• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৯ সালের ‘অর্থনৈতিক বিস্ময়’ বাংলাদেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৬, ২০২০, ০৪:২৫ পিএম
২০১৯ সালের ‘অর্থনৈতিক বিস্ময়’ বাংলাদেশ

ঢাকা : সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে লিঙ্গবৈষম্য হ্রাস; সব ক্ষেত্রে দ্রুত অসমতা দূর করে চলছে এমন কোনো দেশ যদি থেকে থাকে তবে সেটা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে ফরচুনইন্ডিয়ায় এভাবেই একটি প্রবন্ধ লিখেছেন ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক এবং ‘ফরচুনইন্ডিয়া’র এডিটর-অ্যাট-লার্জ হিন্দোল সেনগুপ্ত।

‘বাংলাদেশ: দ্য ইকোনমিক মিরাকল অব দ্য ইয়ার’ (বাংলাদেশ: বছরের ‘অর্থনৈতিক বিস্ময়’) শীর্ষক ওই প্রবন্ধটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। প্রবন্ধটিতে বলা হয়েছে, যদি এশিয়ায় ২০২০ সালে দ্রুতবর্ধনশীল কোনো অর্থনীতি আপনি বেছে নিতে চান, তবে কোন দেশটির কথা বলবেন?

নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে আপনি বাংলাদেশের কথাই ভাববেন, যার প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে ৮ শতাংশ হবে বলে আভাস দেওয়া হচ্ছে, হয়তো সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ তা অর্জন করেও ফেলবে। এমনটি হলে বাংলাদেশ হবে এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি। এই দেশের অর্থনীতি এখন ভারতের চেয়েও দ্রুতগতির। এ ক্ষেত্রে দেশটির প্রধানতম শক্তি কর্মক্ষম নারী। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকেই পেছনে ফেলেছে।

২০১৯ সালের বিদায়লগ্নে বাংলাদেশ নামের সঙ্গে যখন এ সাফল্যের মাইলফলক যুক্ত হচ্ছে, তখন স্বভাবতই জানার আগ্রহ আসে, দেশটি কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমত দেশটির প্রাথমিক শিক্ষা খাতে কম অথচ স্থায়ী ও ফলপ্রসূ বিনিয়োগের কথা বলা যায়। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই বিনিয়োগের বড় অর্থই যাচ্ছে মেয়ে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার পেছনে। উন্নয়নমুখী সাফল্যের যদি কোনো মন্ত্র থাকে, তবে সেটা হওয়া উচিত, মেয়েদের শিক্ষিত করো।

উন্নয়নের জন্য সহায়তা ও বিনা সুদে ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা অর্জনের বিরল নজির দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যার অর্থ বাংলাদেশে ছেলে ও মেয়ে শিশু প্রায় সমানুপাতিক হারে প্রাথমিক শিক্ষা পাচ্ছে। এর মাধ্যমে বহু নারী জনশক্তি হিসেবে প্রবেশ করতে পারছে উৎপাদন খাতে। তার ফল দেখা যায় পোশাক খাতে। সেখানে জনশক্তির ৮০ শতাংশই নারী।

২০১৪ সালে রাচায়েল হিথ ও মুশফিক মোবারকের ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ’ পেপারে বলা হয়, মেয়েদের পড়ানোর সঙ্গে তাদের কারখানায় (বিশেষ করে পোশাক খাতে) চাকরি পাওয়ার বিষয়টি স্পষ্টত সম্পৃক্ত। দারুণ ব্যাপার এই যে, উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি অল্পবয়সী মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এবং বড় হওয়া মেয়েদের কাজে পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের প্রবণতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছে। এ দুটি বিষয়ই বাল্যবিয়ে ও অল্প বয়সে সন্তান জন্মদান রোধে ভূমিকা রাখছে।

ওই পেপারে বলা হয়, চার দশকে নারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে পোশাকশিল্প বড় ভূমিকা রাখছে। ১৯৮৩ সালে যেখানে প্রতি নারীতে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০০৯ সালে সে হার এসে পড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশে (বৈশ্বিক উন্নয়ন সূচক)।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মেয়েদের বিয়ের বয়স যেখানে গড়ে ছিল ১৪ দশমিক ৬ বছর, সেখানে ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ গড় বয়স হয়েছে ১৭ বছর (জনতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা)। উপরন্তু স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা আনতে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) কর্মসূচির বেধে দেওয়া যে সময়সীমা ছিল, তার আগেই বাংলাদেশ তা অর্জন করে ফেলেছে। মজার বিষয় হলো, যেসব গ্রামে পোশাক কারখানার অবস্থান হেঁটে যাওয়ার দূরত্বে, সেসব গ্রামে স্কুলে ভর্তির হার বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

’৭০-এর দশকে স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প যাত্রা করলেও এটি এখন বৈশ্বিক বাজারের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী, অঙ্কে ৩০ বিলিয়ন ডলার আকারের। বাংলাদেশের সেবা খাত যেমন এগিয়ে চলছে, তেমনি ক্ষুদ্র-অর্থনীতি ও ডিজিটাল খাত সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে।

কার্যকর প্রাথমিক শিক্ষা, বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে (জনশক্তি হিসেবে) এক করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফল দিচ্ছে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ থেমে গেছে এবং এটা পড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর হার ৬০ শতাংশ কমে গেছে ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে।

একসময় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে থাকা বাংলাদেশ এখন বাড়তি বিদ্যুৎ-উৎপাদক দেশে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি ও সেবাপণ্য রপ্তানি করছে। এই খাতে অগ্রগতি এত ঈর্ষণীয় যে, ২০২১ সালে রপ্তানির আকার বর্তমান আকারের চেয়ে পাঁচগুণ হয়ে যাবে মনে করা হচ্ছে।

বেশ কিছু আভাস অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তকমা ঝেড়ে এগিয়ে যাবে। আর যখন এটা অর্জিত হবে, নিঃসন্দেহে তা দেশটির জন্য হবে বড় মাইলফলক।

বাংলাদেশের এই ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পেছনে যেটি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা। দেশকে অস্থিতিশীল করতে মৌলবাদী চক্র অপচেষ্টা চালিয়ে গেলেও তাদের প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা এবং দৃঢ় প্রত্যয় বাংলাদেশের উন্নত রাষ্ট্র হয়ে ওঠার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আগামী পাঁচ বছরে নিশ্চয় বাংলাদেশের সে স্বপ্ন ধরা দেবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!