নিজস্ব প্রতিবেদক
‘মোদের গরব, মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা’।- ভাষার মাসের দ্বিতীয় দিন আজ। ১৯৫২ সালের এই মাসে বাঙালি জাঁতি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করে। স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয় এ জাতি। ভাষা আন্দোলনের হাত ধরেই আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা উদযাপন করি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। এ মাসে ঢাকায় এ দেশের সকল শ্রেণীর লেখক পাঠকদের মিলন মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে যায় এই প্রাণের মেলায়। বই কিনতে, আনন্দ-উৎসবে যোগ দিতে, সময় কাটাতে আগ্রহের কোন কমতি থাকে না। ঐতিহ্যের ডানা বেয়ে বইমেলা তাই আমাদের জাতীয় অনুষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। অবশ্য এই উৎসব একরকম ঢাকাকেন্দ্রিক এবং বিশেষত বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নির্ভর। মহান শহীদ দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় ঐতিহ্যগত কারণেই দিন দিন এর পরিসর ও গুরুত্ব বেড়েছে। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙালি প্রবাসে আয়োজন করছে আমাদের প্রাণের একুশের বইমেলা। মাসব্যাপী এই বইমেলা ভাষা-শহীদদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত।
বাংলা বাজারকেন্দ্রিক প্রকাশকদের মেলায় পরিণত হয়েছে একুশে বইমেলা। এর পেছনে নিশ্চয় ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের ব্যাপারাদির দায় সবচেয়ে বেশি। বইমেলা দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ুক এমনটা অনেকেই ভেবে থাকেন। বিভিন্ন পার্বণ ও দিবসকে ঘিরে সারাদেশে বছরের বিশেষ কোনো সময়ে পাঠাগার প্রাঙ্গণে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ও আশে-পাশে জমে উঠে বইমেলা। অবশ্য এসবই আমাদের স্বপ্নের কথা। বাস্তব অবস্থা খুবই খারাপ। কর্তাব্যক্তিরা কিংবা আয়োজক কমিটি অনেক বড় বড় সম্ভাবনা এবং সম্পৃক্ততার কথা বলে থাকলেও বইয়ের প্রতি আমাদের মমতার প্রকৃত চেহারা মোটেও ভালো নয়। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কিন্তু কমছে বই ক্রয়ের বাজেট। পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থা দিন দিন উন্নতির দিকে ধাবিত না হয়ে তার চাকা চলছে পিছনের দিকে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রায় স্থবির হবার পথে। পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সারা বছর ধরতে গেলে উলেখযোগ্য হারে বই কিনছে না। গ্রামকেন্দ্রিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আজও আমরা গোপনে বয়ে বেড়াচ্ছি। তাহলে একুশের বইমেলা আমাদের জন্য কী সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে? আঞ্চলিক ভাষা কিংবা ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠীর ভাষা আজও ব্যাপকভাবে আমাদের আরাধ্য ও চর্চার বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। পার্বত্য অঞ্চলে এবং বিশেষত অন্যান্য ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় বইমেলার আবেদন ও সুবাস পৌঁছানো যায়নি। বাংলা ভাষার মর্যাদা এবং ভাষাপ্রীতি সম্বন্ধে আমাদের যতটা আন্তরিক হবার কথা ছিল, তার কিছুই হয়ে ওঠেনি। এ দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই







































