• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের মতো করে বাঁচতে শিখুন 


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০৯:৪৩ পিএম
নিজের মতো করে বাঁচতে শিখুন 

ঢাকা: আমাদের জীবনে চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ, কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এতে রয়েছে হতাশা, চড়াই-উৎরাই ও বাধা-বিপত্তি। জীবনে খারাপ সময় আসতেই পারে। ভুলে গেলে চলবে না রাতের পরেই দিন আসে। প্রয়োজন ধৈর্য ও নিজেকে ভালোবাসা। আমরা যখনই কোনো কাজে ব্যর্থ হই, তখনই মনে করি আমার পক্ষে মনে হয় আর কোনো কিছু করা সম্ভব হয়ে উঠবেনা। এখানেই মনে হয় আমার জীবন শেষ।

কখনও কি ভেবে দেখেছেন, আপনার আশপাশে থাকা অসংখ্য বিকলাঙ্গ মানুষ বা গরীব, অসহায়, দিনমজুর জীবনের প্রতিকূলতার মাঝে থেকেও খুশি মনে কীভাবে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে? অথচ আপনি সামান্য কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আত্মহত্যার কথা ভাবছেন!

আত্মহত্যা মানেই সবকিছুর সমাধান নয় বরং জীবন যুদ্ধে হার মেনে নেয়া। আত্মহত্যা কখনোই কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মানুষেরাও প্রতিদিন শ্বাস নিতে লড়াই করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। আপনি হাজারো চেষ্টা করেও অন্যকারোর মতো হতে পারবেন না। তাই সবচেয়ে ভালো, নিজের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করা। সবাইতো আসলে নিজের মতোই। অন্য কারো মতো হওয়া যায়না এবং হওয়া উচিতও নয়। তবে অন্যসবার ভালোটুকুর ছায়া নিয়ে নিজেকে সুন্দর করে সাজাতে পারেন।

সম্প্রতি দেশে আত্মহত্যার পরিমাণ আগেকার যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়ছে বলে সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার প্রবণতার হার কমবেশি থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে, ইসলামি অনুশাসন। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জ্ঞান না থাকার কারণে এমনটা বেশি হচ্ছে।

যাদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান আছে তারা কখনও আত্মহত্যা করে না। তাছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ। কিন্তু সদ্য বিদায়ী হওয়া ২০২২ সালে সারাদেশে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ জন এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থী ১০৬ জন। 

এছাড়া বছর জুড়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ঢাকা বিভাগে। আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ২৮৫ জন এবং ছাত্র ১৬১ জন। এর মধ্যে ৫৪ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী। এ তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি বেসরকারি সংগঠন আঁচল এর জরিপে। 

সংগঠনটি সমীক্ষার তথ্য বলছে, স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মেমাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, আগস্টে ২১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ৩৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

Caption

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন।সারাদেশের মোট আট বিভাগে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগে। এরপরই চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। 

এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা করা স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ছাত্র ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। 

আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ছাত্র ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। একই পথে পা বাড়ানো শুধু কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ছাত্র ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।

গবেষকদের মতে, আত্মহননের পেছনে যে কারণগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, সেগুলো হলো, অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, সেশনজট, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, যৌন হয়রানি, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, মানসিক সমস্যা, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত, স্বামী পছন্দ না হওয়া, বাসা থেকে মোটরসাইকেল কিনে না দেয়া ইত্যাদি। আরো রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বিষণ্নতা, আর্থিক সমস্যার মতো বিষয়ও।

মনো বিজ্ঞানীরা আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিষণ্নতা এবং মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন যে সামাজিক কারণগুলো হতাশা এবং মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী। সুতরাং সামাজিক কারণ গুলো বেশির ভাগক্ষেত্রেই আত্মহত্যা সংঘটনের জন্য দায়ী। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে বিশেষ করে পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় করতে হবে আর পরিবারে প্রত্যেকের সাথে গুণগত সময় কাটাতে হবে।

মূল কথা হচ্ছে সমস্যা পুষে রাখলে বিষণ্ণতায় পরিণত হবে। একসময় আপনি আত্মহননের দিকে এগিয়ে যাবেন। তাই আসুন, নিজের জীবনকে উপভোগ করি। নিজে সচেতন হই, অপরকেও সচেতন হতে সাহায্য করি। প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেই।

লেখক: সাংবাদিক মিজানুর রহমান

সোনালীনিউজ/এআর

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!