• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট ঠেকাতে আসছে এনইআইআর


সোনালী বিশেষ জুলাই ২৬, ২০১৭, ০২:৪২ পিএম
অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট ঠেকাতে আসছে এনইআইআর

ঢাকা : দেশে আমদানি করা মোট মোবাইল হ্যান্ডসেটের এক-চতুর্থাংশই আসছে অবৈধ পথে। এ কারণে বছরে ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে নিম্নমান ও নকল হ্যান্ডসেট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা।

আর এসব হ্যান্ডসেট আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সমস্যায় পড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধে জাতীয় পর্যায়ে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)।

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ফি বছর দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও আমদানি বাড়ছে। গত বছরই প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট ও বেতার যন্ত্রপাতি আমদানি করার জন্য ৮৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে রেডিও ইকুইপমেন্ট ইম্পোর্টার ও ভেন্ডর এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট দিয়েছে কমিশন।

এসব প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি মোবাইল ফোন আমদানির অনাপত্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও থামছে না অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি। দেশে বর্তমানে আমদানি করা হ্যান্ডসেটগুলোর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ হ্যান্ডসেটই অবৈধভাবে আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।

বিটিআরসির বলছে, অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির কারণে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ভোক্তা সাধারণ নকল ও নিুমানের হ্যান্ডসেট কেনার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব সেটের মাধ্যমে ক্রমশই বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

এ ছাড়া অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির কারণে ভুয়া-নকল আইএমইআই সম্পন্ন সেট ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করছে। এ কারণে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ।

রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। একইভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মোবাইল ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে আবেদনও জানানো হয়েছে।

যদিও অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ করতে বিটিআরসি, জাতীয় রাজস্ব কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক অভিযান পরিচালনা করে থাকে। কিন্ত এতেও অবৈধ হ্যান্ডসেটের অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে বিটিআরসি।

এনইআইআর স্থাপন করলে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে- এ বিষয়ে বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ করা যাবে। মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি রোধ, চুরি হওয়া হ্যান্ডসেট টেলিযোগাযোগের জন্য অপ্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত করা এবং তা সহজে পুনরুদ্ধার করা যাবে।

চুরি হওয়া সেট আলাদাভাবে ডেটাবেইজে সংরক্ষিত থাকবে, অপারেটরদের ইআইআরসমূহ ব্যবহার করে এক্সেস কণ্ট্রোল ব্যবস্থার মাধ্যমে চুরি হওয়া মোবাইল সেটের পুনর্ব্যবহার ঠেকানো যাবে। বৈধভাবে আমদানিকৃত হ্যান্ডসেটের এক বা একাধিক ইউনিক আইএমইআই নম্বর থাকবে।

বৈধভাবে আমদানি হওয়া সেটসমূহই কেবল মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারবে। এটি অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। জাতীয়ভাবে আইএমইআই ডেটাবেইজ সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি অনেকটাই হ্রাস পাবে।

কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রমে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ও মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণের মাধ্যমে অপরাধী চিহ্নিত করতে সহজ হবে এবং এর মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা হ্রাসসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আইএমইআই ক্লোনিং বন্ধ হবে।

এ জন্য এনইআইআর স্থাপনের আগে সব মোবাইল ফোন অপারেটরদের স্ব-স্ব নেটওয়ার্কে ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি (ইআইআর) স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া এনইআইআর কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতি প্রয়োগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করেই আমরা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন হলে অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ হবে। পাশাপাশি গ্রাহকরাও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচবে।

এ ছাড়া ভুয়া আইএমইআই ব্যবহার করে যে অনৈতিক ও অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হয় তা বন্ধ হবে এবং সেট হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করাও সম্ভব হবে। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় বিটিআরসি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!