• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

হজ ফ্লাইট : এবারও সিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৯, ২০১৬, ০২:২৬ পিএম
হজ ফ্লাইট : এবারও সিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চলতি বছর হজ ফ্লাইটের সিডিউল তৈরিতে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে। এবার প্রায় ৫৫ লাখ হজযাত্রী বিমান পরিবহন করবে। অথচ বর্তমানে বিমানের বহরে আন্তর্জাতিক রুটে পরিচালনার জন্য মাত্র ১০টি উড়োজাহাজ রয়েছে। তারমধ্যে মিসর থেকে ভাড়ায় আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এয়ারক্রাফট মাসের ১৫ দিন বিকল থাকছে। 

এই দুটি উড়োজাহাজ ৪টি ইঞ্জিনের দুটি ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি দুটি ইঞ্জিন দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জাহাজ দুটি চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি উড়োজাহাজের দরজা ভেঙে গেছে। আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ওই দুটি এয়ারবাস-৩১০-এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। মেয়াদ শেষে জাহাজ দুটি বিমানের বহর থেকে বাদ দেয়া হবে।

এই অবস্থায় হজ চলাকালীন বহরে থাকবে মাত্র ৮টি উড়োজাহাজ। কিন্তু এই অবস্থা জেনেও বিমান কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত হজের জন্য কোনো উড়োজাহাজ ভাড়া করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বিমানের নিয়মিত সিডিউল ঠিক রেখে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে কমপক্ষে ২টি ওয়াইড বডির উড়োজাহাজ ভাড়া করতে হবে। এই ধরনের একটি প্রস্তাবনা বিমান ম্যানেজমেন্টকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু বিমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এখন পর্ষন্ত উড়োজাহাজ ভাড়ার কোনো খবর জানে না। বিমান সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। ওই হিসাবে আগস্ট মাস থেকেই হজযাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে বাকি আছে মাত্র ৩ মাস। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিমানের ইতিহাসে মাত্র ৩ মাসে কোনোভাবেই উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে চলতি বছর বিমানের একটি পক্ষ হজের জন্য কোনো উড়োজাহাজ ভাড়া না নিয়ে নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট করতে আগ্রহী। 

সে অনুযায়ী একটি ছক তৈরি করে ম্যানেজমেন্টকে দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে হিসাব অনুযায়ী হজের জন্য কোনো উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়া না হলে তিন মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ৩১৫টি ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হবে। তখন ১ লাখ ৬ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে না।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিমান সপ্তাহে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ১৫২টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। 

বিমানের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে যাতে হজ চলাকালীন একটি এয়ারবাস-৩১০ বহর থেকে বাদ না দিয়ে রেখে দেয়ার জন্য। সেজন্য ওই এয়ারবাসটিকে রেশনিং করে চালানো হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী একটি এয়ারবাস প্রতিদিন গড়ে ১৩ ঘণ্টা ব্লক আওয়ার (উড্ডয়ন ঘণ্টা) উড়তে পারে। কিন্তু এখন রেশনিং করে প্রতিদিন মাত্র ৬ ঘণ্টা করে চালানো হচ্ছে। যাতে ওই এয়ারবাসটি হজ শেষ হওয়া পর্ষন্ত বহরে থাকতে পারে।

যদিও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বিমানকে জানিয়ে দিয়েছে রেশনিং করে মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। যদি এয়ারবাস প্রস্তুতকারী কোম্পানি দায়িত্ব নিয়ে লিখিতভাবে আরো দুই মাস পরিচালনার মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয় তাহলেই কেবল তারা অনুমতি (এনওসি) দেবে। যদিও বিমানের পক্ষ থেকে এয়ারবাস কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।

অবশ্য বিমানের পরিকল্পনা বিভাগের মতে, যদি একটি এয়ারবাস-৩১০ রেখে দেয়া সম্ভব হয় তাহলে হজের জন্য উড়োজাহাজ লিজ না নিলে সেক্ষেত্রে সপ্তাহে ১২০ থেকে ১২৫টি ফ্লাইট করা সম্ভব হবে। তাতে সপ্তাহে ৩০টি ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হবে। তাতে সপ্তাহে ১১ হাজারের মতো যাত্রী নেয়া সম্ভব হবে না।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ গড়ে ১২ দশমিক ৬৭ ঘণ্টা আকাশে উড়ছে। যদি কোনো উড়োজাহাজ লিজ নেয়া সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে গড়ে ১৬ দশমিক ৬৭ ঘণ্টা (ব্লক আওয়ার) আকাশে উড়াতে হবে বোয়িং ৭৭৭কে। যা কোনোভাবে বিমানের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাছাড়া একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ বর্তমানে ১১ দশমিক  ৩৩ ঘণ্টা আকাশে উড়ছে।

যদি হজের জন্য উড়োজাহাজ লিজ নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে ওই জাহাজকে ১২ দশমিক  ৯৮ ঘণ্টা আকাশে উড়াতে হবে। তাও বিমানের পক্ষে সম্ভব হবে না। দুটি ইঞ্জিন না থাকায় ওই দুটি উড়োজাহাজ এখনই মাসের অধিকাংশ সময় অচল থাকছে। তাছাড়া বোয়িং ৭৩৭ বর্তমানে আকাশে উড়ছে  ৮ দশমিক ৮২ ঘণ্টা। যদি লিজ না নেয়া হয় তাহলে বাধ্য হয়ে বোয়িং ৭৩৭ দুটিকেও ১১ দশমিক ৯৯ ঘণ্টা উড়াতে হবে।

আর দুটি এয়ারবাসকে  বর্তমানে রেশনিং করে গড়ে ৬ দশমিক ৮৮ ঘণ্টা  উড়ানো হচ্ছে। যদি উড়োজাহাজ একটি বহরে থাকে এবং লিজ নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে এয়ারবাসকে গড়ে ১১ দশমিক ৮৩ ঘণ্টা উড়াতে হবে। বিমানের মতো একটি এয়ারলাইন্সের পক্ষে এভাবে শর্ত মেনে কোনো উড়োজাহাজ চালানো সম্ভব হবে না। তাতে বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হতে পারে এ বছরের হজ ফ্লাইট।

এ প্রসঙ্গে বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল এনামুল বারী জানান, বিমানের উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে নানা ধরনের কেলেংকারির অভিযোগ আছে। তাই লিজের বিষয়ে ধীরে আগানো হচ্ছে। কারণ হজ খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এ নিয়ে কোনো ধরনের গাফিলতি করা যাবে না।

আর বিমানের বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলো দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে গেলে নিয়মিত সিডিউলে বিপর্যয় হবে। ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হবে। তাছাড়া উড়োজাহাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে কোনো সময় টেকনিক্যাল সমস্যা হতে পারে। অচল হয়ে যেতে পারে। যদি হজ চলাকালীন সে ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে তা সামাল দেয়া দুষ্কর হবে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা
 

Wordbridge School
Link copied!