• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থগিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে আওয়ামী লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ১৭, ২০১৯, ০৭:৩৫ পিএম
স্থগিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে আওয়ামী লীগ

ঢাকা : মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিরোধ, বন্যা মোকাবেলা ও বন্যা-পরবর্তী কার্যক্রম, গুজব ও সামাজিক অস্থিরতা দূরীকরণে গুরুত্ব আরোপ করায় সাংগঠনিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি থমকে থাকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। শোকাবহ ও রক্তঝরা আগস্টে বন্ধ থাকে দলের নিয়মিত কর্মসূচিগুলো। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফের পূর্ণোদ্যমে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।

দলীয় কর্মসূচিগুলোর সফল বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নানা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে। একই সঙ্গে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নির্দেশও দেওয়া হবে বলে জানায় ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র।

দলীয় সূত্রমতে, বন্যা ও ডেঙ্গু মোকাবেলার কারণে আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহ, গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ‘নৌকাবিরোধীদের’ বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কেন্দ্রীয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের তৃণমূলের কমিটি গঠন কার্যক্রম থেমে থাকে। এসব কার্যক্রম শুরু করতে শিগগিরই দল থেকে নির্দেশ দেওয়া হবে।

এ ছাড়া আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা।
ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি তাতে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ আরো প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ও ডেঙ্গু মোকাবেলার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ায় আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে গত কয়েক মাস ধরে চলমান কার্যক্রমও জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে গতি হারায়।  

সম্মেলন প্রস্তুতি ছেড়ে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা মোকাবেলা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলন হবে কি না, এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন সংশয় প্রকাশ করছেন।

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে বলে মনে করেন শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকে। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও নির্ধারিত সময়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেন

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হওয়ায় ও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর ফলে সম্মেলনের প্রস্তুতি কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও তা কঠোর শ্রমের মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে কার্যক্রমে গতি আনতে চায় আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় সম্মেলন করার পক্ষে দল।

সরকারি দলের শীর্ষ কয়েক নেতার দেওয়া তথ্যমতে, নানা পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা থাকলেও দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম জুলাই মাসে শুরু হয়নি। গত ২১ জুলাই থেকে নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা থাকলেও বন্যা পরিস্থিতির কারণে ওই কার্যক্রম পিছিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

দলের প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে তখন আলাদা আলাদা প্রতিনিধিদল গঠিত হয়। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে নিয়ে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সহায়তা করা হয় বন্যাদুর্গতদের।

সূত্র জানায়, রাজনীতির মাঠে বেশ নির্ভার থাকলেও বন্যা ও ডেঙ্গুর মতো দুর্যোগ আওয়ামী লীগকে খানিকটা চাপে ফেলে। এরই মধ্যে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নির্মাণাধীন স্বপ্নের পদ্মা সেতু জোড়া লাগাতে এক লাখ মানুষের কথিত কাটা মাথা লাগার গুজব ক্ষমতাসীনদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে।

প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি রাজনীতির মাঠে না থাকলেও ডেঙ্গু, বন্যা ও গুজব নিয়ে সামাজিক অসন্তোষ যেন দেখা দিতে না পারে, সেজন্য দলীয় কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রেখে জনগণকে দ্রুত দুর্ভোগমুক্ত করতে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবেও আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।

দলীয় কোনো ব্যর্থতার সুযোগ যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা নিতে না পারেন, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নেন ক্ষমতাসীনরা। ফলে দলীয় কার্যক্রমের বদলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেশি গুরুত্ব দেন জনগণের পাশে দাঁড়ানোর মতো কর্মসূচিগুলোতে। বন্যা মোকাবেলা ও গুজব বিভ্রান্তি দূর করার কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ সফল বলে মনে করে শীর্ষ নেতৃত্ব।

সূত্রমতে, চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করা, এর আগের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও তৃণমূলের নতুন কমিটি নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিশেষ প্রস্তুতিও নেয়।

তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে দলের প্রধান শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করে দেন। তৃণমূল কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনেক জেলায় বর্ধিত সভাও শেষ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে বন্যা ও ডেঙ্গুর কারণে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠনের কার্যক্রমে ছেদ পড়ে। আক্রান্ত মানুষের পাশে থাকতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে।

অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা না মানায় অভিযুক্ত অন্তত ২০০ নেতাকে গত ২৮ জুলাই থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ। বন্যার্তদের পাশে দলের নেতাকর্মীদের দাঁড়ানো ও তাদের সহায়তার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দল অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গুরুত্ব দেয়।

চলতি বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘বিদ্রোহ প্রার্থী’ হওয়া অনেকে জয়ীও হন। তাদের মধ্যে অনেকের এলাকা বন্যার কবলে থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়েও তখন দলের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়নি। তবে শিগগিরই তাদের চিঠি পাঠানো হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!