• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিযানের প্রভাবে কিছুটা কমছে চালের দাম


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭, ০৮:৫১ পিএম
অভিযানের প্রভাবে কিছুটা কমছে চালের দাম

ঢাকা: সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পরে কয়েক মাস ধরে বাড়তে থাকা চালের দাম কিছুটা কমেছে, তবে একে চালকল ও গুদামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অব্যাহত অভিযানের সুফল হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

গত তিন দিনে পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তায় একশ টাকা কমেছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবৈধ মজুদদারদের ধরতে এই অভিযান অব্যাহত রাখলে চালের দাম আরও কমবে।

শুক্রবার(২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বাবুবাজার, কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে চালের দাম কেজিতে ২-১ টাকা কমার তথ্য মিললেও পাড়া-মহল্লার দোকানে আগের সেই চড়া দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা নাজিরশাইল মানভেদে ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকা, মিনিকেট ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকা, আটাশ ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা এবং গুটি ও স্বর্ণা ২৪৫০ থেকে ২৬০০ টাকা করে বিক্রি হয়। এই বাজারে খুচরায় দামও গত সপ্তাহের তুলনায় ১-২ টাকা করে কম রাখা হয়।

ঢাকায় চালের বৃহৎ পাইকারি আড়ত বাবুবাজারে এদিন প্রতি বস্তা নাজিরশাইল ৩ হাজার থেকে ৩৩০০ টাকা, মিনিকেট ২৯০০ থেকে ৩১০০ টাকা, আটাশ ২৪৫০ থেকে ২৬০০ টাকা এবং গুটি ও স্বর্ণা ২৩৫০ থেকে ২৪০০ টাকা করে বিক্রির কথা জানান ব্যবসায়ীরা।

তিন-চার দিন আগেও এসব চাল বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। টিসিবির তথ্যানুযায়ী, ২১ সেপ্টেম্বর সরু চাল প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৮ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫৫ থকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গত বছর এই সময়ে সরু চাল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং মোটা চাল ৩৩ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির ম্যানেজার আমির হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন মিলে সরকার অভিযান চালানো অব্যাহত রাখায় গত কয়েক দিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ টাকা কমেছে, অভিযান ঠিক থাকলে দাম আরও কমবে।’

এই বাজারের কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মালিক আবুল কাশেমও মনে করেন, ‘অভিযান চালিয়ে মিলারদের জরিমানা ও মামলা করায় চালের দাম কিছুটা কমেছে। অভিযান অব্যাহত থাকায় অতিরিক্ত মজুদকারীরা জেলা-জরিমানার ভয়ে কম দামে চাল ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে দাম কিছুটা কমেছে।’

তবে কোরবানির ঈদের পর কয়েকদিনে অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম বাড়ার পর এখন এটুকু কমা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেজিতে নয় টাকা বাড়িয়ে দুই টাকা কমল, এতে লাভ কী? মিলগুলোতে অভিযান না চালালে এটুকুও কমত না বরং বাড়ত।’

চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে চালকল মালিক, আমদানিকারক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের কয়েকটি দাবি সরকার মেনে নিলে মিল মালিকরা চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমানোর ঘোষণা দেন। বাবুবাজারের মেসার্স নিলয় রাইস এজেন্সির মালিকের ভাই মো. সোহান বলছেন, তিন দিনের ব্যবধানে চালের দাম বস্তা প্রতি ১০০ টাকা করে কমলেও তেমন ক্রেতা মিলছে না।

‘খবরে দেখাচ্ছে চালের দাম আরও কমবে, তাই ক্রেতা আসছে না। আগে দিনে যে চাল বিক্রি করতাম গত তিন দিন ধরে সেই চাল বেচছি।’

মিলাররা অতিরিক্ত চাল গুদামে আটকে রেখে দাম বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন সোহান। এখন যে কেউই মিলারদের টাকা দিলে চাল পাঠিয়ে দেয়, বড়-ছোট মানে না। বড় বড় মিলাররা বিভিন্ন জায়গায় তাদের লোক ফিট করে রেখেছে, তাদের বললেই ঘরে চাল দিয়ে যায়।

কারওয়ান বাজারে চালের একটি পাইকারি দোকানে ২৫ কেজির মিনিকেটের বস্তার খোঁজ করে তা না পেয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিলেন একটি ছাপাখানার ম্যানেজার নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, চালের যে দাম তাতে ৫০ কেজির বস্তা কিনে আর পোষায় না। ২৫ কেজির বস্তা তো পাওয়া যেত, কয়েকটি দোকান ঘুরেও পেলাম না। ছোট বস্তা না পেলে খুচরা বাজার থেকে কেনা ছাড়া উপায় থাকবে না। চালের বাজার ঠিক করতে চাল মিলগুলোতে অভিযান আরও জোরদার করতে সরকারকে অনুরোধ জানান নজরুল।

চালের দাম বস্তায় একশ টাকা পর্যন্ত কমার তথ্য জানিয়ে মিরপুরের-১ নম্বরের জননী রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার চাপ দেওয়ার পর এটা হয়েছে, কিন্তু সামনে কী হয় বলা যায় না।

মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ধানের দাম বেশি হলেও মিলারদের কাছে থাকা ধান কত টাকায় কেনা তা জানা প্রয়োজন। এসবে হাত দিলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, মিল মালিকরা ৩০৫০ টাকা দরে মিনিকেট চালের অর্ডার নিয়েও পরে তা ২৯৫০ টাকায় দিয়েছে। আগে ৩০৫০ টাকায় প্রতি বস্তার অর্ডার নিয়েও সময় মতো চাল পাঠাচ্ছিল না। এখন এরফান, দাদা, রশিদ সবাই ২৯৫০ টাকায় মিনিকেট চাল দিচ্ছে।

ভারত থেকে আমদানি হওয়া চালের দামও কমতে শুরু করেছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ভারতের বিআর আটাশ প্রতি বস্তা ২৭০০ টাকা এবং স্বর্ণা ২৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন তো ওএমএসের আতপ চাল কেউ কিনছে না। সরকার কেন যে বিদেশ থেকে আতপ চাল আনতে গেল আমার বুঝে আসে না। সিদ্ধ চাল আমদানি করে তা খোলা বাজারে ছাড়লে অটোমেটিক দাম কমত, কাউকে চাপ দেয়ার দরকার হত না।

কারওয়ান বাজারের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক মিলার ১২০০ টাকা করে ১০-১২ মণ ধান কিনে শত শত মণে ওই হিসাব সরকারকে দিয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছে। এখানে তদারকি না হলে চালের দাম কখনোই নিয়ন্ত্রণে আসবে না।

চাল আমদানি করে টিসিবির মাধ্যমে তা বাজারে ছেড়ে দিলে হুট করেই চালর বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী। মিরপুরের তোফাজ্জল রাইস এজেন্সির মালিক তোফাজ্জল হোসেনও পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা কমার তথ্য দেন।

পাইকারি বাজারে দাম কমার প্রভাব ঢাকার বড় বাজারগুলোতে প্ড়লেও পাড়া-মহল্লার দোকানে তা হয়নি। মহাখালী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, মিনিকেটের দাম ৭০ টাকায় পৌঁছেছিল, এখন তা ৬৩ টাকায় নেমেছে।

মেরুল বাড্ডার কয়েকটি খুচরা দোকানে কেজিপ্রতি মিনিকেট ৬৫ টাকা আর নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। রামপুরার একটি দোকান থেকে মিনিকেট চাল ৬৭ টাকা করে কেজি কিনেছেন তাবারুল হক নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী।

তিনি শুক্রবার বলেন, চালের দাম বাড়ার আগে ৫৬ টাকা কেজি দরে যে মিনিকেট কিনেছিলাম, তার দাম উঠে ৬৭ টাকা হয়েছিল। বাজারে চালের দাম কমার কথা শোনা গেলেও এখনও সেই দামেই কিনতে হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!