• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
আওয়ামী লীগের টানা ১১ বছর

রেকর্ড প্রবৃদ্ধিতে দুর্বলতাও অনেক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০২:১২ পিএম
রেকর্ড প্রবৃদ্ধিতে দুর্বলতাও অনেক

ঢাকা : আওয়ামী লীগ সরকারে আছে টানা ১১ বছর। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় এত লম্বা সময় আর কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল না বাংলাদেশে। আর টানা সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় থেকে রেকর্ড গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন এই দিনে। সে হিসাবে সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি আজ মঙ্গলবার। আর বর্তমান সরকারের টানা ১১ বছর।

বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা ১১ বছরের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এটি একেবারে কম সময় নয়। আর্থিক খাতে অর্জনও আছে অনেক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা উদাহরণ দেওয়া যাবে। তবে ব্যাংকসহ কিছু খাতে অবনতি ঠেকানো যাচ্ছে না। এখানে ব্যাপক সংস্কার হাতে নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া অর্থনীতিতে টেকসই প্রবৃদ্ধি আসবে না।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে গত বছরের এই দিনে শপথ নেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেক। তবে আর্থিক খাতে বড় কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেননি গত এক বছরে। খুব বেশি বাস্তবায়নও নেই প্রতিশ্রুতির। তবে ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না। এসব বিষয় নিয়ে জানতে কয়েক দফা মুস্তফা কামালকে গতকাল ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তার দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, আগামীকাল অর্থনৈতিক চিত্র নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন তিনি। তার আগে আলাদাভাবে কথা বলবেন না মুস্তফা কামাল।

জানতে চাইলে সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের আর্থিক খাতে যে পরিস্থিতি চলছিল আগে থেকে সেগুলোতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সুশাসনের ঘাটতি, ঋণখেলাপি এগুলো দীর্ঘদিনের সমস্যা। তবে অর্থমন্ত্রী স্বল্পমেয়াদি কিছু সমাধান নিয়েছেন। তবে এভাবে টেকসই উন্নয়ন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার। সেদিকে অর্থমন্ত্রীর কোনো উদ্যোগ দেখছি না। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের কোনো সময়ই দীর্ঘ পরিকল্পনা দেখেনি।

গত ১১ বছরে বাজেটের আকার সাড়ে আটগুণ বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে বাজেট ঘোষণা করা হয় তার আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মাঝে কখনই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে যায়নি। সব মিলিয়ে শেষ হওয়া এই দশকের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। এমনকি বিশ্বের কম দেশেই এই হারে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে। দেশের প্রবৃদ্ধি দীর্ঘদিন ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে ছিল। বিদায়ী দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা আটকে ছিল ৬ শতাংশের মধ্যে। সেখান থেকে গেল ৭ শতাংশে। আর শেষ বছরে এসে তা হয়েছে ৮ শতাংশের বেশি।

প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৮২৫ ডলার। আর এখন সেই মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার। অবশ্য আয় বাড়লেও বৈষম্য বাড়ছে। আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ আয়ের দেশ হয়েছে এ দশকেই।

২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের তালিকায় নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। মূলত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক এই তালিকা করে থাকে। শুরু থেকে বাংলাদেশ ছিল নিম্নআয়ের দেশ। এখন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হওয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে আর্থিক খাতে। এ খাতে সুশাসনের অভাব ছিল প্রকট। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি দিয়ে শুরু, এরপর বেসিক ব্যাংক। আরো ছিল বিসমিল্লাহ গ্রুপ, অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপ কেলেঙ্কারি। আর সর্বশেষ ফারমার্স ব্যাংকের ঘটনা।

২০১০ সালেও দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। আর এখন সেই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে রাজনৈতিক কারণে একবার বড় ১৩ ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। আবার শেষ বছরটিতে সুবিধা দেওয়া নতুন মাত্রা পেয়েছে। সব ধরনের ঋণখেলাপিদের দেওয়া হয়েছে আরো বেশি। মাত্র ২ শতাংশ কিস্তিতে তারা এখন ঋণ নবায়ন করতে পারবেন। এ সময়ে ঋণখেলাপিরা যত বেশি সুবিধা পেয়েছে, খেলাপি ঋণ ততই বেড়েছে।

ঘটনাটি ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ চুরির সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে বাংলাদেশ ব্যাংকে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১০ কোটি টাকা) চুরি হয়। এখন পর্যন্ত চুরির অর্থের বড় অংশ ফেরত পাওয়া যায়নি।

তবে কর আদায়ে বড় অগ্রগতি করা যায়নি গত ১১ বছরে। যদিও কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ছিল প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। আর সর্বশেষ অর্থবছরে আদায় হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। তবে যে কথা বলা হয় না তা হচ্ছে এখনো কর-জিডিপির অনুপাত হিসাবে তা বিশ্বের সর্বনিম্ন। এখন তা ১০ দশমিক ২ শতাংশ বলা হয়। বাংলাদেশের এই হার প্রতিবেশী দেশ নেপালের অর্ধেকের চেয়ে কম।

শেয়ারবাজারের কথা এলে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও অনেক ক্ষেত্রে অস্বস্তিতে পড়েন। আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে শেয়ারবাজার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপও নিয়েছে। তবে এক বছর শেষে বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্নেষণে দেখা যাচ্ছে, শেয়ারবাজারের অবস্থা আরো দুর্বল হয়েছে। গত এক দশকে সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে শেয়ারবাজারের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!