মন্দিরে আগুন দেওয়ার সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে বাঁশ, লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে দুই কিশোর সহোদর আশরাফুল খান (১৭) ও আরশাদুল খানকে (১৫) হত্যা করা হয়। গুরুতর জখম করা হয় আরও পাঁচজনকে। এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ফরিদপুর-যশোর মহাসড়কে অবরোধ করেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ কারণে দ্বিতীয় দফায় বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ৪ প্লাটুন বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সংশ্লিষ্ট এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

আইএ

Wordbridge School
Link copied!