• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির আত্মবিশ্বাসের পারদ এখন উপরের দিকে


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ১৪, ২০১৭, ০২:৫৩ পিএম
বিএনপির আত্মবিশ্বাসের পারদ এখন উপরের দিকে

ঢাকা : বিএনপির সাম্প্রতিক সক্রিয় কর্মকাণ্ডে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেছে। শুধু তাই নয়, দলটির বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। এসব কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের পারদ ক্রমেই উপরের দিকে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত মাসে লন্ডন থেকে ফিরে আসার দিন থেকে দলটির রাজনীতিতে এ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। দুটি বড় ধরনের শোডাউনের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা এখন বেশ উদ্দীপ্ত।

খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরে যে জনস্রোত দেখা গেছে, তাতে দলটির বিশাল সমর্থকগোষ্ঠীও আশাবাদী হয়ে উঠেছে। শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন বার্তা। কূটনৈতিক সংযোগ বাড়িয়ে তাদের মাধ্যমে ফোকাস করা হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে।

এদিকে, বিএনপি-প্রধান প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দী দিচ্ছেন। ওই জবানবন্দিতে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বদলে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রসঙ্গও তুলে আনছেন তিনি। ১৯ মাস পর রোববার (১২ নভেম্বর) তিনি বড় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন।

লন্ডন থেকে প্রায় তিন মাস পর গত মাসের শেষ দিকে দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলীয় প্রধান দেশে ফিরে বিশ্রাম না নিয়েই তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো মোকাবেলায় আইনি লড়াই যেমন চালিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি রাজনৈতিক তৎপরতাও শুরু করেছেন সমানতালে।

গত ২২ দিনে বিএনপিকেও ভিন্ন চেহারায় দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের স্পেস পেয়ে দলটি মাঠে নেমেছে। নেত্রীর দেশে ফেরার দিন বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এর এক সপ্তাহ পর কক্সবাজারমুখী খালেদা জিয়ার চার দিনের সফরে পথে পথে জনস্রোত নেতাকর্মীদের মধ্যে জাগরণ তৈরি করে।

খালেদা জিয়া যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই নেতাকর্মীরা দলবেঁধে সমবেত হচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে তার আদালতে হাজিরা দেয়ার পথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। পুলিশের কড়াকড়িও আমলে নিচ্ছেন না তারা।

তবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের নতুন আর কোনো ফর্মুলা না দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতেই সোচ্চার হচ্ছে বিএনপি। দলটি বছরখানেক ধরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার যে পরিকল্পনা করে আসছিল, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রেক্ষাপটে সেই রূপরেখা তুলে ধরার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা তারা দেখছে না।

দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, নতুন কোনো ফর্মুলা দিয়ে তা আদায়ে কোনো প্রান্তিক অবস্থানে তারা চলে যেতে চান না। তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা-সমঝোতার ওপরই মূলত গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেটি নিশ্চিত না হলে দলীয় সরকারের অধীনে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষপাতী নয় দলটি।

ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর্যবেক্ষণে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। ইসির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকায় বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মতামত দেয়া হয়েছে ওই রায়ে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারই আমাদের দাবি। এ ক্ষেত্রে নতুন করে আর কোনো ফর্মুলার দরকার নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত রোববারের সমাবেশ থেকে সেটিই স্পষ্ট করেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এর আগে ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী-নির্বাচনকালীন কোনো সরকারের ব্যবস্থা নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসনের কক্সবাজার সফরে ব্যাপক জনসমাগমের পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা এখন বেশ চাঙ্গা। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে জনগণকে সাথে নিয়েই নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবি আদায় করতে চায় দলটি। এ কারণে শিগগিরই ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার আরো কয়েকটি সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণের চিন্তাভাবনা রয়েছে।

২০১৪ ও ১৫ সালে দুই দফা আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের তেমন কোনো সুযোগ পায়নি। প্রতিটি সভা-সমাবেশ ছিল বিধিনিষেধে মোড়া। এমনকি ঘরোয়া কর্মসূচিতেও বাধা এসেছে।

সর্বশেষ গত মাসে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরে ব্যাপক জনসমাগম হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ পেয়েছেন। এরপর রোববার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর সমাবেশে লাখো জনতার ঢল নামায় কর্মীরা আরো চাঙ্গা হয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি জেগে উঠেছে।

জানা গেছে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আমলে নিয়ে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় নামতে পারেন খালেদা জিয়া। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সড়কপথে সফর করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাই এর মূল লক্ষ্য।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!