ফাইল ছবি
ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই দফায় ২৭২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এতে করে শরিক দলগুলো ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করে ‘ক্ষুব্ধ’ শরিকদের বাগে আনা কিংবা আসন সমঝোতা বা আসন বণ্টন ইস্যুর সুরাহা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
এর অংশ হিসেবে বুধবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দুই জোটের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে বিএনপির তরফে জোটের ‘বিজয়ী হতে পারার মতো নেতাদের’ আসন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এরই মধ্যে যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, শরিকদের জন্য সেগুলোর দু-একটিতে পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলটি বলেছে, কৌশলগত কারণে মিত্রদের যাদের আসন ছাড়া সম্ভব হবে না, ক্ষমতায় গেলে তাদের সংসদের উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়নের মাধ্যমে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে গত ১০ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম এবং একটি ইসলামী দলসহ মোট ২৯টি দল বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—আসন সমঝোতা ইস্যুতে মিত্রদের নিয়ে কী ভাবছে, সেটা স্পষ্টভাবে বিএনপির কাছে জানতে চাওয়া হবে। তারপর তারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। এমন অবস্থায় ১৩ ডিসেম্বর যুগপতের শরিকদের নিয়ে একত্রে বৈঠক করে বিএনপি। সেখানে আসন নিয়ে মিত্ররা তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে অবিলম্বে বিষয়টি সুরাহার তাগিদ দেন। শরিকদের এমন ক্ষোভ ও তাগিদের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর শরিকদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকের মাধ্যমে আসন সমঝোতার বিষয়ে সুরাহার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি।
সে অনুযায়ী বুধবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রথমে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং পরে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। উভয় বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। সমমনা জোটের বৈঠকে জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণদলের গোলাম মওলা চৌধুরী, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির এসএম শাহাদাত, এনডিপির আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বৈঠকে জোট নেতারা বলেছেন, তারা বিএনপির সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন, এখনো বিএনপির সঙ্গে রয়েছেন, আগামীতেও থাকবেন। নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে তারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। এ সময় নির্বাচনে বিজয়ী হলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে তারা বলেন, বিএনপির সেই জাতীয় সরকারে আমরা থাকতে চাই।
তবে একই সঙ্গে নড়াইল-২ আসনটি জোটপ্রধান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের জন্য পুনর্বিবেচনা করতে বিএনপির প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে জোরালো অনুরোধ জানান জোট নেতারা। তারা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি ওই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আসনটি (নড়াইল-২) পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না, সেটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বিএনপি।
পরে গতকাল বিকেলে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়। বৈঠকে জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির (জাফর) আহসান হাবিব লিংকন ও কাজী মো. নজরুল, জমিয়তের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুর রকিব ও মাওলানা আব্দুল করিম, ন্যাশনাল লেবার পার্টির লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাসেম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, পিএনপির ফিরোজ মো. লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জোটের এক নেতা বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে ডানপন্থিদের উত্থান হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্য হচ্ছে। আশা করি, এ অবস্থায় জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার স্বার্থে বিএনপি ছাড় দেবে।
জানা গেছে, বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে শরিকদের জন্য জোরালোভাবে চারটি আসন চাওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা কুষ্টিয়া-২, কিশোরগঞ্জ-৫ ও যশোর-৫ আসন। এ ছাড়া ফাঁকা থাকা পিরোজপুর-১ আসনটি জোটপ্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের জন্য দাবি করা হয়। এর আগে জোটের পক্ষ থেকে পাঁচটি আসন চাওয়া হলেও শাহাদাত হোসেন সেলিম এরই মধ্যে বিএনপিতে যোগদান করেছেন।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে বলা হয়, আপনারা আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রাখুন; ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে আপনাদের দাবির বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ বিবেচনা করার চেষ্টা করব।
পিএস







































