• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা নিয়ে ভোটার বানানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৫, ২০১৮, ০২:১৭ পিএম
টাকা নিয়ে ভোটার বানানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের

ঢাকা : নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভুয়া ভোটার ঠেকাতে তৎপর হলেও রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সরকারের নীতি উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে অবৈধ এ কাজটি করছেন।

অন্যদিকে, কোনো জনপ্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে ভোটার হতে সহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। বাংলাদেশি কেউ বাবা-মা সেজে ভুয়া পরিচয় দিলে বা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করলেও একই বিধান।

অভিযোগ আছে, বিশেষ এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জাল জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করে এবং ভুয়া বাবা-মা সাজিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভোটার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধিও রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন; হালনাগাদ কাজে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের চাপও দিচ্ছেন তারা।

গত বছর হালনাগাদ ভোটার তালিকা কর্মসূচির সময় এ কাজে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যুক্ত করা হয়। দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজের সুবিধার্থে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের সংযুক্ত করে কমিশন।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে ঢুকে পড়ছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট ৩০ উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকও করেছে ইসি।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পূর্ব গোমাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান সম্প্রতি দুজন রোহিঙ্গাকে টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারিতে নেয় নির্বাচন কমিশন।

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, টাকার বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভুয়া সনদ দিচ্ছেন, এমন গুরুতর অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন শুরুতেই নানা পদক্ষেপ নেয়। পরে জনপ্রতিনিধিদের এ অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইসি। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের আরো সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানায়।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে না পারে, সেজন্য ‘কঠোর নির্দেশনা’ দেওয়া হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলো চিহ্নিতকরণ, বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা করে বাড়তি নজরদারি এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে বিশেষ কমিটি গঠন করেও ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকানো যায়নি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার পর ধীরে ধীরে গোপনীয় এ বিষয়গুলো সামনে আসছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়াসহ ফৌজদারি মামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে চট্টগ্রাম ও আশপাশের চার জেলার ৩০টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে ইসি। সেসব এলাকায় ভোটার তালিকাভুক্তি যাচাই-বাছাইয়ে বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এমনকি ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনদের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়। পরে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার চেষ্টার তথ্য পাওয়ার পর বিশেষ এলাকার সংখ্যা বাড়িয়ে ৩২টি উপজেলা করা হয়। রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে বিশেষ কমিটির কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্তু কমিশন এত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি অর্থের প্রলোভনে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্তরা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন।

সর্বশেষ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কক্সবাজার সদর উপজেলার পূর্ব গোমাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান দুই রোহিঙ্গাকে অর্থের বিনিময়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। কমিশনের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। পরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে মামলার সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলে ফিরতি চিঠিতে কমিশনের সঙ্গে একমত হয় তারাও। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।

ইসির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে কমিশন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। কোনো কর্মকর্তা কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার না করার বিষয়ে কমিশন নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত অনেকে অর্থের প্রলোভনে পড়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শামসুর রহমান নামে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসির একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাতে যেকোনো ধরনের সহায়তা করলেই আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা করা হবে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির ৩০ উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে ইসির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কিছু অসাধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার অভিযোগ করেছেন প্রশাসন, পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!