• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের অভাবে উৎপাদনহীন বিপুলসংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২২, ২০১৬, ০৬:৩৩ পিএম
গ্যাসের অভাবে উৎপাদনহীন বিপুলসংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠ

বিশেষ প্রতিনিধি

গ্যাসের অভাবে হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে যেতে পারছে না। সরকারের কাছে আবেদন করেও ২ সহস্রাধিক শিল্পোদ্যোক্তা গ্যাস সংযোগ পায়নি। যদিও প্রায় দু’বছর বন্ধ থাকার পর গতবছরের আগস্টে সরকার শিল্প খাতে পুনরায় গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু করে। সরকারের এ উদ্যোগে উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন উদ্যম ফিরে আসে। বাড়তে থাকে গ্যাস সংযোগ চেয়ে আবেদন। কিন্তু আবেদন করেও গ্যাস সংযোগ পায়নি বিপুলসংখ্যক উদ্যোক্তা। ফলে শিল্প স্থাপন করেও উৎপাদন শুরু করতে পারছেন না তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ নীতিমালা,  সংযোগের বর্তমান পরিস্থিতি ও অনিষ্পন্ন আবেদনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে দেখা যায় আবেদন করেও ২ হাজার ২২৩ জন শিল্পোদ্যোক্তা এখনো গ্যাস সংযোগ পাননি। ওসব প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৮৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে সবচেয়ে বেশি অনিষ্পন্ন আবেদন পড়ে আছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে। ওই বিতরণ সংস্থার কাছে আবেদন করেও গ্যাস সংযোগ পাননি ১ হাজার ৮১০ জন উদ্যোক্তা। আর ওসব প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৬৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। তাছাড়া কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অনিষ্পন্ন আবেদন পড়ে আছে ২৬টি। ওসব আবেদনের বিপরীতে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে পড়ে আছে ২৬২টি আবেদন। ওসব আবেদনকারীর চাহিদা দৈনিক ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা ৪০ এবং গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ১৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট। আর পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস সংযোগ কোম্পানির কাছে অনিষ্পন্ন আবেদন পড়ে আছে ৮৫টি, যার বিপরীতে গ্যাসের চাহিদা ৬ মিলিয়ন ঘনফুট।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আনুমানিক ৫ হাজার ৯৭৩টি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ওসব প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে তীব্র গ্যাস সংকট সামাল দিতে ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে সিলেট অঞ্চল ছাড়া সারাদেশে নতুন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। তারপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পে সংযোগ দিতে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। ওই কমিটির আহ্বায়ক ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ওই কমিটি নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালে প্রায় ২০০ শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়। আর তার আগের তিন বছরে দেয়া হয় মাত্র ৪৫টি সংযোগ। তারপর নতুন গ্যাস সংযোগ আবার প্রায় ২ বছর বন্ধ থাকে। পরে ২০১৫ সালে এসে শর্তসাপেক্ষে আরো সাড়ে ৩শ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা  অপ্রতুল। গ্যাসের অভাবে বর্তমানে ২৩৩টি পোশাক কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। ওসব প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের প্রয়োজন প্রায় ১৪ কোটি ২৭ লাখ ঘনফুট। আর বস্ত্র খাতে গ্যাসের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না ২৭টি প্রতিষ্ঠান। তাছাড়াও কারখানা স্থাপন করে গ্যাসের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না একাধিক শিল্প গ্রুপ। বরং নষ্ট হচ্ছে তাদের মূলধনি যন্ত্রপাতি। পাশাপাশি বাড়ছে ব্যাংকঋণের সুদও। আবার গ্যাসের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় আগ্রহ থাকলেও নতুন শিল্প স্থাপনের সাহস করছেন না অনেকে।

সূত্র আরো জানায়, শিল্পখাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দিতে যেসব শর্ত ছিল তার মধ্যে রয়েছে নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির আবেদনকারী কোনো গ্রাহক বর্তমানে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারকারী হলে অথবা গ্যাস বিল বকেয়া থাকলে তার অনুকূলে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হবে না। গ্যাসের বাড়তি লোড পাওয়া প্রতিষ্ঠান বা নতুন সংযোগ গ্রহণকারীকে গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা গ্রহণ ও এনার্জি ইফিসিয়েন্সি ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। ওই হিসাবে প্রতিদিন গ্যাসের ঘাটতি ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর দেশে উৎপাদিত মোট গ্যাসের ৪২ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এর বাইরে ১৬ শতাংশ ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়। তাছাড়া শিল্পে ১৭, আবাসিকে ১১, সার কারখানায় ৭ ও সিএনজি উৎপাদনে ব্যবহার হয় ৬ শতাংশ গ্যাস।

এদিকে শিল্প খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, সরকারের সাথে আলোচনা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পোদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সংযোগ পেয়ে উৎপাদন শুরু করতে পারলেই উদ্যোক্তারা স্বস্তিবোধ করবেন। তার আগ পর্যন্ত দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। কারণ ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ চক্র হারে বাড়ছে।

অন্যদিকে শিল্পে গ্যাস সংযোগের বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, শিল্পে গ্যাস দেয়ার সদিচ্ছা সরকারের রয়েছে। কোথাও কোথাও দেয়াও হচ্ছে। তবে গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তাই সচেতন অবস্থান থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত না হলেও গ্যাস দেয়ার ক্ষেত্রে কো-জেনারেশন, বিকল্প জ্বালানির মতো শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!