• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রার্থীর ভিড়ে গোলকধাঁধায় ভোটাররা

দৃষ্টি সবার ৯ ডিসেম্বরে


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২, ২০১৮, ০১:৪৯ পিএম
দৃষ্টি সবার ৯ ডিসেম্বরে

ঢাকা : ভোটের মাত্র ২৮ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনের প্রার্থীই চূড়ান্ত হয়নি। ৩ হাজার ৫৬ জন প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এতে দেখা গেছে, যাকে দল থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চূড়ান্ত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে তিনি যেমন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, যাকে দল থেকে প্রার্থী করা হয়নি তিনিও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দলের প্রার্থী না হলেও ঠিকই স্বতন্ত্র হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

এর ফলে সকালে একজন প্রার্থী ফেসবুকে ছবি দিয়ে বলছেন, ‘আমি নৌকা প্রতীকে মহাজোটের কিংবা ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যফ্রন্টের অথবা লাঙ্গল প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দিয়েছি।’ এক দলের একাধিক প্রার্থী নিয়ে গোলকধাঁধায় পড়েছেন ভোটাররা।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গড়ে ১০টি করে মনোনয়ন জমা পড়েছে প্রতি আসনে। বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর ভিড়ে আসনভেদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের মূল প্রার্থী কে সেটির সুরাহা হয়নি এখনো। প্রার্থী ঠিক না হওয়ায় অনেকেই প্রকাশ্যে এসেও আসছে না। কোথায় যেন ঘুড়ির সুতো আটকে আছে। তবে বহু প্রার্থী বলেছেন, ৯ ডিসেম্বরের আগে মূল প্রার্থীর নাম জানা যাবে না। কারণ ওইদিন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। নির্বাচনী বিধিনিষেধের কারণে এখন প্রচারণার সুযোগ না থাকায় তারা নীরব রয়েছেন। ১০ ডিসেম্বর থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবেন, তখন সবকিছু সরব হয়ে যাবে।  

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩০৫৬ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৯৮ জন, যাদের বেশিরভাগই আসলে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সারা দেশে প্রায় ২০ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছেন। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে।

আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা সরে না দাঁড়ালে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি জোটের মনোনীত অনেক প্রার্থীকেই দলীয় প্রতিপক্ষের পাশাপাশি নিজ দলের নেতার বিরুদ্ধেও নির্বাচনী লড়াই করতে হবে। তবে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আর দলীয় প্রতীক পাওয়ার সুযোগ নেই। শুধু দলীয় প্রত্যয়নপত্র পাওয়া বা নির্বাচন কমিশনে জোটের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে। আর প্রতীক বা দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা থেকে গেলে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে দলগুলোর মধ্যে। আর সে কারণেই বিষয়টি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন।

তবে প্রার্থী চূড়ান্তকরণে আওয়ামী লীগ খানিকটা এগিয়ে থাকলেও নির্বাচনী আসনগুলোতে বিএনপির প্রার্থী কে- তা চূড়ান্ত না হওয়ায় নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়েছে দলটি। ফলে ভোটের মাঠেই নিজেরাই একটি অসম পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বিএনপি। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যেসব নির্বাচনী এলাকায় আগের নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে সেসব জায়গায় খুব একটা সমস্যা হবে না। যেখানে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সেখানে সমস্যা হতে পারে। এত অল্প সময়ের মধ্যে আগের নেতৃত্বকে ম্যানেজ করে মাঠ তৈরি করা কঠিন হবে। তিনি মনে করেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে এটা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল-২ আসনে বিএনপিদলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ৩ জনকে। এদের মধ্যে সংস্কারপন্থি নেতা সৈয়দ শহীদুল হক জামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু দলীয় মনোনয়ন দাখিলের জন্য যাননি। উভয়েই প্রতিনিধি পাঠিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মনোনয়নপত্রই দাখিল করেননি। শহীদুল হক জামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু এখনো নির্বাচনী এলাকায় যাননি।

শহীদুল হক জামাল জানান, চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়েই মাঠে যেতে চাই। মৌলভীবাজার-৪ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য চিঠি পেয়েছেন হাজী মুজিব এবং তার ছেলে। একই আসনে গণফোরাম থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চিঠি পেয়েছেন মৌলভীবাজারের প্রবীণ আইনজীবী অ্যাড. শান্তিপদ ঘোষ। এভাবে প্রায় সব আসনেই বিএনপির প্রার্থীদের ঢল নেমেছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের বাইরে রয়েছে বিএনপি। প্রায় ১২ বছর ধরে বিরোধী দলে অবস্থান করায় নানা মামলায় দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন আটকে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। কৌশলগত কারণে এ মনোনয়ন যৌক্তিক মনে হলেও এ নিয়ে দলের মধ্যে শুরু হয়েছে সংশয়-সন্দেহ। চূড়ান্তভাবে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিয়ে সৃষ্ট সংশয় ও সন্দেহ থেকেই কেউ মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের সংগঠিত করা কিংবা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে যাননি। সব মিলিয়ে বিএনপি প্রায় ৮০০ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে দলটি।

জানতে চাইলে হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসন থেকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে গণফোরামের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৯ ডিসেম্বরের পর প্রচারণা শুরু করব।

কুষ্টিয়া-৪ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি আবদুর রউফ এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। গত পাঁচ বছরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার কারণে তার কপাল পুড়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা। আবদুর রউফ মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা নাখোশ হলেও খুশি দুই উপজেলার অনেক শীর্ষ নেতাকর্মী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রউফ।

এ ছাড়া কুষ্টিয়া-১ আসনেও বর্তমান এমপি ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একইভাবে হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে না পেরে সেখানকার নারী সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম তার এই প্রার্থিতাকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ সামনে এসেছে। দলের হাইকমান্ডের কঠোর হুশিয়ারির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মকাণ্ডের ওপর তীক্ষ নজর রাখছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

দলীয় সূত্র জানায়, যারা দলের টিকেট পেয়েছেন তারাও বিদ্রোহীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। দল থেকেও বলা হয়েছে বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষে কাজ করার।

এদিকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তারা নিজেদের বিদ্রোহী হিসেবে প্রকাশ করতে নারাজ। তারা বলছেন, ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার তাদের আছে। দলের নীতিনির্ধারকদের প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনারও দাবি জানিয়েছেন তারা। ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। সুতরাং এর আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি বিদ্রোহীদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!