• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লোকসানের মুখে দুগ্ধ কৃষক ও খামারিরা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১০, ২০১৬, ০১:২৬ পিএম
লোকসানের মুখে দুগ্ধ কৃষক ও খামারিরা

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক সময়ে দুধের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা ৬০ পয়সা কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি দুধ সংগ্রহও সপ্তাহের ৩-৪ দিন বন্ধ রাখছে। ফলে দুধ নিয়ে বিপাকে চাষি ও খামারিরা। ফলে সব মিলিয়ে দুধ উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত হাজার হাজার পরিবার পড়েছে লোকসানের মুখে। যদিও মিল্কভিটাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তা পর্যায়ে দুধের দাম কমায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাধীনতার পরই দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন কারখানা বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা স্থাপন করা হয়। এ কারখানার আওতায় ৩৫০টি দুগ্ধ সমবায় সমিতি আছে। ওসব সমিতিতে গোখামার রয়েছে ১২ হাজারেরও বেশি। ওসব সমিতি প্রতিদিন গড়ে আড়াই লাখ লিটার দুধ সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া দুটি জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গাভী পালন করা হয়। ওসব গাভী থেকে আরো প্রায় ১ লাখ থেকে সোয়া লাখ লিটার দুধ পাওয়া যায়। ওসব দুধ মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও দুগ্ধপণ্য উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা কিনে থাকেন। দুগ্ধ অঞ্চলকে টার্গেট করে প্রাণ, আকিজ, আফতাব, ব্র্যাক ফুড (আড়ং), আমো ফ্রেস মিল্ক, কোয়ালিটি, বিক্রমপুরসহ বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও দুধ সংগ্রহ করতে ওই অঞ্চলে দুগ্ধ সংগ্রহশালা স্থাপন করেছে। ফলে তরল দুধের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে কেন্দ্র করে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার জীবিকার পথ হিসেবে গাভী পালন ও দুধের ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। এজন্যই ওই অঞ্চলে হাজার হাজার গো-খামার গড়ে উঠেছে।

সূত্র জানায়, সরকারি সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে ৪ দশমিক শূন্য স্ট্যার্ন্ডাড ননিযুক্ত তরল দুধ বোনাসসহ ৪৩ টাকায় কিনে ননি উৎপাদন করে। পরে ৩ দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননিযুক্ত তরল দুধ প্যাকেটজাত করে ৫৮ টাকা দরে বিক্রি করছে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে ওই দুধ ৬২ থেকে ৬৪ টাকা লিটার বিক্রি হয়। আর প্রতি লিটার দুধ থেকে শূন্য দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননি তুলে তৈরি করা হচ্ছে ঘি। তাতে প্রতি লিটার দুধে ১৫ টাকা লাভ হচ্ছে। তাছাড়া এক লিটার দুধ থেকে ৩২ টাকার ঘি উৎপাদন হয়। সব মিলে দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার দুধে ৯০ টাকা আয় করছে। মিল্কভিটা প্রতি লিটার দুধে প্রায় ৪৭ টাকা লাভ করছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি লিটার দুধে লাভের পরিমাণ প্রায় ৫০ টাকা দাঁড়িয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, মিল্কভিটাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবসা করে লাভবান হলেও অব্যাহত লোকসাকের মুখে রয়েছে কৃষক ও খামারিরা। ইতিমধ্যে দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা এ পেশাকে অলাভজনক মনে করতে শুরু করেছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় যেখানে খামারিরা প্রতি লিটার দুধের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে, সেখানে মিল্কভিটা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার দুধের দাম ২ টাকা ৬০ পয়সা করে কমিয়ে দিয়েছে। তাতে খামারি, চাষি ও দুধ ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই ওই পেশাই ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছেন। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে দুধের দাম কমানো হয়নি। বরং কোম্পানিগুলো সংগ্রহ কমিয়ে দেয়ায় কৃষক ও খামারিদের খুচরা বাজারে পানির দরে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, শুধুমাত্র পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলেই প্রতিদিন দুধের চাহিদা রয়েছে  সাড়ে ৪ লাখ লিটার। বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন সাড়ে ৩ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। তারমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার লিটার থেকে দেড় লাখ লিটার বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা, পৌনে ২ লাখ লিটার আফতাব, আকিজ, প্রাণ, আমোফ্রেস মিল্ক, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ঘোষরা ৫০ থেকে ৫৫ হাজার লিটার, দু’শতাধিক মিষ্টির দোকান ১৫ হাজার লিটার, হাট-বাজারে স্থানীয় ক্রেতারা প্রায় ১০ হাজার লিটার দুধ ক্রয় করে থাকেন। মাসখানে আগেও যেখানে একজন দুগ্ধ ব্যবসায়ী দুধ সংগ্রহ করে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করতো, বর্তমানে ওসব প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহের পরিমাণ ও দাম কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যবসায়িদের অবিক্রিত দুধ লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে দুধ সংগ্রহ ও দাম কমানো প্রসঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের আমাইকোলা দুধ ক্রয় কেন্দ্রের ম্যানেজার সুলতান জানান, পরিবহন সমস্যার কারণে বর্তমানে দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখনো দুধের দাম তেমন কমানো হয়নি। পরিবহন সমস্যার সমাধান হলে সংগ্রহ বাড়িয়ে দেয়া হবে। অন্যদিকে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুন নাহার সুমি জানান, দুধের সংগ্রহ ও দাম কমিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা যে যুক্তি দেখাচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!