• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির বিভাজন ঠেকাতে জোবাইদাকে নেতৃত্বে চান তৃণমূল নেতারা


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৭, ২০১৯, ১২:৩৫ পিএম
বিএনপির বিভাজন ঠেকাতে জোবাইদাকে নেতৃত্বে  চান তৃণমূল নেতারা

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দীর্ঘদিন দলটির সিনিয়র নেতারা ঐক্যবদ্ধ থাকলেও দলের নেতৃত্ব এবং সংস্কার নিয়ে তাদের মধ্যে স্পষ্টতই ফাটল বাড়ছে। মনোবল ভেঙে পড়া তৃণমূল নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে ইতিমধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।

দলের ভেতরের খবর অনুযায়ী বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য নেতৃত্বে পরিবর্তন চান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর রাজনীতিতে ফিরে আসতে দলীয় মহাসচিব পদে পরিবর্তনের কথাও আলোচনা চলছে। আর সেটা হতে পারে কাউন্সিলের মাধ্যমে।

তবে অধিকাংশ নীতিনির্ধারকরা খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কাউন্সিল আয়োজনে অনিচ্ছুক। তাদের মতে, এই মুহূর্তে দলের প্রধান কাজ হলো খালেদা জিয়াকে কীভাবে কারাগার থেকে মুক্ত করা যায় তার পথ খুঁজে বের করা। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কীভবে পুনরায় সংগঠিত করা যায় সেদিকেও নজর দেয়া।

এদিকে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে থাকা এবং ২০ দলীয় জোটে জামায়াতকে রাখা নিয়েও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দলের তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে এবং মনোবল ভেঙে পড়া নেতা-কর্মীদের জাগিয়ে তুলতে ডা. জোবাইদা রহমানের দলের দায়িত্ব নেয়া উচিৎ।

বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটি প্রতি তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করে। কিন্তু অতীতে কাউন্সিল আয়োজনে বার বার দলটি নিয়ম ভঙ্গ করেছে। বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপার্সন, তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ার‌ম্যান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব নির্বাচিত হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমেদসহ কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা মহাসচিবসহ অন্য কয়েকটি পদে পরিবর্তন চান। তিনি বলেন, তবে অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এখনো ফখরুলের সাথে আছেন।

বিএনপি নেতা বলেন, মোশাররফ ও মওদুদের নেতৃত্বাধীন বিএনপির একটি গ্রুপ ঐক্যফ্রন্টের সাথে সময় নষ্ট না করে সরকারের বিপক্ষে ব্যাপক গণআন্দোলনের জন্য দলকে প্রস্তুত করার পক্ষে। তারা ঐক্যফ্রন্টকে নয়, বিএনপিকেই মূল কেন্দ্রে রেখে এগিয়ে যেতে চান।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু মির্জা ফখরুল ও অন্যান্য সিনিয়র নেতারা মনে করেন বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য তাদের কাজ করা উচিত।’

এছাড়া তিনি আরও বলেন, মোশাররফ ও মওদুদ ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে থাকার ব্যাপারে আগ্রহী নন, তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ড. আবদুল মঈন খানের পরিবর্তে দলটি তাদের সেখানে রাখতে চায়।

গত ১৮ জানুয়ারি মওদুদ আহমেদ এবং মোশাররফ হোসেন কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিলে প্রথমবারের মতো বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ভাঙনের বিষয়টি বের হয়ে আসে।

এদিকে বৃহস্পতিবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিএনপিকে দুর্বল করতে এবং দলটিকে ভাঙতে অনেক চক্রান্ত চলছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের সংস্কার নিয়ে কথা বলেছি। তবে দলে অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল নেই। এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’

বিএনপিকে ভাঙতে চক্রান্ত চলছে মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহাসচিব সরকারের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দলের কোনো নেতার প্রতি নয়। তবে তাদের কাউন্সিল কখন অনুষ্ঠিত হবে জানতে চাইলে মওদুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, দলকে পুনঃসংগঠিত করতে যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিল আয়োজন করতে পদক্ষেপ নেবে বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি দলের শক্তি বৃদ্ধিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে তরুণ নেতাদের নেতৃত্বে আনা উচিত।’ তবে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব  নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মাহবুব।

মোহাম্মদপুর ইউনিট বিএনপির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইউসূফ বলেন, চেয়ারপার্সন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

‘আমি মনে করি বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং তৃণমূল পর্যায়ের ভেঙে পড়া নেতা-কর্মীদের জাগিয়ে তুলতে ডা. জোবাইদা রহমানের দলের দায়িত্ব নেয়া উচিত। তিনি খুবই দক্ষ ও সুশিক্ষিত এবং ১/১১’র রাজনৈতিক সময়ে আমি তাকে যেভাবে দেখেছি তাতে বর্তমান পরিস্থিতি তিনি মোকাবেলা করতে পারবেন,’ যোগ করেন তিনি।

ইউসূফের মতামতকে সমর্থন দিয়ে ঢাকা সিটি ইউনিট বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে দলকে শক্তিশালী করতে এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত হবে জোবাইদাকে দায়িত্ব দেয়া।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!