• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এভাবে স্ফীত হবার কারণ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৬, ২০১৬, ০৪:২৬ পিএম
বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এভাবে স্ফীত হবার কারণ

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এভাবে স্ফীত হবার কারণ কি? বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধি পেছনে বেশ কিছু কারণ সক্রিয় রয়েছে। প্রথমত,বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে যে সব সূত্র সেগুলো বেশ চাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পণ্য ও সেবা রপ্তানি খাতে কিছুটা স্থবিরতা নেমে এলেও এই খাতটি আবারো চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে পণ্য রপ্তানি খাত। যদিও এই খাত জাতীয় অর্থনীতিতে কতটা মূল্য সংযোজন করছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তা সত্বেও পণ্য রপ্তানি খাতটি এখনো বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত জনশক্তি রপ্তানির অবস্থা বর্তমানে তেমন একটা ভালো অবস্থানে নেই ঠিকই কিন্তু গত অর্থ বছরেও এই খাত থেকে মোট ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। বিদেশে কর্মসংস্থানকারিদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামীণ জনপদ থেকে আসা। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বর্তমানে বিদেশি শ্রম বাজারে কর্মসংস্থান করছে। এতে দেশের বেকার সমস্যা যেমন কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে তেমনি তারা প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করছে। পণ্য রপ্তানি বাবদ উপার্জিত আয় এবং জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে যে অর্থ আসছে মূলত সেটাই আমাদের রিজার্ভকে স্ফীত রাখতে সহায়তা করছে।

এ ছাড়া বৈদেশিক সাহায্য ছাড়ের ক্ষেত্রেও ইদানিং কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে আরো একটি কারণ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে তা হলো,দেশের আমদানি ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়া। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ফলে আমদানি খাতে সরকারকে আগের তুলনায় অনেক কম ব্যয় করতে হচ্ছে। যদিও পরিমাণগতভাবে পণ্য ও সেবা আমদানি হ্রাস পায়নি কিন্তু মূল্য হ্রাস পাবার কারণে একই পরিমাণ পণ্যের জন্য আগের তুলনায় কম ব্যয় করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ক্যাপিটাল মেশিনারি এবং  শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল আমদানি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। অবশ্য ক্যাপিটাল ফ্লাইট বন্ধ করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আরো স্ফীত হতে পারতো। দেশ থেকে ব্যাপক হারে মুদ্রা পাচার হচ্ছে। এই পাচার কাজে বৈদেশিক মুদ্রাই ব্যবহার করা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে আরো একটি কারণ কাজ করছে,যদিও এটা মূল  বা প্রধান ফ্যাক্টর নয়। এই কারণটি হলো,বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায়শই বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা,বিশেষ করে মার্র্কিন ডলার কিনে নিচ্ছে। এটা করা হয় মূলত স্থানীয় মুদ্রার সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার জন্য।

রপ্তানিকারকগণ মাঝে মাঝেই টাকার অবমূল্যায়নের দাবি উত্থাপন করে থাকেন। টাকার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানিকারকরা কৃত্রিম ভাবে লাভবান হতে পারেন। কারণ স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানিকারকণ একই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও স্থানীয় মুদ্রায় তারা আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাবেন। যেমন,একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কোনো একজন রপ্তানিকারণ ১ মার্কিন ডলারে একটি পণ্য রপ্তানি করলেন। প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার যদি ৭৮ টাকা হয় তাহলে তিনি ১ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৭৮ টাকা পাবেন। কিন্তু স্থানীয় মুদ্রা যদি অবমূল্যায়নের কারণে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার দাঁড়ায় ৮২ টাকা তাহলে এক মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে স্থানীয় মুদ্রায় তিনি আগের তুলনায় ৪ টাকা বেশি পাবেন। গত অর্থ বছরে মোট ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। কিন্তু চলতি অর্থ বছরে রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে গ্রামীণ জনপদে ভোগ ব্যয় কিছুটা হলেও কমে গেছে। অবশ্য শহুরে জনপদে ভোগ ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলা এবং বই মেলায় ক্রেতাদের উপস্থিতি এবং বিক্রি দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছে যে,শহুরে মানুষের মাঝে ভোগ ব্যয়ের প্রবণতা বেড়েছে। অবশ্য কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন,আগে গ্রাম শহর থেকে অর্থ গ্রামে যেতো। অর্থাৎ গ্রামের মানুষকে অর্থের জন্য শহুরে মানুষের দিকে চেয়ে থাকতে হতো। আর এখন গ্রাম থেকে অর্থ শহরে আসছে। গ্রামের মানুষের অর্থ উপার্জনের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো তাহলো,প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে রেমিটেন্স প্রেরণ করে তা স্থানীয় বেনিফিসিয়ারিরা শিল্প-কারখানা স্থাপনে ব্যয় করছে না। তারা যদি এই অর্থ শিল্প-কারখানা স্থাপনে ব্যয় করতো তাহলে রিজার্ভের পরিমাণ কোনোভাবেই এতটা বৃদ্ধি পেতো না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!