• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা কমিটি পুনর্গঠন : ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে ব


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২০, ২০১৬, ১২:৩৪ পিএম
জেলা কমিটি পুনর্গঠন : ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে ব

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

নানামুখী চেষ্টা চালিয়েও তৃণমূল পর্যায়ে জেলা কমিটিগুলোর পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে পারছে না বিএনপি। এমনকি ওই পরিস্থিতি নিরসনে দলের কেন্দ্র থেকেও জোরালো কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে জাতীয় কাউন্সিলের পরও বিএনপির তৃণমূলে বিরাজ করছে বেহাল দশা। এ অবস্থায় বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ ক্রমাগত বাড়ছে। বিএনপি সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিগত ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। আর তার ৭ মাস আগে থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে দলের পুনর্গঠন কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিল শেষ করার পরও বিএনপি সারা দেশের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশ জেলা কমিটি পুনর্গঠন করতে পারেনি। এমনকি সংশ্লিষ্ট জেলার সকল ইউনিট কমিটিও পুনর্গঠন করতে পারেনি।

পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটগুলো থেকে মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করলেও বিএনপি হাইকমান্ড থেকে কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিলের পর এখন পর্যন্ত বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্র থেকে গত বছরের ৯ আগস্ট চিঠি দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিএনপির ৭৫ সাংগঠনিক জেলা ও প্রতিটি জেলার বিভিন্ন ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন করতে বলা হয়। তার মাসখানেক পর ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করার আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকে বেগম জিয়া বার বার দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই মিলে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজে সহযোগিতা করবেন। তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ হলে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে। সিনিয়র নেতারাও তখন খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি দেশে ফেরার আগেই ৭৫ সাংগঠনিক জেলা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা হবে।

কিন্তু খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে গিয়ে ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দু’মাস অবস্থান করে ২১ নভেম্বর দেশে ফেরার পরও তা করতে না পারায় তোপের মুখে পড়েন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তবে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া যেসব এলাকায় কমিটি পুনর্গঠন হয়নি সেসব এলাকা থেকে মনোনীত প্রতিনিধিদের কাউন্সিলর করার সিদ্ধান্ত নেন।

ইতিপূর্বে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের আগেও ৬ মাস চেষ্টা করে সর্বস্তরে কমিটি করতে পারেনি বিএনপি। পরে কেন্দ্র থেকে কাউন্সিলর ঠিক করে দিয়ে তাদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করা হয়। এবারও জাতীয় কাউন্সিলের আগে দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় কমিটি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। তবে যেসব এলাকায় এখনো কমিটি পুনর্গঠন হয়নি তা কবে নাগাদ হবে তা দলের কেউ বলতে পারছেন না।

সূত্র আরো জানায়, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর এখনো কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুটিকয়েক নেতা ছাড়া আর কেউ পদ না পাওয়ায় দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই হতাশ। ফলে বিএনপির আগের কমিটির কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ তদারকি করলেও এখন আর তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। ফলে তৃণমূল নেতারাও কোনো দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে দলীয় কর্মকাণ্ড।

এর ফলে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বিএনপি সারাদেশের সকল জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচী দিলেও অধিকাংশ এলাকায়ই তা পালন করা হয়নি। তাতে সারাদেশে বিএনপির দৈন্যতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে।

ওই পরিস্থিতিতে গতবছর ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচী পালনের পর নাশকতার মামলায় জড়িয়ে জেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অনেকেই পেরেশানির মধ্যে পড়েছে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন করতে খালেদা জিয়া গত নভেম্বর মাসে আরো সময় বাড়ান।

কিন্তু যখন গত ডিসেম্বরের মধ্যেও তৃণমূলে কমিটি পুনর্গঠনে তেমন অগ্রগতি হয়নি তখন চলতি বছর মার্চ মাসে জাতীয় কাউন্সিলের টার্গেট করে তৃণমূল নেতাদের কমিটি পুনর্গঠন কাউন্সিলের এক মাস আগে শেষ করতে বলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও অধিকাংশ এলাকায় তা শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়েই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয়।

তবে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের আগে নানা কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনে একটি গতি ছিল। সে কারণেই কিছু কিছু এলাকায় দল পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তৃণমূল নেতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া এবারের জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার এক পদ করায় অনেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ নিশ্চিত হওয়ার আগে তৃণমূলের পদ হারাতে চান না।

এ প্রসঙ্গে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বিএনপি হাইকমান্ডের তাগিদ সত্ত্বেও অনেক নেতাই দল পুনর্গঠনের ব্যাপারেও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কারণ কমিটি পুনর্গঠনের পর যদি তাদের তৃণমূলে পদ রাখেন তাহলে কেন্দ্রে পদ পাবেন না। আর আগেই তৃণমূলের পদ ছেড়ে দিলে পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পেলে দলে নিজের অবস্থান থাকবে না। এ কারণে জেলা কমিটি পুনর্গঠনে অনেক নেতাই ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। এতে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্রমাগত হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!