• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি হতাশাজনক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০১৬, ০৩:১৯ পিএম
শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি হতাশাজনক

বিশেষ প্রতিনিধি

স্থবির নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম। বরং সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিহীন অবস্থা বিরাজ করছে। ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু অর্থবছরের এ সময়ে এসেও সেগুলো বাস্তবায়নে অগ্রগতি খুবই হতাশাজনক। এ পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়গুলোর কঠোর নজরদারির তাগিদ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলো মোট ১২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ওসব প্রকল্পের বিপরীতে মোট ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দের ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। কিন্তু ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলো ব্যয় করেছে মাত্র ৬৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আগামী জুন মাসের মধ্যে আরো ৩ হাজার ৩৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কি করণীয় সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানায়, নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় একটি প্রকল্প রয়েছে। তাতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৪শ’ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরে ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ব্যয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থ ব্যয়ের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় প্রকল্প রয়েছে একটি। বরাদ্দ ছিল ১ লাখ টাকা। কিন্তু অর্থব্যয়ের কোনো অগ্রগতি নেই। সেতু বিভাগের আওতায় নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ছিল ৮টি আর বরাদ্দ ছিল ৯০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় হয়েছে ২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং অর্থব্যয়ের অগ্রগতি হয়েছে ৩১ শতাংশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ৫টি এবং বরাদ্দ ছিল ৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু ওই প্রকল্পে এক টাকাও ব্যয় হয়নি। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ২৮টি এবং বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৭১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১৮৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থব্যয়ের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ৬০টি এবং বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তাতে অর্থব্যয়ের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প একটি এবং বরাদ্দ ২৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কিন্তু এক টাকাও ব্যয় হয়নি। তাছাড়া নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ১১টি এবং বরাদ্দ ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ২৮ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (থোকসহ) নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প রয়েছে ২টি এবং বরাদ্দ ২২২ কোটি ৩ লাখ টাকা। তবে ব্যয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং আর্থিক অগ্রগতি ১৭ শতাংশ। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ২টি। বরাদ্দ ১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ২৭ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩ শতাংশ। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প রয়েছে ৪টি এবং বরাদ্দ ছিল ১২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যার আর্থিক অগ্রগতি ১৬ শতাংশ। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প একটি এবং বরাদ্দ ১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কিন্তু এক টাকাও ব্যয় হয়নি এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প একটি এবং বরাদ্দ ২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যার আর্থিক অগ্রগতি ১৭ শতাংশ।

সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যেই চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) প্রণয়ন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে সেটি চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপির অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরএডিপি নির্ধারণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন আশা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তব পরিস্থিতি ও তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ পুনর্নিধারণ করবে। আর বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা থাকলে, বরাদ্দ ধরে না রেখে তা আরএডিপি প্রণয়নের সময়ে সমর্পণ বা পুনর্নিরধারণ করা সমীচীন হবে। ফলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমর্পণকৃত অর্থ ও অতিরিক্ত চাহিদা সমন্বয় করে বাস্তবভিত্তিক আরএডিপি প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

এদিকে নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, এগুলো যেহেতু নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু তারপরও যেহেতু এগুলোও জনগণের অর্থ সে বিবেচনায় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ওই প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করতে পারে। তাছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতারও একটি বিষয় থাকে। ওসব প্রকল্পের অগ্রগতি কেন কম হচ্ছে সে বিষয়গুলোও খুঁজে বের করা উচিত।

অন্যদিকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আজম বলেন, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থান, আঞ্চলিক দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য দূরীকরণ, খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা, মানব সম্পদ উন্নয়ন (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি), কৃষি-পানি সম্পদ ও পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, রপ্তানি প্রসার ও শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা বিষয় অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এডিপির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ৭ শতাংশ অর্জন করাসহ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত গড় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ অর্জনের জন্য এডিপির পরিপূর্ণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!