• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবার মুখর হয়ে উঠবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৭, ২০১৮, ০৭:০৯ পিএম
আবার মুখর হয়ে উঠবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

ঢাকা: আবারো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সভা-সমাবেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বহু ঘটনার সাক্ষী এই স্থান। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে মুখর থাকবে ময়দানটি। 

উদ্যানটি আগে রমনা রেসকোর্স ময়দান, রমনা জিমখানা হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামেই পরিচিত। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত করার পর এ ময়দানেই নাগরিক সংবর্ধনা দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এখানেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ 

ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে রমনা রেসকোর্স ময়দানের নাম ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’ রাখা হয়। ১৮২৫ সালে ব্রিটিশ কালেক্টর ডয়েস এখানকার জঙ্গল পরিষ্কার করে নাম দেন রমনা গ্রিন। ব্রিটিশরা রমনায় রেসকোর্স বা ঘোড়দৌড়ের মাঠও করেন। পরবর্তী সময়ে নবাবরা আরো সুন্দর বাগান করে নাম দেন ‘শাহবাগ’ বা রাজকীয় বাগান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর ঢাকার মুফতি দীন মুহম্মদ এক মাহফিল থেকে ঘৌড়দৌড়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে ঘৌড়দৌড় বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে নানা কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ময়দানে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়, তিনি ৭ মার্চের ঐহিতাসিক ভাষণ দেন এখানে, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও আত্মসমর্পণ করে এই ময়দানে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে স্বাধীন বাংলাদেশে তার প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন এখানেই। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ আরেক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বক্তব্য দেন। ৭ মার্চের ভাষণ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরের স্থানটি সংরক্ষিত করে রাখতে ১৯৯৬ সালে শিখা চিরন্তন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা চিরন্তন উদ্বোধন করেন। 

পরবর্তী কয়েক বছর রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ হলেও কিছুদিন বন্ধ ছিল উন্নয়ন কাজের জন্য। সেই কাজ শেষে খুলে দেওয়া হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশও শুরু হয়। ২০১১ সালের অক্টোবরে পল্টন ময়দান ও মুক্তাঙ্গনে মিছিল-সমাবেশ বন্ধ করার পর রাজধানীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পরিণত হয় সভা-সমাবেশের একমাত্র স্থান। আজ ৭ মার্চ সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনসভা ডেকেছে। বিএনপি ১২ মার্চ এবং জাতীয় পার্টি ২৪ মার্চ সমাবেশ করতে চায় সেখানে। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই উদ্যান। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু এই ময়দান থেকেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনে করেন, রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশ করার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এক সময় পল্টন ময়দান, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মুক্তাঙ্গনের মতো জায়গায় সমাবেশ করা গেলেও এখন যায় না। যে কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই এখন সভা-সমাবেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বিএনপি আগামী ১২ মার্চ চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই জনসভা করতে চায়। 

সোনালীনিউজ/জেএ 

Wordbridge School
Link copied!