• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঞ্চলকর মামলা তদন্তে এখন থেকে পিবিআই


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০১৬, ০৩:৪৬ পিএম
চাঞ্চলকর মামলা তদন্তে এখন থেকে পিবিআই

বিশেষ প্রতিনিধি

এখন থেকে চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে সক্রিয় থাকবে পিবিআই।  দীর্ঘ ৩ বছর পর বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যপরিধি ও কাঠামো নির্ধারণ করে বিধিমালা অনুমোদন হওয়ায় তারা এ দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের এই ইউনিটটির কাজের ধরন হবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) মতো। স্বরাষ্ট্র, আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সম্প্রতি পিবিআই বিধিমালা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তাতে পিবিআইকে ১৫ ধরনের মামলা তদন্তের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের মতোই আইন ও নীতিমালা মেনে চলবে। তাছাড়া এ ইউনিটের তদন্তাধীন মামলা অন্য সংস্থা বা ইউনিটকে দিতে হলে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) লিখিত অনুমোদন লাগবে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পিবিআইয়ের প্রশিক্ষিত সদস্যরা কর্মপরিধি ও সাংগঠনিক কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে এতদিন অলস সময় কাটিয়েছেন। এ ইউনিটের উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষতা দিয়ে বছরে ৭০ হাজার মামলার তদন্ত করার সক্ষমতা রয়েছে। এখন পিবিআই অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উন্মোচন করতে পারবে বলে পুলিশ বাহিনী সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। মূলত ২০১১ সালে চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে পিবিআই নামে পুলিশের একটি তদন্ত ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। মূল্যায়ন শেষে ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১-এর সেকশন ১২-এর ক্ষমতাবলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে পিবিআই গঠিত হয়। আর পুলিশ সদর দপ্তরের সুপারিশে ৮৬টি ক্যাডার পদসহ বিভিন্ন পদে ৯৭০ জনকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জনবল নিয়েই পিবিআইয়ের যাত্রা শুরু হয়। ইতিমধ্যে এই ইউনিটের কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর ধানমণ্ডির ভাড়া বাড়িতে চালু হয়েছে প্রধান কার্যালয়। ৭টি বিভাগে একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এবং ৩২ জেলায় একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অফিস চালু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে প্রতিবছর ৭০ হাজার মামলার তদন্ত করার সক্ষমতা পিবিআইয়ের রয়েছে। তবে বিধিমালার অভাবে এতদিন এই ইউনিটের কার্যক্রম থেমে ছিল। কিন্তু গতবছরের শেষদিকে চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে পিবিআই অন্যান্য ইউনিটকে সহায়তা করতে কাজ শুরু করে। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত বিধিমালা অনুমোদিত হওয়ায় সদস্যদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এখন ৬৪ জেলায়ই কার্যক্রম শুরু করবে ইউনিটটি। বিধিমালা অনুযায়ী থানা, জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকা অনুযায়ী পিবিআইয়ের অধিক্ষেত্র বা কর্ম-এলাকা ভাগ করা হবে। পুলিশ কমিশনার বা জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) পিবিআইয়ের তফসিলভুক্ত মামলা (১৫ ধরনের অপরাধ) তদন্তের জন্য হস্তান্তরের নির্দেশনা দেয়া হবে। তারপর কমিশনার বা এসপি অধিক্ষেত্রের পিবিআইয়ের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করবেন। পরে পিবিআইয়ের কাছ থেকে তদন্তভার হস্তান্তর করতে হলে সংশ্লিষ্ট কমিশনার বা এসপিকে আইজিপির লিখিত অনুমোদন নিতে হবে।

সূত্র আরো জানায়, বিধিমালার তফসিল অনুযায়ী পিবিআই যে ১৫ ধরনের মামলার তদন্তে করবে সেগুলো হলো- (১) খুন, (২) ডাকাতি, দস্যুতা, খুনসহ ডাকাতি, (৩) অগ্নিসংযোগ বা বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার, (৪) গাড়ি চুরি, (৫) জোরপূর্বক সম্পত্তি দখল, (৬) প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঞ্জন, (৭) ধর্ষণ, (৮) অস্ত্রসংক্রান্ত, (৯) বিস্ফোরকদ্রব্য সংক্রান্ত, (১০) কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত, (১১) মানবপাচার সংক্রান্ত, (১২) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, (১৩) চোরাচালান ও কালোবাজারি, (১৪) মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত এবং (১৫) নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা সংক্রান্ত মামলা। তাছাড়া আদালতের নির্দেশে এবং আইজিপির নির্দেশে অন্যান্য মামলার তদন্তও পিবিআই করতে পারবে। এই ইউনিটের তদন্ত কর্মকর্তা থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) মতোই আসামি গ্রেপ্তার, আটক, তল্লাশি ও আলামত জব্দ করতে পারবেন। তদন্তের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ এবং অন্যান্য তদন্তকারী ইউনিটের সাথে তথ্যের আদান-প্রদান করবেন তারা। সংঘবদ্ধ অপরাধের মামলার তদন্তে পিবিআই সদর দপ্তরের প্রতিনিধি ও তদন্তকারীদের বিশেষ টিম কাজ করবে।

এদিকে পিবিআই বিধিমালা অনুযায়ী কোনো অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলার (এফআইআর) অনুলিপি দিয়ে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পিবিআই কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। তবে ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট বা প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ ও ঘটনাস্থল সংরক্ষণ করবে থানা পুলিশ। থানার মতোই পিবিআইয়ের হাজতখানা, মালখানা ও জিজ্ঞাসাবাদের কক্ষ থাকবে। গ্রেপ্তার, পলায়ন, পুনরায় গ্রেপ্তার, সমন, ক্রোক ও তল্লাশির ক্ষেত্রে পিবিআই ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ বিধিমালা অনুসরণ করবে। মাসিক আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা বা অপরাধবিষয়ক সভায় পিবিআই প্রতিনিধি অংশ নেবেন। আর সদর দপ্তরের লিগ্যাল সেলের মাধ্যমে আইনগত বিষয়ে কাজ হবে। এ ইউনিটে এফবিআইয়ের মতোই তদন্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির সন্নিবেশন করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ফরেনসিক, কাউন্টার টেররিজম, অর্গানাইজড ক্রাইম ও সাইবার ক্রাইম বিভাগ। পিবিআইয়ের প্রশিক্ষিত দল প্রযুক্তির সহায়তায় আলামতহীন (ক্লু-লেস) মামলার রহস্য বের করতে পারবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে তারা রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যা, দিনাজপুরে মন্দিরে হামলা, ঢাকায় ইতালির নাগরিক হত্যা, বগুড়ায় মসজিদে হামলা প্রভৃতি ঘটনার তদন্তে সহায়তা করেছে। ওসব ঘটনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্যও মিলেছে।

অন্যদিকে পিবিআইয়ের বিধিমালা প্রজ্ঞাপনের ৮ নম্বর বিধির উপবিধি ১(খ) অনুযায়ী, প্রাথমিক তথ্য ও আলামত সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে থানা পুলিশকেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অথচ পিবিআইয়ের উন্নত প্রযুক্তি ও ফরেনসিক দল রয়েছে। পিবিআই শুরুতেই প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ না করলে পরে মামলার তদন্তভার নিয়ে সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আলাদাভাবে আলামত ও তথ্য সংগ্রহের জন্য পিবিআইকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ওই বিধির ১(ঘ) উপবিধিতে উল্লেখ আছে- সিআইডিতে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) ও পিবিআইয়ে একই সময়ে কোনো মামলার তদন্তের বিষয় উত্থাপিত হলে সিআইডি ওই মামলা গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এখানে সিআইডিকে পিবিআইয়ের চেয়ে গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়েছে। এটা বৈষম্যমূলক। এর সংশোধন করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে পিবিআইয়ের প্রধান উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান বলেন, আশা করছি খুব শিগগির পিবিআই কাজ শুরু করবে। বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট হিসেবে চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনই হবে পিবিআইয়ের প্রধান কাজ।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!