• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বছরেও আলোচিত রুবেল হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়নি


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০, ০১:২২ পিএম
তিন বছরেও আলোচিত রুবেল হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়নি

গোপালগঞ্জ: তিন বছর পার হলেও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সালিনাবক্স গ্রামের আলোচিত দিনমজুর রুবেল সরদার (২৮) হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়নি। ফলে নিহতের স্বজনদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন নিহতের স্বজনরা। এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে হত্যাকান্ডের মূল হোতারা। 

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তাদের নিজ দলীয় লোকজন পরিকল্পিতভাবে রুবেলকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চেষ্টা করছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মুকসুদপুর উপজেলার দাসেরহাট মা ফিলিং ষ্টেশনের কাছে চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়ে নিখোঁজ হয় দিনমজুর রুবেল সরদার। পরের দিন বিকালে বাড়ির অদূরে একটি মেহগনি গাছের বাগানে রুবেলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে নিহতের স্বজনরা খবর পেয়ে এসে লাশ শনাক্ত করেন এবং বিষয়টি মুকসুদপুর থানা পুলিশকে জানায় তারা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনায় নিহত রুবেলের বাবা কওছার সরদার বাদী হয়ে দুইদিন পরে ২১ জনকে আসামী করে মুকসুদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পাঁচ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে আসামীরা। বাকী আসামীরাও উচ্চ আদালতের জামিনে আছেন।

মামলার সাক্ষীদের কথাবার্তা ও আচারণে মামলার বাদী কওছার সরদার ধারণা করেন-মামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা তার ছেলেকে হত্যা করেনি। এ অবস্থায় মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। 

এদিকে, ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে নিহত রুবেলের বাবা কওছার সরদার বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ্য করে গোপালগঞ্জ আদালতে পুনরায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমান সাময়িক স্থগিতাবস্থায় আছে।

রুবেল হত্যাকান্ডের বিষয়ে সালিনাবক্স গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার আধিপত্য নিয়ে পারুল বেগম ও আবুল খায়ের ওরফে সোহরাফ গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। রুবেল খুনের কয়েক মাস আগেও দু’গ্রুপের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 
এরআগে দু’গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। নিরীহ রুবেল সরদারকে খুন করে ‘বলির পাঠা’ বানিয়ে এলাকার একটি মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। কিন্তু এলাকার সাধারণ জনগণের অভিযোগের তীর একটি ব্যক্তির দিকে। কিন্তু ওই মহলটি অর্থবিত্ত ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মামলাটিকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। হত্যা মামলার আসামী হয়েও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। 

সরেজমিনে নিহত রুবেল সরদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান হারিয়ে দিশেহারা রুবেলের বাবা কওছার সরদার। তার শরীরের দুটি কিডনী অকেজো হয়ে গেছে। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় নিজ বাড়িতে জীর্ণ একটি ঘরে চৌকিতে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। পাশে নিহত রুবেলের তিনটি শিশু সন্তান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। 

সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত রুবেলের বৃদ্ধ বাবা কওছার সরদার। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘এলাকার আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দকে কেন্দ্র করে শিক্ষক আবুল খায়ের সোহরাফ বিশ্বাসের লোকেরা আমার ছেলে রুবেলকে খুন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আমাকে দিয়ে মামলা করায়। ঘটনার পর সোহরাফের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি বাড়িতে গরু-ছাগল, টিভি-ফ্রিজ ও আসবাবপত্র লুটপাট করানো হয়। মামলা চালানোর সব খরচ আমাকে সোহরাফ দেয়। কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি আসামীরা আমার ছেলেকে হত্যা করেনি। আমি আদালতে একটি নারাজি পিটিশন দেই এবং পুনরায় আদালতে একটি মামলা করেছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। তিন বছর ধরে ছেলে হত্যার বিচারের অপেক্ষায় আছি। আজও বিচার পাইনি। আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে আমি মরতে চাই।

নিহত রুবেলের প্রতিবেশি মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী সরদার বলেন, ‘শিক্ষক আবুল খায়ের সোহরাফের নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটেছে। সোহরাফ তার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। নিরীহ রুবেলকে বলির পাঠা বানিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে একটি মহল। আমরা গ্রামবাসী রুবেল হত্যার সুষ্ঠু বিচারের আশায় আছি। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচার কাজ শেষ হয়নি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। 

আবুল খায়ের সোহরাব বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি। গ্রাম্য দলাদলিকে কেন্দ্র করে একটি মহল আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’ তবে সরকারি চাকরি করে এলাকায় গ্রাম্য রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়া যায় কি না?-এমন প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি। 

গোপালগঞ্জ সিআইডির এএসপি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে। মামলার তদন্ত একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বাদী পুনরায় আরেকটি মামলা করায় তদন্তের ধারাবাহিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। যার কারণে প্রতিবেদন দাখিল করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে এসে পৌছেছে। এক দু’মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। 

সোনালীনিউজ/এইচবি/এসআই

Wordbridge School
Link copied!