• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড় ভাইয়ের নির্দেশে আবরারকে মুখে কাপড় দিয়ে মারা হয়


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৬, ২০১৯, ০৯:৩৭ পিএম
বড় ভাইয়ের নির্দেশে আবরারকে মুখে কাপড় দিয়ে মারা হয়

ঢাকা: বুয়েট আবরার ফাহাদ রাব্বীকে তার রুম থেকে ডেকে আনার নির্দেশ দেন বুয়েটের পাঁচ ছাত্রলীগ নেতা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবরারকে যখন তার রুম থেকে ডেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নেয়া হয় তখন আমার সঙ্গে ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন ছিল। আমাদের নির্যাতনের কারণেই আবরারের মৃত্যু হয়।

নির্দেশ দেয়া তারা হলেন- মো. মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, মনিরুজ্জামান মনির, মোজাহিদুল রহমান ও ইফতি মোশাররফ সকাল।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এএসএম নাজমুস সাদাত রিমান্ড শুনানিকালে এসব তথ্য দেন। 

শুনানি শেষে সাদাতের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদেও একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন সাদাত।

এদিকে, আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান এ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, গেল ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে শেরে বাংলা হলের তার রুম (নম্বর ১০১১) থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়। ৭ অক্টোবর রাত আড়াইটা পর্যন্ত ওই হলের ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর রুমে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্টাম্প ও লাঠিসোটা এবং রশি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্মম নির্যাতন চালায়। 

এতে ঘটনাস্থলেই আবরার মারা যায়। পরে আসামিরা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে আবরারের মৃতদেহ ফেলে রাখে। কিছু ছাত্র আবরারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তদন্তকালে সাক্ষ্য-প্রমাণে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামি নাজমুস সাদাতের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আসামি নাজমুস সাদাতের নাম প্রকাশ করেছে ইতিপূর্বে আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি দেয়া আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন। মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। এজন্য আসামিদের ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত জরুরি। মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, এজাহারভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে আসামিকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন। বিকাল ৩টার দিকে নাজমুস সাদাতকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তাকে হাতকড়া পরিয়ে এজলাসের ডকে রাখা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীসহ কয়েক সাংবাদিক আসামির সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় নাজমুস সাদাত বলেন, আমি আবরারকে ডেকে নিয়ে আসি। কয়েকজন বড়ভাই আমাদের ডেকে আনতে বলেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাদাত বলেন, মারধরের এক পর্যায়ে আবরার পানি খেতে চায়। বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে এজলাসে বিচারক এলে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েদ উদ্দিন খান হিরণ আসামির রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন।

শুনানিতে তিনি আরো বলেন, এ মামলায় ছয় আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। ওই ছয় জনই এ আসামির নাম বলেছে। আসামিরা আবরারকে মুখে কাপড় দিয়ে মেরেছে। পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। সঠিক সময়ে ডাক্তারও দেখায়নি। এমনকি পুলিশও ঢুকতে দেয়নি আসামিরা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসমির সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।

এদিকে, আদালতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী না থাকায় বিচারক সাদাতের কাছে তার কিছু বলার আছে কিনা তা জানতে চান। জবাবে সাদাত আদালতকে বলেন, আমি আবরারকে মারিনি। আমি বড়ভাইদের কথায় আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে আসি।

পরে এ পর্যায়ে বিচারক আসামির কাছে জানতে চান, ‘বড়ভাই’ কারা? জবাবে সাদাত বলেন, অনিক, সকাল, মুজাহিদ, রবিন ও মনির। ওরাই আবরারকে মেরেছে। আমি রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থেকে চলে আসি। এরপর কী হয়েছে তা আমি জানি না।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!