• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বীমা খাতে অলস টাকা: মুনাফা বঞ্চিত গ্রাহক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০১৬, ০৮:২৪ পিএম
বীমা খাতে অলস টাকা: মুনাফা বঞ্চিত গ্রাহক

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশের বীমা খাতেও অলস টাকার পাহাড় জমেছে। দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা এ অর্থ বিনিয়োগ না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহকরা। অথচ বিনিয়োগ উপযোগী এ অর্থ বীমা কোম্পানিগুলো চাইলেই বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে মুনাফা বণ্টন করতে পারে। বর্তমানে বীমা খাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতঃপূর্বে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের সময় বীমা খাতের প্রায় হাজার কোটি অলস টাকা বিনিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু নানা কারণে ও নীতিমালার অভাবে ওই টাকা আর বিনিয়োগ করা হয়নি। অথচ বীমা সংশ্লিষ্টদের মতে, বীমা খাতের অলস যে পরিমাণ টাকা পড়ে রয়েছে তা বিনিয়োগের উপযোগী। কোম্পানিগুলো চাইলেই উপযুক্ত খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর যে মুনাফা আসতো তার একটি অংশ গ্রাহকদের হিসাবে যুক্ত হতো। কিন্তু অলস পড়ে থাকায় মূলত গ্রাহকরাই মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সূত্র জানায়, বীমা খাতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালের শেষে অনিরীক্ষিত হিসাবে বীমা খাতের মোট সম্পদ ৩৩ হাজার ৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মোট লাইফ ও নন-লাইফ ফান্ড ২৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। তার মধ্যে নন-লাইফ ফান্ড ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। জীবনবীমা খাতে মোট সম্পদ ছিল ২০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। তার ওপর ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০১৩ সাল শেষে লাইফ ফান্ডে সম্ভাব্য তহবিল ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। আইন অনুযায়ী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি বছর সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হয়। সে হিসাবে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাকি তহবিল থেকে আরো ২০ শতাংশসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগসহ মোট ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। ফলে এখনো বীমা খাতে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। যদিও বীমা খাতের টাকা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টাকে বিআইএর পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতায় ৩ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি দুটি শর্ত দিয়েছিল। তার একটি ছিল সম্পদের নিরাপত্তা এবং লভ্যাংশের নিশ্চয়তা। তাহলেই বীমা খাতের অলস টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। তারপর বিনিয়োগের বিষয়টি আর বেশি দূর এগোয়নি। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতও পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে বীমা খাতের অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। তাছাড়া অনেক দেশে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও এ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে ৭৫টি বীমা কোম্পানি কর্মরত রয়েছে। তার মধ্যে জীবন বীমা ৩০টি এবং সাধারণ বীমা ৪৫টি। উভয় খাত মিলিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৪৬টি বীমা কোম্পানি। দেশের বেসরকারি জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো ২০১৪ সালের তুলনায় ২ হাজার ৮২৪ কাটি টাকা বেশি বিনিয়োগ করেছে। তারমধ্যে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে ২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। আর সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে ৭০ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়- বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ২০১৪ সালে ২২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। যা ২০১৩ সালে ছিল ১৯ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আর সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো ২০১৪ সালে বিনিয়োগ করেছে ২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। যা ২০১৩ সালে ছিল ২ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম আয় করেছে ৬ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। যা ২০১৩ সালে ছিল ৬ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। লাইফ ফান্ড ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে হয়েছে ২৫ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। তাছাড়া জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মোট সম্পদ ২০১৩ সালে ছিল ২৫ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। যা ২০১৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো ২০১৪ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ২ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। যা ২০১৩ সালে ছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। যা ২০১৩ সালে ছিল ৫ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা।

এদিকে বীমা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাহকরাই লাইফ ফান্ড বা বিনিয়োগযোগ্য অর্থের মালিক। এজন্য তাদের আমানতের নিরাপত্তা আগে বিবেচনা করেই বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাছাড়া বীমা কোম্পানিগুলোকেও এ ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে এবং মুনাফা আসবে এমন বিনিয়োগ-উপযোগী খাতও থাকতে হবে। সেজন্য অবশ্যই বিনিয়োগ-উপযোগী নীতিমালা থাকা জরুরি। পুঁজিবাজারে বীমা খাতের টাকা বিনিয়োগ করতে চাইলেও সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা যায়। প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগের সুযোগ নেই।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিআইএর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন জানান, অনুমোদনপ্রাপ্ত সিংহভাগ বীমা কোম্পানি বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। সেখানে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। পরিচালকরা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে বীমা খাতের তহবিল পুঁজিবাজারে লেনদেন করছেন। তাতে বীমা তহবিলের অর্থ নিয়মিতই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে। তাছাড়া বিনিয়োগযোগ্য পুরোটাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে তা নয়। পরিস্থিতি দেখে-শুনেই বিনিয়োগ হতে পারে।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!