• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১, ২০১৮, ০৫:২৯ পিএম
অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে আ.লীগ

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগই এখন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ। নেতাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ, নিজস্ব বলয় সৃষ্টি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে হানাহানি, বেপরোয়া মনোভাব ক্ষমতাসীন দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দলটির অভ্যন্তরীণ ক্রমবর্ধমান এই কোন্দল এখন হাইকমান্ডের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলে আশঙ্কা খোদ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের। 

বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দলের বিরাজমান এ বিভেদ মিটিয়ে ফেলার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা তেমন কাজে আসেনি। শনিবার দলের সর্বোচ্চ ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে একাধিকবার। তাই যেভাবেই হোক দলে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে দলের হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে। আমরা আশাবাদী, নির্বাচনের আগেই সমস্যার সমাধান করা যাবে। তারপরও যারা দলীয় সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সব ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কিছু সমস্যা থাকে। আমাদের দলেও আছে। বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে আশানুরূপ ফল পাওয়া না গেলে পার্টি কাজ করত না। 

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, টানা দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকায় কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত চলমান এ দ্বন্দ্ব বিভিন্ন সময় দল ও সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। নিজেদের বলয় মজবুত করতে সংসদ সদস্যরা দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে হাইব্রিডদের নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের লোকদের দলে ভেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার জন্য পাল্টাপাল্টি কমিটি, পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন ও হামলা-মামলার ঘটনা তো আছেই।

কোন্দল নিরসনের জন্য গত এক বছরে কেন্দ্রীয়ভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেও নানা উদ্যোগ নেন। নাটোর, জয়পুরহাটসহ কোন্দলপূর্ণ জেলাগুলোর নেতাদের ঢাকায় ডেকে পাঠিয়ে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেন। ক্ষেত্রবিশেষে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও গণভবনে ডেকে নিয়েছেন কাউকে কাউকে। তাতেও কাজ হয়নি। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার ঘটনা তারই জ¦লন্ত উদাহরণ।

এসব কারণে ওবায়দুল কাদের বেশ কিছুদিন ধরেই এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলছেন। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্ত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের আওয়ামী লীগের সদস্য না করার আহ্বান জানাচ্ছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খারাপ ফলের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে দলের বিভক্তির বিষয়টি। 

শুক্রবার দলটির সম্পাদকম-লীর বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে যে ফল এসেছে, তা আমাদের অভ্যন্তরীণ কর্মকা-ের কারণেই হয়েছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আমাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণেই বিএনপি জিতেছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফসল বিএনপি ঘরে তুলেছে। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের শাস্তি না হলে অপরাধের প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল নেতারা। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোট বর্জনের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০টিরও বেশি আসনে লড়েছেন বিদ্রোহী নেতারা। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিজয়ীও হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ আর পৌরসভা নির্বাচনে বহু আসনে এমন বিদ্রোহ দেখা গেছে। বার বার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এ প্রবণতা থামেনি।

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি ছিল। বহিষ্কার করা হলেও জয়ী হয়ে আসার পরে ওইসব বিদ্রোহীকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়েছে। এতে বিদ্রোহীরা আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

শনিবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপন করার কথা সোনালী নিউজকে নিশ্চিত করেন শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হবিবুর রহমান সিরাজ। 

শুধু তৃণমূল নয়, পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে, যে কেন্দ্রীয় নেতাদের তো বটেই, এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেও দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। গত ২২ মার্চ নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওবায়দুল কাদেরের জনসভাকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর আরশিনগরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। এছাড়া গত ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তেজগাঁও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এক মন্ত্রীর সঙ্গে যুবলীগ নেতা রফিকের দ্বন্দ্ব এর নেপথ্য কারণ বলে জানা গেছে। 

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে দ্বন্দ্বে জড়ান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা। নগরের দুই নেতার বিরোধের জেরে মগবাজার মালিবাগ ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পূর্বমুহূর্তে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন তারা।

আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি কেন্দ্রে ডেকে এনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। তারা এলাকায় গিয়ে আবারো আগের মতো করেই চলার চেষ্টা করছেন। 

তিনি মনে করেন, প্রতিটি এলাকায় রাজনীতিতে একটা নিজস্ব গ্রুপ থাকে। তাই আমার মনে হয়, তৃণমূল থেকেই এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। এ প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও কাজে লাগানো উচিত। কেন্দ্রে না ডেকে সেখানে গিয়ে সবাইকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করলে তা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ওই কেন্দ্রীয় নেতা।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!