• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যর্থ মন্ত্রীদের সরিয়ে দেয়ার দাবি আ.লীগের ভেতরে-বাইরে


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৭, ২০১৯, ১১:২৭ এএম
ব্যর্থ মন্ত্রীদের সরিয়ে দেয়ার দাবি আ.লীগের ভেতরে-বাইরে

ঢাকা : সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে।  এই অভিযোগ যে বিরোধী পক্ষ থেকে উঠেছে তা নয়।  ক্ষমতাসীর আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য ও দলীয় ফোরামের বিভিন্ন আলোচনায় এই মন্ত্রীদের  দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ নিয়ে সমালোচনা উঠে আসছে।  পেঁয়াজ, রোহিঙ্গা ইস্যু, ডেঙ্গু, রেল দুর্ঘটনাসহ সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন এই চার মন্ত্রীর নাম।  আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন যে, প্রবীণ ও অভিজ্ঞ মন্ত্রীদের বাদ রেখে নতুন এসব মন্ত্রীদের দায়িত্ব দেওয়া ভুল হয়েছে।  এসব ব্যর্থ মন্ত্রীর কারণে আওয়ামী লীগ চাপের মুখে পড়েছে। এমনকি গত ১১ বছরের ক্ষমতায় থেকে এর আগে এমন চাপে কখনো পড়েনি সরকার।  তাই দলের ভেতরে-বাইরে প্রকাশ্যেই এখন অনেকে তাদের অপসারণের দাবি জানাচ্ছেন।   

এই মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালনে কতটা যোগ্য সেই প্রশ্ন উঠছে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরের একটি মহল।  অনেকেই মনে করছেন তারা মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম ভালোভাবে বুঝতে পারছেন না এবং তাদের ব্যর্থতার কারণেই পরিস্থিতি সরকারের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যে চারজন মন্ত্রীর ব্যর্থতায় সরকার বিপদে পড়েছে, তাঁরা হলেন

রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশির বাণিজ্যমন্ত্রী।   গত তিনমাস ধরেই পেঁয়াজের বাজারে আগুন জ্বলছে এবং পেঁয়াজের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।  সরকারের উপর চরমভাবে বিরক্ত তারা। বিশেষ করে এখন যখন টিসিবি খোলা বাজারে স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, সেই পেঁয়াজের জন্য মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সরকার তীব্র সমালোচনা ও জনরোষের মুখে পড়ছে পেঁয়াজের জন্য। মনে করা হচ্ছে যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই পেঁয়াজ সংকট মোকাবেলায় যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে- বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, পেঁয়াজের কতো মজুদ এবং কতো চাহিদা রয়েছে- সে ব্যাপারে সামঞ্জস্য বিধান করতে না পারা, যখন পেঁয়াজের সংকট দেখা দিলো তখন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়া।

জনগণ, সরকারি দল, বিরোধী দল মনে করছে চলমান পেঁয়াজ সংকটে বাণিজ্যমন্ত্রী তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি যখন পেঁয়াজ সংকট চলছে, তখন তিনি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেছেন। এটা নিয়েও দলে এবং দলের বাইরে তাকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড়-২ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে ব্যর্থ মন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন।  একের পর এক রেল দুর্ঘটনা ঘটছে।  যেগুলোকে স্বাভাবিক বলার কোন উপায় নেই।  যদিও এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু এই তদন্ত কমিটিগুলো কি প্রতিবেদন দিচ্ছে, কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এই নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো সরকারি বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রেলযাত্রা এখন সাধারণ মানুষের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। রেলের ব্যাপারে জনগণের কাছে আস্থাহীনতা বেড়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন. জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এবং সর্বোপরী একজন বৈশ্বিক যোগাযোগ সম্পন্ন ব্যক্তি অধ্যাপক ড. একে আব্দুল মোমেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা কূটনৈতিক মহলের কাছে স্পষ্ট। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে কিছু সংখ্যক বাঙালিকে আটক এবং তাদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, সারা ভারতজুড়ে বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করার জন্য নাগরিকপঞ্জী করার ঘোষণা এবং বিজেপির অনেক নেতারা যখন বলছেন যে বাংলাদেশি যারা অনুপ্রবেশকারী রয়েছে, তাদের ভারতে থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে- এই অবস্থায় দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে একটি নাজুক অবস্থার তৈরি হয়েছে। এটা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নিয়ে পুশইনের এই ঘটনা গণমাধ্যমে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী। একজন মন্ত্রী হিসেবে যেটা তাঁর চরম ব্যর্থতা।

গত মেয়াদে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় উঠেছিল, এখন তাতে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়াও মিয়ানমার ইস্যুতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করছে তা নিয়ে জনমনে নানারকম প্রশ্ন রয়েছে।

সবচেয়ে বড় মানবিক বিষয় হলো সৌদি আরব থেকে যে একের পর এক নারী কর্মীদেরকে নির্যাতন-নিপীড়ন করে দেশে পাঠানো হচ্ছে, তাদের ব্যাপারেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়টি মোকাবেলা করছে না বলেও কূটনৈতিক মহল মনে করছে। এর ফলে অনেকেই মনে করছেন যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিষয়গুলোর গভীরে যেতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং বিষয়গুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন না। তার লাগামহীন বক্তব্যে জন অসন্তোষ বাড়ছে।

কৃষক পরিবারের সন্তান খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার নওগাঁ-১ (নেয়ামতপুর-পোরশ-সাপাহার) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।  পেঁয়াজের পরে চালের বাজারও এখন অস্থির হয়ে উঠছে। চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীকে নিয়েও অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। তার একের পর এক বক্তৃতা, বিবৃতি জনমনে বিরক্তির উদ্রেক করছে। মনে করা হচ্ছে যে, পেঁয়াজের পর যদি চালের দাম লাগামহীন হয়ে যায়, তাহলে মানুষের অস্বস্তি চরম অসন্তোষের পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আর এই সুযোগটাই নেবে বিরোধী পক্ষ।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরই এখন প্রশ্ন যে, ব্যর্থ মন্ত্রীদের দায় এখন কে নেবে? এই দায় কি আওয়ামী লীগ নেবে নাকি সরকার নেবে? অবশ্য আওয়ামী লীগের তিন বছরের মন্ত্রিসভার বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যখন কোনো মন্ত্রী সমস্যায় পড়েন বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তখনই তাকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো নজির নেই। বরং সেই মন্ত্রীকে সাহায্য সহযোগিতা করার দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রী অনুসরণ করেন। সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এই মন্ত্রীরা থাকবেন? নাকি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে? সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই মনে করেন যে, এই ব্যর্থ মন্ত্রীদের সরিয়ে দিয়ে যোগ্যদের দায়িত্ব দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের একটি বড় অংশ এইরকম চিন্তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন না। বরং তারা মনে করছে, সরকারের বিরুদ্ধে যে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেটাকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। কোনো মন্ত্রীকে বাদ দিলে সমস্যার সমাধান হবে না।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!